Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

চিঠি বিলি করে অফিসের কাজও সামলান অনিকেত 

ডাকঘর বলতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে এক নেই-রাজ্য। অথচ এর ভরসাতেই রয়েছেন জেলা-শহরের লক্ষ লক্ষ মানুষ। কী অসুখে ভুগছে জেলার ডাকঘরগুলি—সরেজমিনে দেখল আনন্দবাজার।কর্মীর অভাবে খুঁড়িয়ে-খুঁড়িয়ে চলছে সুন্দরবন এলাকার হাসনাবাদের ধরমবেড়িয়া শাখা ডাকঘরটি। অনিকেত গিরি এই ডাকঘরের একমাত্র কর্মী। 

ভাঙাচোরা: হাসনাবাদের সেই ডাকঘর। নিজস্ব চিত্র

ভাঙাচোরা: হাসনাবাদের সেই ডাকঘর। নিজস্ব চিত্র

নির্মল বসু
হাসনাবাদ শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৯ ০৩:১০
Share: Save:

যিনি চিঠি বিলি করছেন, তাঁকেই সামলাতে হচ্ছে ডাকঘরের বাকি কাজ। ফলে যখন তিনি চিঠি বিলি করতে যাচ্ছেন, তখন বন্ধ থাকছে দফতর। সে সময়ে গ্রাহক এসে পড়লে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া তাঁর উপায় নেই।

কর্মীর অভাবে এ ভাবেই খুঁড়িয়ে-খুঁড়িয়ে চলছে সুন্দরবন এলাকার হাসনাবাদের ধরমবেড়িয়া শাখা ডাকঘরটি। অনিকেত গিরি এই ডাকঘরের একমাত্র কর্মী।

হিঙ্গলগঞ্জ ডাকঘরের অধীনে যে বারোটি শাখা ডাকঘর রয়েছে, তার অন্যতম ধরমবেড়িয়া শাখা ডাকঘর। এর উপরে নির্ভরশীল বাইলানি, দুর্গাপুর ও ধরমবেড়িয়া গ্রামের বহু মানুষ। সাধারণত যে কোনও শাখা ডাকঘরে একজন শাখা পোস্টমাস্টার এবং দু’জন সহকারী থাকার কথা। কিন্তু এখানে একমাত্র ‘গ্রামীণ ডাকসেবক’ অনিকেতই কোনও রকমে বাঁচিয়ে রেখেছেন পরিষেবা। তাঁর সঙ্গে অবশ্য স্থানীয় একজন রয়েছেন, যিনি সামান্য কিছু কাজকর্ম করে দেন। তবে কাজের মূল দায়ভার বহন করতে হয় অনিকেতকেই। তাঁর কথায়, ‘‘কাজের চাপ আছে। তবে সব সামলানোর চেষ্টাও করি।’’

ছোট্ট একটি ঘরের দেওয়াল পাকা হলেও মেঝেয় ইট পাতা। মাথায় টিনের জীর্ণ চাল। বৃষ্টি নামলে জল পড়ে ঘরে। স্থানীয় বাসিন্দা সুভাষ দাস বলেন, ‘‘মাঝে-মধ্যেই ডাকঘরটি বন্ধ থাকে। কোনও কোনও দিন অল্প কিছুক্ষণের জন্য খোলে। ফলে অনেক সময়েই ডাকঘরে কাজ নিয়ে আসা সাধারণ মানুষকে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়াতে হয়।’’ ডাকঘরের এক গ্রাহক সুখেন দাস বলেন, ‘‘এখানে পিয়ন না থাকায় অনেক সময়েই রেজিস্ট্রি চিঠি বা স্পিড পোস্টে আসা চিঠি নিতে গ্রামীণ ডাকসেবকের বাড়িতেই আমাদের যেতে হয়।’’ স্থানীয় বাসিন্দা রাজীব মণ্ডল বলেন, ‘‘গ্রামীণ ডাকসেবক চিঠি বিলি করতে বেরিয়ে পড়লে সে সময়ে কেউ ডাকঘরে কোনও কাজ নিয়ে এলে অনেককে বাধ্য হয়ে ফিরে যেতে হয়। হিঙ্গলগঞ্জ সাব পোস্টঅফিস থেকে ডাক নিয়ে আসা-যাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কোনও কর্মী নেই।’’

স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, এ সবের উপরে রয়েছে ইন্টারনেট লিঙ্ক না থাকার সমস্যা। সব মিলিয়ে ডাক সংক্রান্ত কাজকর্ম করতে গিয়ে সাধারণ মানুষকে দীর্ঘদিন ধরেই ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে এ অঞ্চলে।

প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী গ্রামীণ ডাকসেবকদের বাড়িতেই ডাকঘরের ব্যবস্থা করার কথা। যেহেতু গ্রামীণ ডাকসেবক সাধারণত ওই গ্রামেরই বাসিন্দা হন। কিন্তু ধরমবেড়িয়া শাখা ডাকঘরের ডাকসেবক বহিরাগত। তাঁর এ গ্রামে কোনও নিজস্ব বাড়ি নেই। ফলে তাঁকে ঘর ভাড়া নিতে হয়েছে। সেই বাড়িতেই কোনও রকমে কাজ চালাচ্ছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Post Office
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE