থানার সামনে বিক্ষোভ গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির।—নিজস্ব চিত্র।
বাড়ির সামনে পুলিশ পাহারা। অথচ বাড়ির বাসিন্দা মহিলা কোথায়, জানে না পুলিশ। বাগদার গণধর্ষিতা মহিলার সন্ধান না পেয়ে গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির সদস্যেরা বাগদা থানার ওসিকে ঘেরাও করলেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা বিক্ষোভ দেখানোর পর এলাকায় মিছিল করেন তাঁরা। ওসি-র উদ্দেশে ‘শেম শেম’ স্লোগান ওঠে।
সোমবার দুপুরে গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির প্রতিনিধিরা গিয়েছিলেন, বাগদার হরিহরপুর গ্রামে। গত মঙ্গলবার ওই গ্রামের এক মহিলার শিশুর গলায় রামদা ঠেকিয়ে তাঁকে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ হয় গ্রামেরই দুই দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে। ওই মহিলার সঙ্গে দেখা করতে এদিন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী রেখা গোস্বামী, উত্তর ২৪ পরগনা জেলার প্রাক্তন সভাধিপতি অপর্ণা গুপ্তা-সহ অনেকে গিয়েছিলেন। ছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী কান্তি বিশ্বাসও। কিন্তু তাঁরা ওই মহিলার দেখা পাননি। মহিলার পরিবার থেকে জানানো হয়, মুখ খোলায় নিষেধ আছে। কে নিষেধ করেছে, তা তাঁরা স্পষ্ট বলতে চাননি।
কান্তিবাবু পরে বাগদা থানা চত্বরে দাঁড়িয়ে অভিযোগ করেন, ‘‘ওই মহিলার নিরাপত্তার জন্য তাঁর বাড়িতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কিন্তু মহিলার কোনও খোঁজ আমরা পাইনি। পুলিশ ও তৃণমূলের লোকেরা ওই মহিলাকে বাড়ি থেকে সরিয়ে দিয়েছে।’’ কান্তিবাবুর দাবি, দুষ্কৃতীরা শাসকদলের আশ্রিত। এত দিন পরেও পুলিশ তাদের ধরেনি।
রেখাদেবীও এদিন অভিযোগ করেন, ‘‘তৃণমূলের লোকেরা মহিলাকে মামলা তুলে নিতে চাপ দিচ্ছে। মেয়েটি কোথায় আছে পুলিশ তার উত্তর দিতে পারেনি। অথচ বাড়িতে পুলিশ রয়েছে।’’
নির্যাতিতা মহিলার দেখা না পেয়ে গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির সদস্যরা বিকেল ৪টে ৪০ মিনিট নাগাদ থানায় এসে ওসি-র ঘরে ঢোকেন। দাবি তোলেন, ওই মহিলা কোথায় গেলেন, তা পুলিশকে জানাতে হবে। তাঁরা বলেন, ‘‘মেয়েটি আপনার হেফাজতেই আছে। আপনি বলুন মহিলা কোথায়।’’ ওসি সন্তোষজনক উত্তর না দেওয়ার মহিলারা টেবিল চাপড়াতে শুরু করেন। প্রশ্ন তোলেন, ‘‘মহিলা নিখোঁজ হয়ে গেলেন কী ভাবে? তা হলে মহিলার নিরাপত্তা কোথায়?’’ অভিযুক্ত দুষ্কৃতীরা কেন এখনও ধরা পড়লেন না, তা নিয়েও ওসিকে চেপে ধরেন তাঁরা।
প্রায় দেড় ঘণ্টা বাগদা থানার ওসি প্রসূন মিত্রকে তাঁর দফতরে ঘেরাও করে রেখে বিক্ষোভ দেখান মহিলারা। ঘর থেকে ওসি বেরোতে গেলে পথ আটকে দেন। সিভিক ভলান্টিয়াররা মোবাইলে ছবি তুলছে দেখে তাঁদের হুমকি দেন। গণ্ডগোলে ওসির ঘরের টেবিল উল্টে যায়। সন্ধ্যা ৬ টা ৪০ মিনিট নাগাদ থানা থেকে বেরিয়ে মিছিল করেন মহিলারা।
ওসি-র ঘরে এ দিন যাঁরা বিক্ষোভ দেখান তাঁদের মধ্যে ছিলেন ছিলেন আইনজীবী ভারতী মুৎসুদ্দি, সমিতির জেলা সভাপতি সোমা দাস, মহিলা নেত্রী স্বপ্না ঘোষ-সহ আট-নয় জন। ভারতীদেবী বলেন, ‘‘আমি এসেছিলাম ওই মহিলাকে আইনি সাহায্য করতে। কিন্তু পুলিশ তাকে সরিয়ে দিল।’’
অভিযুক্ত দুই দুষ্কৃতী রমজান মণ্ডল এবং রসি মণ্ডল পলাতক। পুলিশের অনুমান, তারা বাংলাদেশে পালিয়েছে। তৃণমূলের পক্ষ থেকে অবশ্য দুষ্কৃতীদের মদত দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। বাগদা ব্লকের তৃণমূলের সভাপতি তুলসী বিশ্বাস বলেন, ‘‘অভিযুক্ত দুষ্কৃতীদের সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই। পুলিশ তদন্ত করছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy