Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

গুড় মুখে দিয়ে হতাশ

অনেক চেষ্টা-চরিত্র করে ক’দিন আগে এক ভাঁড় খেজুর গুড় জোগাড় করেছিলেন। কিন্তু মুখে দিয়ে বুঝলেন, চিনি-গোলা স্বাদ। মুষড়ে পড়ছিলেন বৃদ্ধ

জ্বাল: গুড়ি তৈরির প্রস্তুতি। ভাল স্বাদ-গন্ধ মিলবে তো? নিজস্ব চিত্র

জ্বাল: গুড়ি তৈরির প্রস্তুতি। ভাল স্বাদ-গন্ধ মিলবে তো? নিজস্ব চিত্র

সামসুল হুদা
ক্যানিং শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:৩৮
Share: Save:

গত কয়েক বছর ধরে শীতকাল এলে মনটা আনচান করে বৃদ্ধ হরিপদ মাইতির। ক্যানিং বাজার থেকে ভাঁড়-ভর্তি খেজুর গুড় বাড়িতে কিনে আনা ছিল দীর্ঘ দিনের অভ্যাস। বাপ-ঠাকুর্দা সকলেই ছিলেন খেজুর গুড়ের দিওয়ানা। সকালে-বিকেলে গুড়-মুড়ি, গুড়-রুটি, টাটকা খেজুর রসের কদর ছিল তাঁদের বাড়িতে। আর নলেন গুড়ে তৈরি পিঠে-পুলি কোন বাঙালির ঘরে না হয়।

কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে গুড়ের সেই স্বাদ-গন্ধ কোথায়! তাই শীত পড়লেই মন খারাপ হরিপদবাবুর। অনেক চেষ্টা-চরিত্র করে ক’দিন আগে এক ভাঁড় খেজুর গুড় জোগাড় করেছিলেন। কিন্তু মুখে দিয়ে বুঝলেন, চিনি-গোলা স্বাদ। মুষড়ে পড়ছিলেন বৃদ্ধ।

হরিপদবাবুর মতো গুড়-প্রেমী বাঙালি কম নেই এ বঙ্গে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরেই গুড়ের বাজারে গিয়ে বার বারই তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরছেন তাঁরা। এক মহিলার আক্ষেপ, ‘‘সামনে পৌষ সংক্রান্তি। ছেলে-মেয়েরা নলেন গুড়ের পাটিসাপ্টা, দুধ পুলি— এ সব খেতে চেয়েছে। বানাবো হয় তো। কিন্তু ভাল গুড় না হলে তো পরিশ্রমটাই বৃথা।’’

শীত পড়লেই পিঠে, পায়েস, নতুন গুড়ের সন্দেশ, রসগোল্লার জোগান দিতে চাই ভাল নলেন গুড়। কিন্তু ভাল গুড় দিন দিন কমছে, এমন অভিজ্ঞতা আম বাঙালির। আগে দেখা যেত, শীত পড়ার এক-দু’মাস আগে থেকে খেজুর গাছ কেটে রস সংগ্রহের প্রস্তুতি চলছে। শীতে খেজুর গাছে ভাঁড় বেঁধে রেখে রস সংগ্রহ করা হত। শীত যত জাঁকিয়ে পড়ত, উপচে পড়ত রসের হাঁড়ি। শিউলিরা ভোরবেলা গাছ থেকে সেই রস নামিয়ে জ্বাল দিয়ে গুড় বানাতেন।

এখন গ্রাম বাংলায় সেই সব দৃশ্য বড় একটা দেখা যায় না। কেন এই অবস্থা?

ক্যানিঙের নিকারিঘাটা এলাকার শিউলি আজগার মোল্লা বলেন, “এখন অধিকাংশ জায়গায় খেজুর গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। নতুন করে কেউ আর খেজুর গাছ লাগাতে চান না। তা ছাড়া, নতুন প্রজন্মের ছেলেরা কেউ আর এই পেশায় আসতে চায় না। জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় রস জ্বাল দিয়ে কেউ গুড় বানাতে চাইছে না। গুড় তৈরিতে আগের তুলনায় খরচও বেড়েছে। ফলে বাজারে চাহিদা অনুযায়ী খেজুর রস, গুড় পাওয়া যায় না।”

ক্যানিঙের দাঁড়িয়া, হাটপুকুরিয়া, নিকারিঘাটা-সহ আশেপাশের বেশ কিছু এলাকায় এখনও অনেকে এই পেশার সঙ্গে যুক্ত। তাঁদেরই একজন রইচ আলি শেখ বলেন, ‘‘সেই ছেলেবেলায় বাপ-ঠাকুর্দার কাছে গুড় বাবানো শিখেছিলাম। শীতের এই সময়টা ব্যবসা ভাল হয়। তবে আগের মতো তো আর খেজুর রসের জোগান নেই। বাজার ভেজাল গুড়ে ছেয়ে গিয়েছে।’’ রইচ জানান, ১২০-১৫০ টাকা কেজিতে তবু কিছু স্বাদ-গন্ধওয়ালা গুড় মেলে। আর ১০০ টাকা বা তার থেকে কম দামে যা বিক্রি হচ্ছে, রসিক বাঙালির তা মুখে না রোচাই স্বাভাবিক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Molasses গুড়
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE