Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

কাটমানি ফেরত দিলেন পঞ্চায়েত-সুপারভাইজার

টাকা ফেরতের দাবি নিয়ে গ্রামের অন্য বাসিন্দারাও তাঁকে চাপ দিতে থাকেন। গোলমালের আশঙ্কায় গ্রামে পৌঁছয় পুলিশ। উত্তেজিত জনতার হাত থেকে উদ্ধার করা হয় কৃষ্ণপদকে। তিনি বলেন, ‘‘দুলালের টাকা তুলে নিয়ে অন্যায় করেছি। তাঁর সব টাকা ফেরতও দিলাম।’’ 

উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কৃষ্ণপদকে। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কৃষ্ণপদকে। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

নিজস্ব প্রতিবেদন
বাগদা শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৯ ০২:১৭
Share: Save:

একশো দিনের প্রকল্পের টাকা গ্রামবাসীদের আ্যকাউন্ট থেকে তুলে নেওয়া হত বলে অভিযোগ। সেই টাকার বেশিরভাগ অংশ কেটে রেখে সামান্য কিছু টাকা ধরিয়ে দেওয়া হত প্রাপকের হাতে। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট পরীক্ষা করে বিষয়টি জানতে পেরে গ্রামবাসীরা পঞ্চায়েতের সুপারভাইজারকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান। চাপে পড়ে ঘটনা স্বীকার করে সকলের সামনে একজনের টাকা ফেরতও দিলেন ওই সুপারভাইজার। শনিবার ঘটনাটি ঘটেছে বাগদার রনঘাট পঞ্চায়েতের উত্তর কুলবেড়িয়া গ্রামে।

কৃষ্ণপদ বিশ্বাস নামে ওই সুপারভাইজারের বাড়ি পাশের ঝিকরা গ্রামে। উত্তর কুলবেড়িয়া গ্রামের বাসিন্দাদের অভিযোগ, তাঁদের জবকার্ড নিয়ে কৃষ্ণপদ অন্য গ্রামে মাটি কাটার কাজে ব্যবহার করতেন। পরে জবকার্ডে সই করিয়ে মাথা-পিছু আড়াই-তিন হাজার টাকা করে তুলে নিতেন। কেউ টাকা দাবি করলে তাঁর হাতে ২০০-৩০০ টাকা ধরিয়ে দেওয়া হত। বাকি টাকা কৃষ্ণপদই নিজের পকেটে ঢোকাতেন বলে অভিযোগ।

সম্প্রতি উত্তর কুলবেড়িয়া গ্রামের দুলাল বৈরাগী নামে এক ব্যক্তির জবকার্ড নিয়ে কাজ করান তিনি। দুলালের অ্যাকাউন্টে টাকাও ঢোকে। শুক্রবার ব্যাঙ্কের শাখায় গিয়ে খোঁজ নিয়ে তিনি জানতে পারেন, অ্যাকাউন্ট থেকে ১০ হাজার টাকা উধাও। অভিযোগ, তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে ওই সুপারভাইজারই টাকা তুলে নিয়েছেন।

দুলাল বলেন, ‘‘আমাকে দিয়ে সই করিয়ে টাকা তুলে নেওয়া হত। আগেও অনেক টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি ব্যাঙ্কে গিয়ে খোঁজ নিয়ে বিষয়টা জানতে পারলাম।’’

গ্রামেরই আর এক বাসিন্দা দুলালি বিশ্বাস বলেন, ‘‘মাটি না কাটালে জবকার্ড বাতিল হয়ে যাবে, এ কথা বলে কৃষ্ণ আমাকে জবকার্ড দিতে রাজি করিয়েছিলেন। তারপর অনেকবার ২-৩ হাজার করে টাকা তুলে ওঁকে দিয়েছি। আমাকে ২০০-৩০০ করে টাকা দিয়ে বাকি টাকা উনি নিজেই নিতেন।’’ শনিবার সকালে কৃষ্ণপদকে গ্রামে ডেকে দুলালের টাকার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন বাসিন্দারা। প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে গ্রামবাসীরা তাঁকে ঘেরাও করলে চাপের মুখে পড়েন দুলাল। টাকা নেওয়ার কথা এক সময়ে স্বীকার করেন বলে দাবি গ্রামের মানুষের। গ্রামবাসীদের সামনেই দুলালের ৮ হাজার টাকা ফিরিয়ে দেন কৃষ্ণপদ।

টাকা ফেরতের দাবি নিয়ে গ্রামের অন্য বাসিন্দারাও তাঁকে চাপ দিতে থাকেন। গোলমালের আশঙ্কায় গ্রামে পৌঁছয় পুলিশ। উত্তেজিত জনতার হাত থেকে উদ্ধার করা হয় কৃষ্ণপদকে। তিনি বলেন, ‘‘দুলালের টাকা তুলে নিয়ে অন্যায় করেছি। তাঁর সব টাকা ফেরতও দিলাম।’’

রনঘাট পঞ্চায়েতের প্রধান গণেশ রায় বলেন, ‘‘এক গ্রামের জবকার্ডে অন্য গ্রামে কাজ করানোটা অনৈতিক। টাকা আত্মসাৎ করার বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেব।’’

যাঁরা কাটমানি নেবেন তাঁদের দায়িত্ব দল নেবে না, নিজেরাই নিজেদের দায়িত্ব নিতে হবে— শনিবার ক্যানিং বাসস্ট্যান্ডে ২১ জুলাইয়েরে সমর্থনে এক সভায় এসে এমনই মন্তব্য করলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল সভাপতি শুভাশিস চক্রবর্তী। সভায় উপস্থিত ছিলেন জয়নগর লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ প্রতিমা মণ্ডল, ক্যানিং পশ্চিমের বিধায়ক শ্যামল মণ্ডল, ক্যানিং ১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি শৈবাল লাহিড়ি-সহ অনেকে।

এ দিনই আবার ভাঙড়ের তৃণমূল নেতা কাইজার আহমেদের এক অনুগামীর বিরুদ্ধে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ভাঙড় ১ ব্লকের প্রাণগঞ্জ পঞ্চায়েতের সদস্য ইয়াসমিন সুলতানার স্বামী মুন্সি আব্দুর রহান সরকারি প্রকল্পে ঘরের টাকার ভাগ নিয়েছেন বলে অভিযোগ।

স্থানীয় সাঁইহাটির বাসিন্দা কাজি সাত্তার নামে এক ডাব ব্যবসায়ীর দাবি, বাংলা আবাস যোজনা প্রকল্পে প্রথম কিস্তির ৪৫ হাজার টাকা তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে। তাঁর অভিযোগ, মুন্সি তাঁর কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা কাটমানি নেন। সাত্তার শনিবার ভাঙড় থানায় লিখিত অভিযোগ করতে গেলে পুলিশ তাঁকে ফিরিয়ে দেয় বলেও তাঁর অভিযোগ। বিষয়টি সাত্তার তৃণমূল ভবনেও জানিয়েছেন বলে তাঁর দাবি।

এ বিষয়ে মুন্সির সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ‘‘কোনও কথা বলব না’’ বলে ফোন কেটে দেন।কাইজার বলেন, ‘‘কেউ আমার অনুগামী নয়। তা ছাড়া, অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।’’ পাশাপাশি তাঁর সংযোজন, অভিযোগ প্রমাণ হলে দলগত ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cut Money Bagda Panchayat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE