Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বুজরুকির পর্দা ফাঁস করল যুক্তিবাদী মঞ্চ

মানুষ জন একে একে যুবকের কাছে সমস্যার কথা জানতে শুরু করলেন। যুবকটিও নিদান দিতে থাকলেন। কাউকে তাবিজ-কবজ, কাউকে ফুল বেলপাতা। প্রণামী বাক্স ভরে উঠল ক্রমে।

কুসংস্কার-কাটাতে: বোঝানো হচ্ছে গ্রামবাসীকে। মঙ্গলবার। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

কুসংস্কার-কাটাতে: বোঝানো হচ্ছে গ্রামবাসীকে। মঙ্গলবার। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

সীমান্ত মৈত্র
বনগাঁ শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:২৭
Share: Save:

বাড়ির মধ্যে কালী মন্দির। পুজো করছেন বছর সাতাশের এক যুবক। পরনে গেরুয়া পোশাক। মন্দিরের বাইরে উদ্দাম নৃত্য করছেন কয়েক জন মহিলা।

হঠাৎ ওই যুবকের শরীর কাঁপতে শুরু করল। মাথা ঝাঁকিয়ে আসনে বসে পড়লেন যুবক। ততক্ষণে বাইরে মানুষের ঢল নেমেছে। যুবকটি আসনে বসে পড়তেই সকলে বুঝলেন, এ বার ‘ভর’ হয়েছে। স্বয়ং মা কালী তাঁর শরীরে প্রবেশ করেছেন, এমনই বিশ্বাস সকলের।

মানুষ জন একে একে যুবকের কাছে সমস্যার কথা জানতে শুরু করলেন। যুবকটিও নিদান দিতে থাকলেন। কাউকে তাবিজ-কবজ, কাউকে ফুল বেলপাতা। প্রণামী বাক্স ভরে উঠল ক্রমে। তাবিজ-কবজের জন্য অবশ্য ৫০-১০০ টাকায় কাজ হয় না। মোটা টাকা দিতে হয়।

বনগাঁ চাঁদা জামতলা এলাকায় রবিন দাস নামে ওই যুবক আট বছর ধরে এ ভাবেই বুজরুকি চালিয়ে আসছিলেন। সম্প্রতি বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক প্রদীপ সরকারের কাছে স্থানীয় যুবক অয়ন চট্টোপাধ্যায়ের মাধ্যমে সেই খবর পৌঁছয়। ৩ সেপ্টেম্বর ওই যুবকের বাড়িতে যান প্রদীপ। যুবককে বলেন, ‘‘আমার সন্তান হচ্ছে না, আপনি কিছু নিদান দিন।’’ যুবক প্রদীপকে অভয় দিয়ে জানান, চিন্তার কিছু নেই। প্রদীপের ‘সন্তানযোগ’ রয়েছে। শীঘ্রই তিনি সন্তান লাভ করবেন। ফুল, বেলপাতা দেওয়া হয়। সঙ্গে তাবিজ নিতে হবে বলা হয়।

ফিরে আসেন প্রদীপ। তিনি ইতিমধ্যেই দুই ছেলেমেয়ের বাবা। মঙ্গলবার মঞ্চের আরও দুই সদস্য সুধাঙ্কর ঘোষ ও সজল ভদ্রকে নিয়ে রবিনের বাড়ি পৌঁছন প্রদীপ। সঙ্গে সাংবাদিকেরাও ছিলেন। মানুষ জন সমস্যা নিয়ে এসেছিলেন যথারীতি। রবিন মন্দিরে পুজো করলেও এ দিন আর দেবী তাঁর উপরে ‘ভর’ করেননি। কারণ হিসাবে ওই যুবক জানান, মোবাইলে তাঁর ছবি তোলা হয়েছে। অনেকে আমিষ খেয়ে এসেছেন।

প্রদীপরা জানান, এখানে যা চলছে, তা নেহাতই বুজরুকি। ঈশ্বরের নাম নিয়ে মানুষকে ঠকানো হচ্ছে। প্রাথমিক ভাবে প্রদীপদের উপরে কিছু মানুষ ক্ষুব্ধ হন। কটূক্তি শুনতে হয়। পরে অবশ্য প্রদীপরা মানুষ জনকে বোঝাতে পেরেছেন। ততক্ষণে রবিন নিজের ঘরে ঢুকে ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে কাঁদতে শুরু করেন।

মঞ্চের সদস্যেরা, রবিনের সাগরেদদের বলেন, এই কারবার বন্ধ করুন। পুজোআচ্চা করুন। কিন্তু মানুষকে এ ভাবে প্রতারণা করবেন না। রবিনের সঙ্গীরা সে কথা মেনে নিয়েছেন বলে দাবি প্রদীপের। বিষয়টি প্রদীপরা মহকুমাশাসককে জানিয়েছেন। আগামী সপ্তাহে এসে ফের খোঁজখবর করবেন প্রদীপরা।

প্রদীপ বলেন, ‘‘ওই যুবক নিজেকে ভগবান ভাবেন। এটা এক ধরনের মানসিক ব্যাধি। এ ভাবে মানুষকে ভুল বুঝিয়ে টাকা রোজগার করা প্রতারণা।’’

মঞ্চ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অতীতে রবিন ছোটখাট পুজোআচ্চা করত। পরে নিজের বাড়িতে মন্দির করে। ভক্তদের দাবি, প্রতি মঙ্গলবার ও শনিবার দুপুরে পুজো করতে করতে ‘ভর’ হত বছর সাতাশের যুবকের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hoax Bigyan Mancha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE