Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ভোটযুদ্ধে মুখোমুখি লড়ছেন শাশুড়ি-বৌমা

বৌমা অপর্ণা পাল গ্রাম পঞ্চায়েতের বিদায়ী প্রধান। এ বারও তৃণমূলের টিকিটে ভোটে দাঁড়িয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে অন্য কোনও রাজনৈতিক দল প্রার্থী দেয়নি। ফাঁকা মাঠে গোল করা এক রকম নিশ্চিত ছিল। কিন্তু বাদ সেধেছেন শাশুড়ি মিনতি। বৌমার বিরুদ্ধে নির্দল প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছেন ভোট যুদ্ধে।

অপর্ণা পাল এবং মিনতি পাল

অপর্ণা পাল এবং মিনতি পাল

সীমান্ত মৈত্র
গাইঘাটা শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৮ ০৩:০৩
Share: Save:

হয় মা, না হয় বৌমা— ভোট দেবেন কাকে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে গাইঘাটার সুটিয়া পঞ্চায়েতের ভারাডাঙা গ্রামে।

বৌমা অপর্ণা পাল গ্রাম পঞ্চায়েতের বিদায়ী প্রধান। এ বারও তৃণমূলের টিকিটে ভোটে দাঁড়িয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে অন্য কোনও রাজনৈতিক দল প্রার্থী দেয়নি। ফাঁকা মাঠে গোল করা এক রকম নিশ্চিত ছিল। কিন্তু বাদ সেধেছেন শাশুড়ি মিনতি। বৌমার বিরুদ্ধে নির্দল প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছেন ভোট যুদ্ধে।

অর্পণা থাকেন গোবরডাঙায়। ভোটের আগে কয়েক মাস হল পাঁচপোতায় বাড়ি ভা়ড়া নিয়েছেন। বছর আঠারো আগে তাঁর বিয়ে হয়েছিল মিনতি পালের বড় ছেলে সুকুমারের সঙ্গে। শাশুড়ি ভোটে দাঁড়িয়েছেন বলেই কি শ্বশুরের ভিটেয় থাকছেন না?

প্রশ্ন শুনে ঝাঁঝিয়ে ওঠেন অপর্ণা। বলেন, ‘‘ও বাড়িতে উঠব কী করে, শ্বশুরবাড়ির সম্পত্তি তো কিছুই পাইনি আমরা।’’ এই বিষয়টাই উঠে আসছে অপর্ণার ভোটের প্রচারে। তাঁর অভিযোগ, দেওর দীপঙ্কর কলকাঠি নাড়ার ফলেই তাঁদের বঞ্চিত হতে হয়েছে ন্যায্য পাওনা থেকে। দীপঙ্করের উস্কানিতেই নাকি ভোটে দাঁড়িয়েছেন মিনতি। অপর্ণা তাই প্রচারে বলছেন, ‘‘যে দাদাকে ফাঁকি দিতে পারে, সে তো জনগণকে ফাঁকি দেবেই।’’ তবে পাশাপাশি এ-ও বলছেন, ‘‘শাশুড়ি গুরুজন মানুষ। ওঁর বিরুদ্ধে আমার কিছু বলার নেই।’’

পারিবারিক বিবাদ ভোটের ময়দানে আসুক, চাইছেন না দীপঙ্কর। তাঁর কথায়, ‘‘দাদা-বৌদি চাইলে এখনই এসে সম্পত্তির ভাগ বুঝে নিতে পারেন।’’ দীপঙ্করের দাবি, গত পাঁচ বছরে এলাকায় উন্নয়ন শিকেয় উঠেছে। সেই ব্যর্থতা ঢাকতেই বৌদি পারিবারিক সমস্যার কথা বলছেন। মিনতিও ছোট ছেলের পাশে দাঁড়িয়েছেন। বললেন, ‘‘ছেলে-বৌকে কেউ সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতে পারে? ওরা ভুল বুঝছে।’’ মায়ের হয়ে কথা এগোন দীপঙ্কর। বলেন, ‘‘আমরা তো আসলে তৃণমূলই করি। দলের বিরুদ্ধে কোনও ক্ষোভ নেই। আমাদের লড়াই প্রার্থীর বিরুদ্ধে।’’

পাল পরিবারে রাজনীতির আবহাওয়া নতুন নয়। মিনতির স্বামী প্রয়াত বিমল পাল দু’বার পঞ্চায়েতে সদস্য ছিলেন। মিনতি নিজেও আগে কংগ্রেসের টিকিটে ভোটে দাঁড়িয়ে জয়ী হয়েছিলেন। এ বার পারিবারিক কাজিয়া যে জায়গায় পৌঁছেছে, তাকে কাজে লাগাতে তৎপর হয়েছে সিপিএম। মিনতিকে তাঁরা সমর্থন করছেন বলে জানালেন সিপিএম নেতা রামপ্রসাদ দাস।

দলের মধ্যে এমন আড়াআড়ি ভাল চোখে দেখছেন না তৃণমূল নেতৃত্ব। মিনতিকে প্রার্থী হতে বারণ করেছিলেন তাঁরা। গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি ধ্যানেশনারায়ণ গুহ বলেন, ‘‘প্রার্থিপদ তুলে নিতে বিশেষ করে ওঁর ছোট ছেলের আপত্তি ছিল।’’

মিনতি লড়ছেন ‘আম’ চিহ্নে। সব দেখেশুনে পাড়ার লোকে বলছে, ‘‘শেষে দেখব আমে-দুধে মিশে গিয়েছে। আমাদের না আঁটি হয়ে গড়াগড়ি খেতে হয়!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE