মৃত: মেঘনা সরকার
বাড়িতে আগুন লেগে পুড়ে মারা গেল এক কিশোরী। তাকে বাঁচাতে গিয়ে জখম হয়েছেন বৃদ্ধ ঠাকুরদা-ঠাকুরমা। বাড়ি ছাড়াও পুড়েছে সংলগ্ন একটি দোকান।
বুধবার ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে বাগদার আমডোব এলাকায়। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত কিশোরীর নাম মেঘনা সরকার (১৭)। বৃদ্ধ তারক সরকার ও তাঁর স্ত্রী স্নেহাকে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে পাঠানো হয়েছে আরজিকরে। বনগাঁর এসডিপিও অনিল রায় বলেন, ‘‘কী ভাবে আগুন লাগল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
এ দিন তখন সবে ভোরের আলো ফুটছে। গ্রামবাসী তারক দাস পটল খেতে গিয়েছিলেন। ‘বাঁচাও বাঁচাও’ চিৎকারে তিনি ছুটে আসেন। দূরে মাঠ থেকে আগুনের শিখা ততক্ষণে আরও কারও কারও নজরে পড়েছে। তাঁরাও এগিয়ে আসেন।
তারকবাবু বলেন, ‘‘বাড়িটা দাউ দাউ করে জ্বলছিল। ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা চিৎকার করে বলছিলেন, আমাদের নাতনিকে বাঁচাও।’’ তারকের বাড়ির মোটরপাম্প চালিয়ে প্রাথমিক ভাবে আগুন নেভানোর চেষ্টা করা হয়। স্যালো মেশিন চালিয়ে জল দেওয়া হয়। গ্রামবাসী যে যা হাতের কাছে পেয়েছেন, এনে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। খবর পেয়ে বনগাঁ শহর থেকে দমকলের একটি ইঞ্জিন পৌঁছয়। কিন্তু ততক্ষণে বাড়ি-দোকান পুড়ে ছাই। গ্রামবাসীরা কেউ কেউ ঘরে ঢুকে মেঘনাকে উদ্ধার করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সুবিধা করতে পারেননি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আগুন লাগার পরে প্রবল শব্দে একটি গ্যাসের সিলিণ্ডার ঘরের মধ্যে ফাটে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাস্তার পাশে তারক সরকারের বাড়ি-সংলগ্ন দোকান। ইটের গাঁথনির উপরে টিনের ছাউনি। ওই দোকান থেকে বেআইনি ভাবে কেরোসিন তেল, রান্নার গ্যাস, পেট্রোল, ডিজেল বিক্রি করা হত বলে জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা। এ ছাড়া, মুদিখানার মালপত্র, কাঁসা-পিতলের বাসনও পাওয়া যেত।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তারকের ছেলে সুদেব সস্ত্রীক সল্টলেকে থাকেন। তিনি বিধাননগর কর্পোরেশনে কাজ করেন। মেয়ে মেঘনা ঠাকুরদা-ঠাকুরমার কাছে নিয়মিত যাতায়াত করত। এখানকার স্কুলে ভর্তি হওয়ারও চেষ্টা করছিল। এ দিন ভোরে তারকবাবু-স্নেহাদেবীরা শৌচালয়ে যাবেন বলেন ঘরের বাইরে বেরিয়ে ছিলেন। তখনই ঘরে আগুন ধরে যায়। বনগাঁ হাসপাতালে তারকবাবু বলেন, ‘‘নাতনি সম্ভবত নিজেই আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। আমাদের সব শেষ হয়ে গেল।’’ কিন্তু কেন মেয়েটি এমন কাণ্ড করতে যাবে, তার ব্যাখ্যা মেলেনি তারকবাবুর কাছে।
স্থানীয় বিধায়ক দুলাল বর বলেন, ‘‘পুলিশের কাছে আমাদের আবেদন, বেআইনি ভাবে কেরোসিন-ডিজেল-পেট্রল বিক্রি বন্ধ করতে কড়া পদক্ষেপ করা হোক।’’ পুলিশ জানিয়েছে, দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে। কী ভাবে আগুন লাগল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy