Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সাগরে মাঘী পূর্ণিমার ভিড় নিয়ে দুশ্চিন্তা নানা মহলে

এ বছর গঙ্গাসাগর মেলার সময়ে কচুবেড়িয়া ঘাটে ভিড়ের চাপে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছিল। গঙ্গাসাগর মেলার মতো অত বেশি লোকের ভিড় না হলেও স্থানীয় প্রশাসনের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, কপিল মুনির আশ্রম ঘিরে ১০ ফেব্রুয়ারি শুরু হতে চলা মাঘী পূর্ণিমার মেলা।

শান্তশ্রী মজুমদার
শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০০:৫৯
Share: Save:

এ বছর গঙ্গাসাগর মেলার সময়ে কচুবেড়িয়া ঘাটে ভিড়ের চাপে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছিল। গঙ্গাসাগর মেলার মতো অত বেশি লোকের ভিড় না হলেও স্থানীয় প্রশাসনের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, কপিল মুনির আশ্রম ঘিরে ১০ ফেব্রুয়ারি শুরু হতে চলা মাঘী পূর্ণিমার মেলা। কারণ, এই মেলার কম করে আড়াই-তিন লক্ষ মানুষ আসেন। সে তুলনায় সরকারি ব্যবস্থাপনা একেবারেই নেই।

সাগর মেলার দিকে নজর থাকে সারা দেশের। পুলিশ-প্রশাসনের হর্তাকর্তা, মন্ত্রী-সান্ত্রীরা থাকেন। এ বার তো হেলিকপ্টারও রাখা হয়েছিল মেলায়। কিন্তু সব মিলিয়েও এড়ানো যায়নি বিপত্তি। সেখানে মাঘী পূর্ণিমার সময়ে ভিড় সামলানো প্রশাসনের কাছে চিন্তার বিষয়। পুণ্যার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোও গড়ে তোলা হয়নি বলে অভিযোগ উঠছে নানা মহলে।

এই মেলায় আগে কখনও দুর্ঘটনা ঘটেনি, তা যেমন ঠিক, কিন্তু এত মানুষের সমাগমের জায়গায় প্রশাসনকে সতর্ক থাকতেই হয়, তা-ও মনে করছেন মেলার সঙ্গে যুক্ত মানুষজন। মাঘী পূর্ণিমার মেলার জন্য যদি কিছু ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়, তা খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক পিবি সালিম। তাঁর কথায়, ‘‘যেখানে প্রচুর লোকের সমাগম হবে, সেখানে সরকারকে তো কিছু একটা ব্যবস্থা করতেই হবে। দেখছি, কী করা যায়।’’

গঙ্গাসাগর মেলার এক মাসের মধ্যেই পড়ে মাঘী পূর্ণিমা। এ সময়ে গঙ্গাসাগরে সারা রাজ্য থেকে প্রচুর তীর্থযাত্রীরা আসেন কপিল মুনির আশ্রমে পূজো দিতে। তৃণমূল পরিচালিত গঙ্গাসাগর পঞ্চায়েতের প্রধান হরিপদ মণ্ডল বলেন, ‘‘এত মানুষের ভিড় সামলাতে আমরা আর পেরে উঠছি না। প্রচুর মানুষ খোলা আকাশের নীচে রাত কাটান। পর্যাপ্ত পানীয় জল, আলো, ডাক্তার, শৌচাগারেরও ব্যবস্থা করা সম্ভব হয় না। বিষয়টি বার বার বলা হয়েছে প্রশাসনের কাছে।’’

অভিযোগ আছে নিরাপত্তা নিয়েও। গঙ্গাসাগর উপকূল থানার মাত্র হাতে গোনা কয়েকজন পুলিশকর্মী এবং পঞ্চায়েত কর্মীরা মিলে প্রায় তিন লক্ষ লোকের ভিড় সামাল দেন। এত মানুষের মানুষের উপরে নজরদারি, নিয়ন্ত্রণ প্রায় থাকে না বলেই চলে। বিভিন্ন ধর্মসংগঠন, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার আশ্রম মিলিয়ে এক সঙ্গে খুব বেশি হলে ৫০ হাজার মানুষের থাকার ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়। বাকিদের রাত কাটে খোলা আকাশের নীচে। খোলা জায়গায় যাতে শৌচকর্ম না হয়, সে জন্য সাগর মেলায় সতর্ক ছিল প্রশাসন। কিন্তু এখানে সে সবের বালাই নেই বলে অভিযোগ।

গঙ্গাসাগর মেলার জন্য রাজ্য সরকারের তরফে এ বার খরচ ধরা হয়েছিল প্রায় ৬০ কোটি টাকা। কিন্তু মাঘী পূর্ণিমার মেলার জন্য সে রকম কোনও খাতে খরচের ব্যবস্থা থাকে না। স্থানীয় পঞ্চায়েত কিছু চাঁদা তোলে। কিছুটা বিধায়ক এবং সাংসদ তহবিলের টাকায় খিচুড়ি খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হয় মাত্র। জলের ব্যবস্থা যা থাকে, তা পর্যাপ্ত নয় বলে আগেও বহু বার অভিযোগ উঠেছে।

কেন এই মেলার জন্য কিছু তহবিল বরাদ্দ করা সম্ভব হচ্ছে না?

স্থানীয় বিধায়ক বঙ্কিম হাজরার কথায়, ‘‘এর আগে অনেকবারই পঞ্চায়েতমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। উনি আশ্বাস দিয়েছেন, ভেবে দেখার। আমরা সামনে বছর থেকে তীর্থযাত্রীদের একটি করে প্যান্ডেল করে দেবো থাকার জন্য। একই সঙ্গে এর জন্য যাতে কোনও বাজেট বরাদ্দ করা যায়, মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠিও লিখব।’’

লট ৮-এ কচুবেড়িয়া ভেসেল পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের কাছে সব চেয়ে দুশ্চিন্তার হয়ে দাঁড়াচ্ছে লোকবল ছাড়া বাড়তি মানুষকে পরিষেবা দেওয়ার বিষয়টি। কারণ, গঙ্গাসাগর মেলার সময়ে কলকাতার মিলেনিয়াম ঘাট থেকে প্রচুর বাড়তি ভেসেল পাঠানো হয়। এই মেলায় প্রতি বছর লোক বাড়তে থাকলেও কিন্তু সে রকম কোনও ব্যবস্থা নেই। মুড়িগঙ্গায় ভাটার সময়ে প্রায় ৬ ঘণ্টা ভেসেল পরিষেবা বন্ধ রাখতে হচ্ছে। ভিড় সামলাতে গিয়ে কোনও বিপত্তি না ঘটে, তা নিয়ে চিন্তা আছে নানা মহলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Administration Gangasagar Maghi Purnima
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE