Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

বন্‌ধে শিল্পাঞ্চল স্বাভাবিক, কাজ হল পেট্রাপোলেও

বিরোধীদের ডাকা বন্‌ধে তেমন সাড়া মিলল না ব্যারাকপুর-কল্যাণী শিল্পাঞ্চলে। এমনিতেই বৃহস্পতিবার শিল্পাঞ্চলের অধিকাংশ শহরে ব্যবসা বন্ধ থাকে। ফলে দোকানপাট, বাজার বন্ধ ছিল সকাল থেকেই। বন্‌ধের সমর্থনে কোথাও কোথাও বিরোধীদের পথে নামতেও দেখা গিয়েছে।

দেগঙ্গায় তখন চলছে অবরোধ। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।

দেগঙ্গায় তখন চলছে অবরোধ। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৫ ০৩:১০
Share: Save:

বিরোধীদের ডাকা বন্‌ধে তেমন সাড়া মিলল না ব্যারাকপুর-কল্যাণী শিল্পাঞ্চলে। এমনিতেই বৃহস্পতিবার শিল্পাঞ্চলের অধিকাংশ শহরে ব্যবসা বন্ধ থাকে। ফলে দোকানপাট, বাজার বন্ধ ছিল সকাল থেকেই। বন্‌ধের সমর্থনে কোথাও কোথাও বিরোধীদের পথে নামতেও দেখা গিয়েছে।

বিটি রোডের পানিহাটি ও কামারহাটিতে মিনিট কুড়ি ধরে অবরোধও হয়েছিল। পানিহাটির মোল্লারহাটে বন্‌ধ সমর্থকদের সঙ্গে তৃণমূলের কর্মীদের হাতহাতি বাধে সকালেই। অবরোধকারী সিপিএম কর্মীদের মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ। অন্যদিকে, সোদপুর ফ্লাইওভারের কাছে বন্‌ধের সমর্থনে বিরোধীরা মিছিল বের করলে তৃণমূলও পাল্টা মিছিল বের করে। বিশাল পুলিশবাহিনী মোতায়েন করা হয় ওই এলাকায়।

এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে কৃষ্ণনগর থেকে কলকাতা ফেরার কথা ছিল। সে কারণে ওই রাস্তা যাতে অবরোধকারীরা আটকাতে না পারে তার জন্য কড়া নজরদারি ছিল। এমনিতেই সকাল থেকে ওই পথে লরি বা ট্রেলারের মতো ভারি যান চলাচল বন্ধ ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে মুখ্যমন্ত্রী আকাশ পথে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন। এ দিন ব্যারাকপুর ও কল্যাণী শিল্পাঞ্চলের কল-কারখানা ও সব অফিস খোলা ছিল। হাজিরার সংখ্যা সামান্য কম হলেও রাস্তাঘাটে এ দিন লোকজন বিশেষ নজরে পড়েনি। শিয়ালদহ মেন লাইনে ফাঁকা ট্রেন চলতে দেখা গিয়েছে বন্‌ধের সকাল থেকে। কলকাতা রাষ্ট্রীয় পরিবহণ ও দক্ষিণবঙ্গ পরিবহণ সংস্থার ব্যারাকপুর ও বেলঘরিয়া ডিপো থেকে সকাল ৮টার মধ্যে অন্য দিনের তুলনায় বেশি বাস রাস্তায় নামানো হয় বলে জানানো হয়েছে। তবে লোকসানেই কেটেছে সারা দিন। ছোট ছোট রুটগুলিতে অটো চলেছে দিনভর।

ব্যারাকপুর ও কল্যাণী শিল্পাঞ্চলে এই ধর্মঘট যে বিশেষ প্রভাব ফেলবে না, তা জানতেন বিরোধীরাও। তাই বন্‌ধ ঘোষণা হলেও সকালে দু-এক জায়গায় অবরোধ, পিকেটিং ছাড়া পথে দেখা যায়নি বিরোধীদের। এমনিতেই গঙ্গা পারের শিল্পাঞ্চলে পুরভোটে ১২-০ তে এগিয়ে আছে শাসকদল। জয়ের মাত্রা এমন যে বিরোধীরা বহু ওয়ার্ডে একশোটি ভোটও পায়নি। স্বভাবতই শাসকদল এ দিনও বন্‌ধ নিয়ে কটাক্ষ করেছে। তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পর্যবেক্ষক নির্মল ঘোষ বলেন, ‘‘মানুষের রায়ে হেরে যাওয়ার পরেও কর্মনাশা বন্‌ধ ডেকে বিরোধীরা কী প্রমাণ করতে চাইলেন জানি না। কিন্তু মানুষ এতে সাড়া দিল না।’’

অন্য দিকে, দেশের বৃহত্তম বন্দর পেট্রাপোলেও বন্‌ধের প্রভাব তেমন পড়েনি। বাংলাদেশের সঙ্গে পণ্য রফতানির কাজ স্বাভাবিক ছিল বলে জানান পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী। তবে পণ্য আমদানি কিছুটা কম হয়েছে। ঢাকা-কলকাতার মধ্যে সরকারি বাস যাতায়াত করেছে। তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের শ্রমিকেরা কাজ করেছেন।

বনগাঁয় অটো চলাচল করতেও দেখা গিয়েছে। চলেছে টোটো। বেশিরভাগ দোকানপাট অবশ্য বন্ধ ছিল। সরকারি অফিসগুলিতে হাজিরা ছিল স্বাভাবিক। বনগাঁ ব্লক কৃষি দফতরে এ দিন স্বাভাবিক হাজিরা ছিল। ঝড় বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা এ দিনই কৃষি অফিসে আর্থিক ক্ষতিপূরণের আবেদনপত্র জমা দিতে এসেছিলেন। ব্লক কৃষি আধিকারিক শঙ্করকুমার বিশ্বাস বলেন, ‘‘অফিসের অনেকেই রাতে থেকে গিয়েছিলেন। আমি নিজে অবশ্য নিউ ব্যারাকপুর থেকে সকালে ট্রেনে অফিসে এসেছি। অসুবিধা হয়নি। কাজকর্ম স্বাভাবিক হয়েছে।’’

স্কুল-কলেজগুলিতে শিক্ষক-শিক্ষিকারা উপস্থিত থাকলেও পড়ুয়ারা না আসায় ক্লাস হয়নি। হাবরার জয়গাছি এলাকার যশোহর রোডে বিজেপি থেকে সকালে সড়ক অবরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু তৃণমূলের লোকেরা সেখানে তাঁদের উপরে চড়াও হয়। মারধর করে সেখান থেকে তাঁদের তাড়িয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ। পুলিশ সেখানে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে বলে জানিয়েছেন বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব হালদার। অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল।

এ দিন বসিরহাট মহকুমা জুড়ে আর পাঁচটা বন্ধের মত কিছু স্কুল, ব্যাঙ্ক এবং সরকারি ও বেসরকারি দফতর খোলা রাখা হলেও বেশিরভাগ ছিল বন্ধ। রাস্তায় কোনও বাস চলতে দেখা যায়নি। অধিকাংশ দোকানপাট ছিল বন্ধ। তবে ‘মিশন নির্মল বাংলা’ অনুষ্ঠানের জন্য ব্লক দফতর এবং পঞ্চায়েত ভবন খোলা ছিল। বসিরহাটের বিভিন্ন এলাকায় এই অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে পোস্টার, ব্যানার হাতে লম্বা শোভাযাত্রা বের হতে দেখা যায়। ওই শোভাযাত্রায় স্থানীয় বিডিও-সহ অন্যান্য আধিকারিক এবং গ্রামবাসী, আশাকর্মী, পঞ্চায়েত প্রধান, স্থানীয় বিধায়কেরা পদযাত্রায় পা মেলান।

লেন্সবন্দি ধর্মঘট

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE