বুধবারের ঝড়ে পড়েছে গাছ। স্বরূপনগরে। নিজস্ব চিত্র
ঘরবাড়ি, জমি জিরেত সবই গিয়েছিল আমপানে। সপ্তাহ কাটতে না কাটতে নতুন করে আঘাত হানল বুধবার রাতের কালবৈশাখী। গাছ ভাঙা, জমির ফসল নষ্ট তো আছেই, দুই ২৪ পরগনায় তিন জনের প্রাণও গিয়েছে। তার মধ্যে বাজে তড়িদাহত হয়ে এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে বৃহস্পতিবার সকালে। অনেকেই নতুন করে আশ্রয়হীন হয়েছেন। উড়েছে ত্রাণের ত্রিপল। জলে গিয়েছে নতুন করে চাষের খেত তৈরির চেষ্টাও।
হাড়োয়ার আদমপুর গ্রামের বাসিন্দা মেহের আলি মোল্লা (৫০) সাইকেলে করে স্থানীয় মল্লিকপুর থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। ঝড়ের সময়ে রাস্তার স্থানীয় ধারের একটি কারখানার পাঁচিল আচমকা হুড়মুড়িয়ে তাঁর উপরে ভেঙে পড়ে। ১৫ ফুট উঁচু পাঁচিলটির প্রায় ৫০০ ফুট অংশ ভেঙে পড়ে। চাপা পড়েন আরও ৬ জন। পাঁচজনকে কলকাতার আরজিকর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশ জানায়, মেহেরের মৃত্যু হয় ঘটনাস্থলেই।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল থেকেই ঝিরঝিরে বৃষ্টি হচ্ছেল। বিকালের দিকে তা বাড়ে। সন্ধ্যা নামতেই শুরু হয় ঝড়। পুরো বসিরহাট মহকুমাতেই ঝড়ের সঙ্গে প্রবল বর্ষণও হয়েছে। বসিরহাট, বাদুড়িয়া, হাসনাবাদের বেশ কিছু এলাকায় কয়েকটি গাছ ভেঙে পড়েছে। বনগাঁর বোয়ালদহ গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মান্নান মণ্ডল (৬৩) ঝড়ের সময় বাড়ি বাইরে থাকা গরু গোয়ালে আনতে বেরিয়েছিলেন। একটি গাছের ডাল ভেঙে তাঁর মাথায় পড়ে। কয়েক মিনিট সেখানেই পড়েছিলেন তিনি। পরে আত্মীয়স্বজন অচেতন আব্দুলকে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। বনগাঁর রাউতারা এলাকায় লুৎফর মণ্ডল নামে এক বৃদ্ধের বাড়ির চালে একটি গাছের মোটা ডাল ভেঙে পড়ে। গুরুতর জখম হন তিনি। বনগাঁ মহকুমায় ঝড়-বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়। সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে বাগদা এলাকায়। নতুন করে বেশ কিছু বাড়িঘর ভেঙে গিয়েছে। বনগাঁ ও বাগদায় টিনের চাল উড়েছে বেশি কয়েকটি বাড়ির।
বৃহস্পতিবার সকালে দক্ষিণ ২৪ পরগনার রায়দিঘির কাছারিপাড়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে শক্তিকৃষ্ণ সাউ (১৫) নামে এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আমপানে বাড়ির ছাদ ভেঙে গিয়েছিল তাদের। সেখানেই থাকছিল তারা। এ দিন সকালে তুমুল ঝড়বৃষ্টি হচ্ছিল। ঘরের বারান্দায় বসে ছিল শক্তি। বাজ পড়ে তড়িদাহত হয় সে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ক্যানিং, বাসন্তী, গোসাবা এলাকায় ঝড়ের সঙ্গে প্রবল বৃষ্টিও হয়েছে। আমপানের প্রভাব কাটতে না কাটতে এই ঝড়বৃষ্টি শুরু হওয়ায় সমস্যায় পড়েন বহু মানুষজন। আমপানে ঘর হারিয়ে এই সব এলাকায় অনেকের ঠিকানা নদীর বাঁধ বা উঁচু রাস্তায়। ছাউনি বলতে ত্রিপল বা পলিথিন। কেউ বা নিজের ভাঙা ঘরের মধ্যেই কোনও রকমে দিন গুজরান করতে শুরু করেছিলেন। বুধবারের ঝড়ে সেই আশ্রয় গিয়েছে তাঁদের। বৃহস্পতিবারও সকালেও ভারী বৃষ্টি হয়েছে। খেতের ফসল-আনাজ গিয়েছিল আমপানেই। যে সব এলাকায় নোনা জল ঢোকেনি, জমা জল বের করে ফসল বাঁচানোর লড়াই শুরু করেছিলেন চাষিরা। ডায়মন্ড হারবার ও কাকদ্বীপ মহকুমায় নতুন করে জলে ডুবল ফসল।
ভাঙড়ে অধিকাংশই আমপানে ভেঙে পড়া বাড়ি, উড়ে যাওয়া চাল মেরামত করতে পারেননি। কেউ কেউ প্লাস্টিকটুকু টাঙিয়েছিলেন। বুধবারের ঝড়ে সেই ছাউনিটুকুও উড়েছে। ঝড়-বৃষ্টি শুরু হতে ফের বহু এলাকা অন্ধকারে ডুবেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy