প্রতীকী চিত্র।
ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বাঘের হামলায় মৃতের ময়নাতদন্তের রিপোর্টই আটকে। মেলেনি ক্ষতিপূরণও। বছরখানেক ধরে এই নিয়ে প্রশাসনের দরজায়-দরজায় মাথা ঠুকছেন মৃতের ছেলে।
মাছ ধরতে গিয়ে গত বছর ২ ডিসেম্বর সুন্দরবনের বেনিফেলি চাপড়া দ্বীপের কাছে বাঘের হামলায় মৃত্যু হয় দক্ষিণ ২৪ পরগনার মৈপীঠ কোস্টাল থানার মধ্য গুড়গুড়িয়ার বাসিন্দা কানাই ঘোষের। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, বাঘের হামলায় মৃত্যু হলে পরিবারকে সরকার ৩ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়। কিন্তু বছর পেরিয়ে যেতে চললেও ক্ষতিপূরণ পায়নি কানাইবাবুর পরিবার। তাঁর ছেলে আকাশের অভিযোগ, ‘‘বার বার প্রশাসনের দ্বারস্থ হওয়ার পরেও ক্ষতিপূরণ পাইনি। আমি বেশি লেখাপড়া জানি না। আমাকে বলা হয়েছে, বাবার দেহের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট নেই। তাই ক্ষতিপূরণের টাকা কবে দেওয়া হবে জানা নেই পুলিশেরও।’’
সম্প্রতি আকাশ যোগাযোগ করেন মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর-এর সঙ্গে। সংগঠনের নেতা আলতাফ আহমেদ জানান, আকাশ তথ্য জানার অধিকার আইনে প্রশাসনের থেকে কয়েকটি তথ্য জানতে চান। তাতেই জানা যায়, ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে।
পুলিশের দাবি, ক্ষতিপূরণ দেওয়া নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। মৈপীঠ কোস্টাল থানার এক আধিকারিক জানান, ময়নাতদন্ত করেছিলেন যে চিকিৎসক, তাঁর মৃত্যু হওয়ায় সমস্যা তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কানাইবাবুর পরিবার কবে ক্ষতিপূরণ পাবে, তার উত্তর পুলিশের কাছে নেই। ওই আধিকারিক বলেন, ‘‘পুলিশ ক্ষতিপূরণ দেয় না। দেয় সরকার। তাই আমরা কিছু বলতে পারব না। সরকার বা জেলা প্রশাসন যদি মনে করে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ছাড়াই ক্ষতিপূরণ দেওয়া যাবে, তা হলে ওই পরিবার টাকা পাবে।’’
তথ্য জানার অধিকার আইনে আবেদন করার পরে সম্প্রতি বেশ কিছু নথি হাতে পেয়েছেন আকাশ। তাঁর মধ্যে একটি হল বারুইপুর পুলিশ জেলার এসপিইও বা তথ্য আধিকারিককে (ডিএসপি-ডিইবি) পাঠানো মৈপীঠ কোস্টাল থানার ওসি জয়ন্ত পোদ্দারের একটি চিঠি। ওই চিঠি থেকে জানা গিয়েছে, কানাইবাবুর দেহের ময়নাতদন্ত হয় ৪ ডিসেম্বর মোমিনপুর পুলিশ মর্গে। ময়নাতদন্ত করেছিলেন এক অটোপসি সার্জেন। একাধিক বার ময়নাতদন্তের রিপোর্ট চেয়ে জেলা স্বাস্থ্য দফতরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। জয়ন্ত লিখেছেন, গত ফেব্রুয়ারিতে ময়নাতদন্তকারী ওই চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে।
কিন্তু কানাইয়ের দেহের ময়নাতদন্ত হলেও রিপোর্ট তৈরি হয়েছে কিনা, তা জানা নেই পুলিশ। এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘সাধারণত শব ব্যবচ্ছেদের পরে নোটবুকে তথ্য লিখে রাখেন ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক। সেই তথ্যের ভিত্তিতে তিনি রিপোর্ট তৈরি করেন। এ ক্ষেত্রে তিনি রিপোর্ট আদৌ তিনি তৈরি করেছিলেন কিনা, তা আমাদের জানা নেই।’’
রিপোর্ট তৈরির আগেই তাঁর মৃত্যু হয়ে থাকলে জটিলতা আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন পুলিশ কর্তাদের একাংশ।
বারুইপুরের মহকুমা শাসক দেবারতি সরকার বলেন, ‘‘ময়নাতদন্তের রিপোর্ট নিয়ে জটিলতা থাকলে সিওএমওইচ-এর সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।’’ দক্ষিণ ২৪ পরগনার সিএমওএইচ সোমনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিষয়টি জানা নেই। পরিবারের তরফে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে, কোথায় জটিলতা তা খতিয়ে দেখে সুরাহা করার চেষ্টা করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy