Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

হাতে-কলমে ওঝা-গুনিনদের তালিম ক্যানিংয়ে

জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সোমনাথ মুখোপাধ্যায় কর্মশালার উদ্বোধন করে বলেন, ‘‘আমরা চাই না সাপের কামড়ে কারও মৃত্যু হোক। আমরা বিভিন্ন ভাবে প্রচার করছি, সাপের কামড়ের সঠিক চিকিৎসা হয় সরকারি হাসপাতালে। কিন্তু এখনও বহু মানুষের ভুল ধারণা রয়েছে। সাপে কামড়ানোর পরে তাঁরা প্রথমে ওঝা-গুনিনের কাছে যান। তাই আমরা ওঝা-গুনিনদেরও প্রশিক্ষণ দিচ্ছি।’’

প্রশিক্ষণ: ক্যানিং হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র

প্রশিক্ষণ: ক্যানিং হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র

সামসুল হুদা
ক্যানিং শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৮ ০০:২৯
Share: Save:

সাপে ছোবল দিলে ওঝা-গুনিন নয়, হাসপাতালে আনুন রোগীকে— এই বার্তা বহু দিন ধরেই দিয়ে আসছে স্বাস্থ্য দফতর এবং নানা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তারপরেও গ্রামাঞ্চলে সাপে কাটা রোগীকে ওঝা-গুনিনের কাছে নিয়ে যাওয়ার প্রবণতা পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি। অনেক ক্ষেত্রে ‘বিষ ঝাড়ানো’র নামে ওঝার কাছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেলে রেখে রোগীকে যখন হাসপাতালে আনা হয়, চিকিৎসকদের আর বিশেষ কিছু করার থাকে না।

ওঝা-গুনিনের কাছে সাপে কাটা রোগীকে নিয়ে গেলে তাঁরা যেন হাসপাতালে পাঠানোর কথা বলে, এ নিয়ে সচেতন করা হচ্ছে ওঝা-গুনিনদের। সেই সঙ্গে সাপে ছোবল মারলে ঝাড়-ফুঁক-তাবিজ-কবজ না করে যেন সঠিক প্রাথমিক চিকিৎসাটুকু তাঁরা দিতে পারেন, তা নিয়েও সচেতন করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতাল ও যুক্তিবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থার যৌথ উদ্যোগে এক বিশেষ কর্মশালার আয়োজন করা হয় শুক্র ও শনিবার।

ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে অনুষ্ঠিত দু’দিনের ওই কর্মশালায় দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, মেদিনীপুর-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ২৫ জন ওঝা-গুনিন এসেছিলেন। তা ছাড়া, উত্তর ২৪ পরগনার একটি মিশনারি সংস্থা, যারা সাপের কামড়ে রোগীদের চিকিৎসা করে, তাদের দুই সিস্টারও কর্মশালায় যোগ দেন।

জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সোমনাথ মুখোপাধ্যায় কর্মশালার উদ্বোধন করে বলেন, ‘‘আমরা চাই না সাপের কামড়ে কারও মৃত্যু হোক। আমরা বিভিন্ন ভাবে প্রচার করছি, সাপের কামড়ের সঠিক চিকিৎসা হয় সরকারি হাসপাতালে। কিন্তু এখনও বহু মানুষের ভুল ধারণা রয়েছে। সাপে কামড়ানোর পরে তাঁরা প্রথমে ওঝা-গুনিনের কাছে যান। তাই আমরা ওঝা-গুনিনদেরও প্রশিক্ষণ দিচ্ছি।’’

কর্মশালায় জীবন্ত সাপ দেখিয়ে সাপের দাঁতের গঠন ও বিষহীন- বিষাক্ত সাপের কামড় সম্পর্কে বোঝানো হয়। সাপে কামড়ানো রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসার পদ্ধতিও বোঝানো হয়। যত দ্রুত সম্ভব কাছাকাছি সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার কথা ওঝা-গুনিনরা যাতে রোগীর পরিবারকে বলেন, সে কথাও বলা এ ছাড়াও বোঝানো হয়, সাপ প্রকৃতিতে জরুরি। তারা মানুষের শত্রু নয়। তাদের যেন মেরে ফেলা না হয়।

কর্মশালায় যোগ দেওয়া দুই ওঝা সুনীল গায়েন ও প্রশান্ত কয়াল বলেন, ‘‘আমরা অনেক কিছু জানতাম না। এই কর্মশালায় আসার পরে আমাদের হাতে-কলমে অনেক কিছু শেখানো হয়েছে। যা আমাদের কাজে লাগবে। আমরাও চেষ্টা করব সাপে কাটা রোগীকে হাসপাতালে পাঠানোর।’’

যুক্তিবাদী সংস্থার সম্পাদক বিজন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমরা দীর্ঘ দিন ধরে বলে আসছি, সাপের কামড়ে সঠিক চিকিৎসা হয় হাসপাতালেই। পাশাপাশি ওঝা-গুনিনদের সচেতন করতে এবং তাঁরা যাতে আমাদের সহযোগিতা করেন, সে জন্য এই কর্মশালার আয়োজন।’’ কর্মশালার পরে ওঝা-গুনিনদের হাতে শংসাপত্র তুলে দেওয়া হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Shaman Snake Bite Workshop Canning
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE