Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Firebreak

আবার হামলার আতঙ্ক গ্রামে

ওই ঘটনার পরেই গভীর রাত থেকে গ্রামে গ্রামে বাইক বাহিনী গিয়ে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। মৈপিঠ কোস্টাল থানার সামনে দেখা হল ওই এলাকার বাসিন্দা অমিত হালদারের সঙ্গে।

জল ঢেলে নেভানো হচ্ছে আগুন। মৈপিঠে। ছবি: সুমন সাহা

জল ঢেলে নেভানো হচ্ছে আগুন। মৈপিঠে। ছবি: সুমন সাহা

দিলীপ নস্কর
শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২০ ০৩:২১
Share: Save:

ঘড়িতে বেলা ২টো। মৈপিঠ কোস্টালের বিনোদপুর গ্রামের অপর্ণা মণ্ডল আগুনে পুড়ে খাক হয়ে যাওয়া বাড়ি সামনে দাঁড়িয়ে ফুপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলেন। পুরুষ মানুষের কোনও দেখা নেই। দুষ্কৃতীদের ভয়ে কোনও ঝোপে ঝাড়ে আশ্রয় নিয়েছে তারা। কাছে গিয়ে কথা শুরু করতেই হাউমাউ করে কেঁদে ফেললেন বছর চল্লিশের অর্পণা। বললেন, “আমার সব শেষ। প্রায় শ’খানেক বাইক ঢুকেছিল। ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে, পেট্রল ঢেলে পুড়িয়ে দেয় ঘরদোর। ছেলেটা মাধ্যমিক দেবে। ওর বইখাতাও পুড়ে ছাই। কী ভাবে বেঁচে থাকব আমরা।” গ্রামের আরও অনেকের আক্ষেপ, “চোখের সামনে পুলিশের উপস্থিতিতে ঘরবাড়িতে পর পর ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দিল। বলে গেল, সন্ধ্যায় ফের আসব। পুলিশকে এত করে বললাম, স্যার আমাদের বাঁচান। এখানে কিছু পুলিশ পোস্টিং করুন। কিন্ত আমাদের কথায় কেউ পাত্তাই দিল না।” সকলেরই অভিযোগ, এসইউসি করেন বলেই বেছে বেছে হামলা চালিয়ছে শাসক দলের দুষ্কৃতীরা। ঘটনার সুত্রপাত শুক্রবার বিকেলে। ওই এলাকার উত্তর বৈকুষ্ঠপুর গ্রামের রাস্তা তৈরি নিয়ে তৃণমুল ও এসইউসি দলের মধ্যে বিবাদ বাধে। সেখান থেকে সংঘর্ষ হয়। তাতে দু’দলের প্রায় ১০ জন কর্মী জখম হয়। তাঁদের স্থানীয় গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ওই ঘটনার পরেই গভীর রাত থেকে গ্রামে গ্রামে বাইক বাহিনী গিয়ে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। মৈপিঠ কোস্টাল থানার সামনে দেখা হল ওই এলাকার বাসিন্দা অমিত হালদারের সঙ্গে। তাঁর আক্ষেপ, “আমার দিদি ও পরিবারের কয়েকজন বিনোদপুর গ্রামের পাড়ায় এক আত্মীয় বাড়িতে গিয়েছিলেন। সেখানে দুষ্কৃতীরা হামলা চালায়। দিদি-সহ ৩ জন রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন। প্রায় ৫ ঘণ্টা ধরে পুলিশের কাছে উদ্ধার করার কথা জানিয়েছি। কিন্ত কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। চিকিৎসক জানিয়েছেন, এ ভাবে রক্তক্ষরণ হলে মারা যেতে পারে।” এ দিন দুপুরে মৈপিঠ কোস্টালের বিনোদপুর, নগেনাবাদ, সাহেবেরঘেরি এলাকায় ঘুরে দেখা গেল, একের পর এক ঘরবাড়ি, রাস্তার পাশে দোকানে ভাঙচুর, আগুন লাগানোর চিহ্ন। সকাল সাড়ে ৭টা থেকে প্রায় কয়েক ঘণ্টা ধরে হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ। কয়েক ঘণ্টা পরেও দোকান, বাড়িতে আগুন জ্বলছিল। গ্রামের পর গ্রাম প্রায় সুনসান। অচেনা কাউকে দেখলেই পুরুষ, মহিলারা বাড়ি ঢুকে খিল এঁটে দিচ্ছেন। নগেনাবাদ গ্রামের প্রবীণ সুশীল হালদার মাঠে গরু আনতে গিয়েছিলেন। কিছু জিজ্ঞাসা করার আগেই বলেই দিলেন, “আমি কিছু দেখিনি। কারা হামলা চালিয়ে গেল, তা বলতে পারব না।”

স্থানীয় যুব তৃণমূল নেতা পিন্টু মণ্ডলের দাবি, ‘‘এসইউসি-র কর্মী সমর্থকেরা বড় ঝামেলা করতে পারে। পাশের ভুবনেশ্বরী পঞ্চায়েত এলাকা থেকে ওরা লোক জড়ো করছে।’’ যুব তৃণমূলের তরফে নিহত অশ্বিনী মান্নার ছেলে পঙ্কজ বলেন, ‘‘এসইউসির লোকজন ঘিরে ধরে আক্রমণ করেছিল। আমার বাবাকে পিটিয়ে-কুপিয়ে খুন করেছে। আবার হামলা চালাতে পারে।’’ যুব তৃণমূলের নবকুমার গিরিও ঘটনায় জখম হন। তাঁকে পাঠানো হয়েছে কলকাতার নার্সিংহোমে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Firebreak TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE