Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Dengue

জ্বরে কাবু হয়ে মৃত্যু বনগাঁয়

শুক্রবার বিকেলে অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে আরজিকরে পাঠানোর পরামর্শ দেন। ১৮০০ টাকা দিয়ে অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করে শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ আরজিকরে নিয়ে যাওয়া হয় রিতাদেবীকে।

মৃত: রিতা কীর্তনিয়া

মৃত: রিতা কীর্তনিয়া

সীমান্ত মৈত্র
গোপালনগর শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৭ ০১:৫৮
Share: Save:

ফের জ্বরে আক্রান্তের মৃত্যুর ঘটনা ঘটল গোপালনগর থানার পাল্লায়।

শুক্রবার রাত ১০টা নাগাদ আরজিকর হাসপাতালে মারা গিয়েছেন রিতা কীর্ত্তনীয়া (৪৫)। বাড়ি পাল্লা বাজার এলাকায়। রিতাদেবীকে নিয়ে ওই পঞ্চায়েত এলাকায় জ্বরে আক্রান্তের মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ৪। এখনও বহু মানুষ জ্বরে আক্রান্ত।

একের পর এক মৃত্যুর ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে। ক্ষোভ রয়েছে মশা মারা নিয়ে। বাসিন্দাদের দাবি, পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হলেও পঞ্চায়েত বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গ্রামে গ্রামে এখনও নিয়মিত মশা মারার কাজ শুরু হয়নি।

দিন কয়েক আগে রিতাদেবীর শাশুড়ি ননীবালাদেবী জ্বরে আক্রান্ত হন। পাল্লা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে থেকে তাঁকে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। সেখান থেকে আরজিকরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরিবারের দাবি, ননীবালাদেবীর রক্তেও এনএস-১ পজিটিভ ধরা পড়েছে।

শাশুড়িকে নিয়ে ডাক্তার-বদ্যি-হাসপাতালে ছোটাছুটি করছিলেন রীতাদেবীই। ননীবালাদেবী এখন কলকাতায় আত্মীয় বাড়িতে থেকে চিকিৎসা করাচ্ছেন। তিনি এখনও সম্পূর্ণ সুস্থ নন। এরই মধ্যেই মৃত্যু হল বৌমার।

পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার রিতাদেবী জ্বরে পড়েন। স্থানীয় চিকিৎসককে দেখানোর পরে জ্বর ছেড়েও যায়। কিন্তু বৃহস্পতিবার ফের অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রক্ত পরীক্ষায় দেখা যায়, এনএস-১ পজিটিভ।

শুক্রবার বিকেলে অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে আরজিকরে পাঠানোর পরামর্শ দেন। ১৮০০ টাকা দিয়ে অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করে শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ আরজিকরে নিয়ে যাওয়া হয় রিতাদেবীকে।

তাঁর দেওর মঙ্গলবাবুর অভিযোগ, ‘‘হাসপাতালের জরুরি বিভাগে স্যালাইন দিয়ে ফেলে রাখা হয়েছিল বৌদিকে। আমাদের বলা হয়, স্যালাইন দেওয়ার পরে অবস্থা কেমন থাকে, তা দেখে ভর্তি নেওয়া হবে।’’ মঙ্গলবাবু জানান, রাত ৯টা নাগাদ শরীর আরও খারাপ হওয়ায় ভর্তি নেওয়া হয়। তার কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা যান বৌদি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতেই মৃত্যু, অভিযোগ পরিবারের। রিতাদেবীর মৃত্যুর শংসাপত্রে ‘হাইপো ভোলেমিক শক’ লেখা হয়েছে।

তাঁর স্বামী কর্মসূত্রে ওমান থাকেন। দুই ছেলে তনয় ও রাহুল। অভাবের সংসারে রিতাদেবী বিড়ি বাঁধতেন। গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, বাড়িতে প্রতিবেশীদের ভিড়। বাসিন্দাদের ক্ষোভ, মাঝে মধ্যে চুন-ব্লিচিং ছড়ানো হলেও জঙ্গল ও জমা জল সাফাইয়ের কাজ হচ্ছে না। মশা মারার তেলও দেওয়া হয়নি। তবে বিজিপি ও যুব তৃণমূলের পক্ষ থেকে ব্লিচিং-তেল স্প্রে করা হয়েছে বলে জানালেন পাড়া-পড়শিরা। কাছেই রসুলপুরে বাসিন্দারা নিজেরাই চুন-তেল-ব্লিচিং ছড়াচ্ছেন। অভিযোগ অস্বীকার করে স্থানীয় বাসিন্দা তথা বনগাঁ পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি প্রবীর দাস বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতের প্রতিটি এলাকায় চুন-ব্লিচিং-কেরোসিন-পোড়া মোবিল ছড়ানো হচ্ছে। জঙ্গল সাফাই করা হচ্ছে। শীঘ্রই মশা মারার কামানও কেনা হবে।’’

এই দাবি মানেননি গ্রামবাসীরা। তাঁদের আরও প্রশ্ন, কবে মশা মারার কামান কেনা হবে, ততক্ষণে আরও প্রাণহানি ঘটবে না তো?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dengue Bangaon ডেঙ্গি
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE