Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

লড়াইয়ের আগেই কেল্লাফতে তৃণমূলের

রাজ্যের নানা প্রান্তে চিত্রটা খানিকটা এ রকমই। বহু আসনে প্রার্থীই দিতে পারেনি বিরোধীরা। হুমকি, সন্ত্রাসকেই তারা কারণ হিসাবে সরব হচ্ছেন।

উল্লাস: ভোটের আগেই জয়। হাসনাবাদে। নিজস্ব চিত্র

উল্লাস: ভোটের আগেই জয়। হাসনাবাদে। নিজস্ব চিত্র

শুভাশিস ঘটক
শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৮ ০২:৩০
Share: Save:

মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শুরু থেকেই শাসক দল যে ভাবে দিকে দিকে ‘চালিয়ে ব্যাট করছিল’, তাতে এমন ইঙ্গিতটা সাত সকালেই আঁচ করতে পারছিলেন সকলে। বিরোধী পক্ষ তো বরাবরই অভিযোগ করছিল, তাদের মেরেধরে, ভয় দেখিয়ে মনোয়নই জমা করতে দেওয়া হচ্ছে না।

সোমবারও দেখা গেল, বিরোধীদের আশঙ্কাটা একেবারেই অমূলক নয়। বীরভূমে তো একটি বাদে জেলা পরিষদের সব ক’টি আসনেই জয়ী হয়েছে তৃণমূল। বিরোধীরা মনোনয়ন জমা দিতে গেলে রাস্তায় ‘উন্নয়ন দাঁড়িয়ে থাকবে’ বলে অনুব্রত মণ্ডল যে মোলায়েম বাণী ছড়িয়েছিলেন, তা আক্ষরিক অর্থেই সোনা ফলিয়েছে।

রাজ্যের নানা প্রান্তে চিত্রটা খানিকটা এ রকমই। বহু আসনে প্রার্থীই দিতে পারেনি বিরোধীরা। হুমকি, সন্ত্রাসকেই তারা কারণ হিসাবে সরব হচ্ছেন। অন্য দিকে, ঘাসফুল শিবিরের একটাই যুক্তি, প্রার্থী হওয়ার মতো লোক জোটাতে না পেরে কুৎসা রটাচ্ছে বিরোধীরা।

দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় ভোটের ফলও চোখ কপালে তোলার মতো। জেলা প্রশাসন সূত্রে প্রাথমিক ভাবে যে পরিসংখ্যান মিলেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বহু আসনে জয়ী হয়েছে তৃণমূল।

জেলা পরিষদের ৮১টির মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২৩টি আসনেই জয়ী হয়েছে তৃণমূল। ২০১৩ সালে এই সংখ্যা ছিল মাত্র ২টি। পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েতে স্তরেও প্রায় এক তৃতীয়াংশ আসনে তৃণমূল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছে বলেই জানাচ্ছে জেলা প্রশাসন। জেলার ২৯টি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে ইতিমধ্যে ১০টি দখল করেছে তারা। ২০১৩ সালে মাত্র একটি মাত্র পঞ্চায়েত সমিতি এ ভাবে তাদের দখলে এসেছিল। ২৯টি পঞ্চায়েত সমিতির ৯১৩টি আসনের মধ্যে ইতিমধ্যে ২৫০টি আসন তৃণমূলের দখলে। ২০১৩ সালে মাত্র ৪৪টি আসন বিনা লড়াইয়ে দখল করেছিল তারা। জেলায় ৩১০টি পঞ্চায়েতের মধ্যে সোমবার রাত পর্যন্ত ১১০টি পঞ্চায়েত তৃণমূল দখল করেছে বলে জেলা নির্বাচন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। ৩১০টি পঞ্চায়েতের ৪৮৮২টি আসনের মধ্যে সোমবার পর্যন্ত ১৫০০ আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছে তৃণমূল।

বিনা যুদ্ধে

• দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদ: মোট আসন: ৮১। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী তৃণমূল- ২৩

• দক্ষিণ ২৪ পরগনায় পঞ্চায়েত সমিতি ২৯টি। ১০টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী তৃণমূল

• দক্ষিণ ২৪ পরগনায় গ্রাম পঞ্চায়েত ৩১০। ১১০টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী তৃণমূল

সূত্র: জেলা প্রশাসন (রাত পর্যন্ত কেউ অনলাইনে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন কিনা জানা যায়নি)

দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাঁচটি মহকুমায় প্রায় ৯০ শতাংশ ব্লক অফিসে বিরোধীদের মনোনয়ন জমা দিতে শাসকদলের কর্মীরা বাধা দিয়েছে বলে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন বিরোধীরা। নির্বাচন কমিশন তরফে শনি ও সোমবার দু’দিন মহকুমাশাসকের অফিসে বিরোধীদের মনোনয়ন দাখিল করার জন্য নির্দেশ জারি করা হয়েছিল। পুলিশ-প্রশাসনকেও সর্তক করা হয়েছিল। কিন্তু সোমবারও শাসক দলের তাণ্ডব অব্যাহত। পুলিশ ও প্রশাসন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে বলে অভিযোগ দিকে দিকে।

দক্ষিণ ২৪ পরগনা বিজেপির পশ্চিম মণ্ডলের সভাপতি অভিজিৎ দাস বলেন, ‘‘নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সাহস নেই শাসক দলের। পুলিশ-প্রশাসন ও শাসক দলের একতার জয় হয়েছে। সাধারণ মানুষ ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত হলেন।’’ সিপিএম নেতা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বুথে ভোট লুঠ করেছিল তৃণমূল। এ বার আরও এক কদম এগিয়ে গিয়ে মনোনয়নই লুঠ করে নিল। এখন বাকি নির্বাচনটা প্রহসন হয়ে দাঁড়াল।’’ তৃণমূলের এক জেলা নেতার কথায়, ‘‘দিকে দিকে উন্নয়নের জোয়ার এসেছে। মানুষ বুঝতে পারছেন, সেটা কারা করেছে। এই পরিস্থিতিতে লোকজনকে ভুল বুঝিয়ে বিরোধীরা ভোটের লড়াইয়ে নামাতেই পারেনি। মাঝখান থেকে আমাদের বদনাম করছে।’’ মাঝে আরও কয়েকটা দিন হাতে আছে মনোনয়ন প্রত্যাহারের আগে। এ ক’দিনে যে কী ‘খেলা খেলবে’ শাসক শিবির, তা ভেবে ইতিমধ্যেই আতঙ্কে সিঁটিয়ে যাচ্ছেন বিরোধীদের অনেকেই।

(নির্বাচন কমিশন মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময়সীমা আজ, মঙ্গলবার পর্যন্ত বাড়ানোর আগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এই প্রতিবেদন)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE