মাঝরাতে হঠাৎ ধড়ফড় করে উঠলেন মাঝবয়সী এক ব্যক্তি। চিৎকার করে বলতে লাগলেন, ‘‘বড় খোকা একবার আমার ঘরে আয় তো। হাতটা জ্বালা করছে। কিছু একটা কামড়িয়েছে।’’
পাশের ঘর থেকে বাবার ডাক শুনে ছুটে এসেছিলেন বড় ছেলে। ঘরের আলো জ্বেলে, মশারির মধ্যে খুঁজে দেখেন, পোকামাকড় আছে কিনা। দেখা যায়, মশারির ভিতরে এক কোণে দলা পাকিয়ে শুয়ে আছে একটি কালাচ সাপ। লাঠিপেটা করে মারা হয় তাকে।
এ দিকে, সাপের কামড়ে তখন ছটফট শুরু করেছেন কুলতলি থানার মেরিগঞ্জের নয়া পাড়ার বাসিন্দা বছর পঞ্চাশের রুহুল ইসলাম জমাদার। রাত ২টো নাগাদ রুহুলকে নিয়ে যাওয়া হয় এক ওঝার কাছে। ‘চিকিৎসা’র চেষ্টা চালিয়ে এক সময়ে ক্ষান্ত দেয় ওঝা। তারপরে রুহুলকে আনা হয় ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে।
বৃহস্পতিবার রাতে ৫ জন সাপে-কাটা রোগীকে ওই হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে ৪ জনকেই প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ওঝার কাছে। রুহুল ছাড়া বাকিরা চিকিৎসায় সাড়া দিয়ে প্রাণে বেঁচে যান।
রুহুলের বড় ছেলে সাকিরুল জমাদার বলেন, ‘‘রাতে বাবাকে সাপে কাটার পরে বুঝতে পারছিলাম না, কী করব। সকলেই বলল, ওঝার কাছে যেতে। জানতামই না, বিষধর সাপে কামড়ালে ওঝার কিছু করার নেই।’’
ক্যানিং হাসপাতালের বিশিষ্ট সর্পরোগ চিকিৎসক সমর রায় বলেন, ‘‘এটা অত্যন্ত দুঃখের যে এখনও মানুষ সাপের ছোবল খেয়ে প্রথমে ওঝার কাছে যান। সব শেষে তাঁরা হাসপাতালে আসেন। রুহুলকে যদি প্রথমে হাসপাতালে আনা যেত, তা হলে তাঁকে হয় তো বাঁচানো যেত। মানুষের মধ্যে এখনও সচেতনতার অভাব রয়েছে।’’
সাপের কামড়ে অসুস্থকে ওঝা-গুনিনের কাছে না নিয়ে গিয়ে হাসপাতালেই আনা হোক— এই বার্তা দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালাচ্ছে ক্যানিঙের যুক্তিবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থা। সংস্থার সম্পাদক বিজন ভট্টাচার্য সাপের কামড়ে মানুষের মৃত্যুর জন্য মানুষের কুসংস্কার ও অজ্ঞতাকেই দায়ী করেন। বিজনবাবুর কথায়, ‘‘আমরা নানা ভাবে প্রচার চালাচ্ছি এ নিয়ে। সমাজের সবস্তরের মানুষকে এ জন্য এগিয়ে আসতে হবে।’’ ওঝা-গুনিনেরা যাতে সাপে কাটা রোগী এলে তাঁদের হাসপাতালে পাঠান, সে নিয়েও সম্প্রতি ওঝা-গুনিনদের নিয়ে কর্মশালার আয়োজন করেন বিজনবাবুরা।
কিন্তু সচেতনতা তৈরি হবে কবে, প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy