Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

কামালগাজিতে হাতেনাতে ধৃত অস্ত্র কারবারি

সাত সকালে সোনারপুর থানার কামালগাজি এলাকায় একটি মোটরসাইকেল এসে দাঁড়াল। এক যুবক এগিয়ে গিয়ে মোটরসাইকেল আরোহীর কাছ থেকে একটি চটের ব্যাগ হাতে নিতেই এগিয়ে এল অন্য এক দল যুবক।

নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৮ ০০:৫৬
Share: Save:

সাত সকালে সোনারপুর থানার কামালগাজি এলাকায় একটি মোটরসাইকেল এসে দাঁড়াল। এক যুবক এগিয়ে গিয়ে মোটরসাইকেল আরোহীর কাছ থেকে একটি চটের ব্যাগ হাতে নিতেই এগিয়ে এল অন্য এক দল যুবক। মোটরসাইকেল আরোহী ও চটের ব্যাগ হাতে যুবককে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলেন ওই যুবকদের কয়েক জন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা ভেবেছিলেন ছিনতাই হচ্ছে। এগিয়ে যাচ্ছিলেন তা আটকাতে। কিন্তু কয়েক মিনিটের মধ্যেই একটি ‘পুলিশ’ লেখা গাড়ি দেখে পিছিয়ে গেলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বোঝা গেল, যুবকদের ওই দল আসলে সাদা পোশাকের পুলিশ। এর পরেই মোটরসাইকেল আরোহী ও তার পরিচিত যুবককে তুলে নেওয়া হল পুলিশের গাড়িতে।

সোমবার সকালে এ ভাবেই রাজেশ শর্মা ওরফে বিহারি ও মহম্মদ মুস্তাকম নামে দুই অস্ত্র কারবারিকে কামালগাজি এলাকা থেকে গ্রেফতার করেন বারুইপুর জেলা পুলিশের স্পেশ্যাল অপারেশন গ্রুপের অফিসারেরা। রাজেশ হুগলি জেলার উত্তরপাড়ার বাসিন্দা আর মুস্তাকমের বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার হাড়োয়া থানা এলাকায়। পুলিশ সূত্রে খবর, রাজেশের ঝোলা থেকে ১০টি ওয়ান শটার ও তিনটি সেভেন এমএম পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে। রাজেশ মুঙ্গের অস্ত্র ব্যবসায়ীদের এজেন্ট। তার কাছ থেকে অস্ত্র কিনছিল মুস্তাকম।

গোয়েন্দাদের কথায়, সম্প্রতি উত্তর ২৪ পরগনায় কিছু সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে অস্ত্রের চাহিদা বেড়েছে। উত্তরপাড়ার বাসিন্দা রাজেশের কাছে অস্ত্রের বরাত দেওয়া হয়েছিল। সাত হাজার টাকায় ওয়ান শটার আর ২২ হাজার টাকায় সেভেন এমএম পিস্তল। পুলিশের চোখ এড়াতেই নিজের এলাকা ছেড়ে রাজেশের কাছ থেকে অস্ত্র কিনতে কামালগাজি গিয়েছিল মুস্তাকম।

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকায় অস্ত্র সরবরাহ করে রাজেশ। নিজের মোটরসাইকেলে একটি ঝোলা ব্যাগে অস্ত্র ভরে নিয়ে ঘুরে ঘুরে কাজ চালায় সে। এ দিন ব্যাগটির তল্লাশি করে দেখা যায়, চটের বস্তার ভিতরে আটার প্লাস্টিকে অস্ত্র ভরে নিয়ে এসেছিল সে। আপাত দৃষ্টিতে যাতে আটা রয়েছে বলেই মনে হয়।

কিন্তু কী ভাবে অস্ত্র পাচারের খবর পৌঁছল পুলিশের কাছে?

এক তদন্তকারী অফিসারের কথায়, গত এপ্রিল মাসে প্রদীপ মণ্ডল নামে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তী থানার বাসিন্দা এক অস্ত্র পাচারকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। প্রদীপকে জেরা করেই রাজেশের হদিস পাওয়া গিয়েছিল। এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, ‘‘আমরা দিনের পর দিন ওত পেতে বসেছিলাম। রাজেশের উত্তরপাড়ার বাড়ির উপরে নজরদারি চালানো হচ্ছিল। সঙ্গে রাজেশের ঘনিষ্ঠ এক জনের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখা হচ্ছিল।’’ রবিবার রাতে রাজেশের ঘনিষ্ঠ ওই ব্যক্তিই পুলিশকে জানান, কামালগাজি এলাকায় অস্ত্র হাত বদল করা হবে। সেই মতো এ দিন ভোর থেকেই ওই এলাকা ঘিরে ফেলে পুলিশ।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, মুস্তাকম অস্ত্র কারবারের স্থানীয় এজেন্ট। রাজেশের কাছ থেকে অস্ত্র কিনে নিয়ে গিয়ে নিজের এলাকায় বিক্রি করত সে। এক-একটি ওয়ান শটারের দাম প্রায় ৯০০০ টাকা আর সেভেন এমএম বিক্রি করত ৩০,০০০ টাকায়। তদন্তকারীদের দাবি, এর আগে দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবা, জীবনতলা, ক্যানিং থানা এলাকায় অনেক অস্ত্র বিক্রি করেছে বলে জেরায় কবুল করেছে রাজেশ। এক তদন্তকারী বলেন, ‘‘উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বহু রাজনৈতিক নেতাই রাজেশের মূল ক্রেতা বলে জেরায় করে উঠে এসেছে।’’ তদন্তকারীদের দাবি, জেরায় বহু প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার নাম বলেছে রাজেশ। ওই সব নেতাদের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

অস্ত্র Arms
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE