Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Sundarban

চর কেটে চলছে বালি পাচার, জানেই না পুলিশ

কেন হয় না অভিযোগ?স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই জানাচ্ছেন, ভয়ে তাঁরা মুখ বুজে থাকেন। 

স্তূপাকার: বালি তুলে রাখা হয়েছে পাড়ে। মিনাখঁার ঘুষিঘাটায় বিদ্যাধরী নদীর পাড়ে। নিজস্ব চিত্র।

স্তূপাকার: বালি তুলে রাখা হয়েছে পাড়ে। মিনাখঁার ঘুষিঘাটায় বিদ্যাধরী নদীর পাড়ে। নিজস্ব চিত্র।

নির্মল বসু 
বসিরহাট শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২০ ০২:২৯
Share: Save:

নদীর চর থেকে কেটে নেওয়া হচ্ছে বালি। শহর ও শহরতলিতে নিয়ে গিয়ে সেই বালি বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। পুকুর ভরাট, জমি উঁচু করার কাজে ব্যবহার হচ্ছে সুন্দরবনের বালি।

গোটা কাজটাই অবশ্য বেআইনি। নদীর চর কেটে সাদা বালি তোলার ফলে নদীবাঁধ আলগা হয়ে পড়ছে বলে অভিযোগ। প্রতি বছর বর্ষার সময়ে নদীর জল বাড়লে আলগা হয়ে পড়া বাঁধ ভেঙে নোনা জলে গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে। আবার বালি বিক্রি বাবদ সরকারের ঘরে কোনও রাজস্ব পৌঁছয় না বলেও অভিযোগ।

সন্দেশখালির বিধায়ক সুকুমার মাহাতো অবশ্য বলেন, ‘‘কোনও কোনও এলাকায় জরুরি প্রয়োজনে হয় তো স্থানীয় বাসিন্দারা নদী থেকে বালি তুলতে পারেন। তবে বালি মাফিয়া বা সিন্ডিকেটের কোনও খবর আমাদের কাছে নেই।’’

পুলিশও জানিয়েছে, অভিযোগ না থাকায় নদীর কোথায় বালি কাটা হয় তাদের জানা নেই। তবে এ বার যখন জানা গেল নদী থেকে বালি কাটা হচ্ছে, তখন খতিয়ে দেখে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কেন হয় না অভিযোগ?

স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই জানাচ্ছেন, ভয়ে তাঁরা মুখ বুজে থাকেন।

বর্ধমান, হুগলির মতো জেলায় বালি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য বহু চর্চিত। সুন্দরবনেও এক শ্রেণির লোকের হাতে প্রচুর টাকা এবং ক্ষমতা জমছে বালির বেআইনি কারবারের দৌলতে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বসিরহাট মহকুমার সন্দেশখালি, হিঙ্গলগঞ্জ, হাসনাবাদ, ন্যাজাট এবং মিনাখাঁর বিস্তীর্ণ এলাকায় বিদ্যাধরী, ছোট কলাগাছি, রায়মঙ্গল, বেতনি, ডাঁসা-সহ বিভিন্ন নদীর চর থেকে বালি তোলা হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, রাজনৈতিক ভাবে প্রভাবশালী কিছু লোকেরও মদত আছে এতে। স্থানীয় সূত্রের খবর, নৌকোয় করে ওই বালি মিনাখাঁর মালঞ্চ, ঘুষিঘাটা-সহ বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকে বালি গাড়িতে করে চলে যায় অন্যত্র। পূর্ণিমা-অমাবস্যায় ভাটার সময়ে নদীর জল অনেকটাই নীচে নেমে যায়। সে সময়ে নদীর বিভিন্ন জায়গার চর জেগে ওঠে। সেখান থেকেও বালি তোলা হয়। গ্রামবাসীরা জানালেন, চর থেকে বালি কেটে নিয়ে যাওয়ার পরে অমাবস্যা ও পূর্ণিমায় জলের গতিবেগ বেশি থাকায় বিভিন্ন এলাকার নদীবাঁধের মাটি জলের সঙ্গে এসে ফের ওই চরে জমা হয়। দু’একদিনের মধ্যে চর আবার আগের মতো অবস্থায় চলে আসে। একই জায়গা থেকে নৌকো মালিকেরা আবার বালি কেটে নিয়ে যায়। এ ভাবেই দিনের পর দিন নদীর চর থেকে বালি তোলায় নদীবাঁধ দুর্বল হয়ে পড়ে। ধীরে হলেও এ ভাবে নদীর গতিপথও বদলাতে শুরু করে বলে গ্রামের মানুষের অভিজ্ঞতা।

গ্রামবাসীদের অনেকের কথায়, ‘‘সুন্দরবন এলাকায় অন্তত শ’পাঁচেক নৌকো এ ভাবে বালি তোলার কাজ করে। এলাকার রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতাদের মোটা অঙ্কের মাসোহারা দিয়ে বেআইনি কারবার চলে। প্রশাসন সব জেনেও চুপ করে থাকে বলে অভিযোগ। সন্দেশখালির বাসিন্দা রাকেশ দাস, শফিকুল বৈদ্য, গণেশ সর্দাররা বলেন, ‘‘অবৈধ ভাবে বালি তোলার ফলে নদীবাঁধ দুর্বল হয়ে পড়ছে। বাঁধের পাশে থাকা চরে ধস নামতে দেখা যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে বাঁধ ভেঙে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sundarban Illegal mining
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE