প্রতীকী ছবি।
ভদ্রলোক ক’দিন আগেই সিপিএম ছেড়ে যোগ দিয়েছিলেন বিজেপিতে। তারপরেই মিছিলের আয়োজন। নেতৃত্ব স্থানীয় মানুষ। মনে মনে প্রস্ততি নিয়েছিলেন, ঠিকঠাক স্লোগান যেন বেরোয় মুখ থেকে। কিন্তু যতই হোমওয়ার্ক করে আসুন না কেন, সেই মুখ ফসকে একবার বেরিয়ে পড়েছিল ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ।’ তিনি নিজে তো বটেই, আশপাশের কর্মীরাও অস্বস্তিতে।
তৃণমূলের এক মাঝারি মাপের নেতা বিজেপিতে যোগ দিয়ে ক’দিনের মধ্যেই সভায় বক্তৃতা করতে ওঠেন। পুরনো দলের নিন্দা করতে অসুবিধা হয়নি। কিন্তু সভা ছিল কেন্দ্রের কৃষিআইন সংক্রান্ত। নয়া আইনের পক্ষের যুক্তিগুলো ঠিকঠাক মুখস্ত করে উঠতে পারেননি তখনও। প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে কোনও মতে বক্তৃতা শেষ করেন।
বিভিন্ন দল ছেড়ে বিজেপিতে আসা এই সব নেতা-কর্মীদের জন্য এ বার তাত্ত্বিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করল বিজেপি। প্রশিক্ষণ শিবিরগুলিতে নতুন কর্মীদের বিজেপির নীতি, আদর্শ, কাজের পদ্ধতি সম্পর্কে বোঝানো হচ্ছে। পুরনো কর্মীদের নতুন করে দলের আদর্শের কথা ঝালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। দলের একটি সূত্রের মতে, নব্য ও পুরনো কর্মী-নেতাদের মধ্যে একটা সেতু তৈরির চেষ্টা চলছে এই সব শিবিরে।
বিজেপি সূত্রে জানানো হয়েছে, দলের বারাসত সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৩৭টি মণ্ডল কমিটি আছে। ৪ অক্টোবর থেকে প্রতিটি মণ্ডলে আলাদা আলাদা করে প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করা হচ্ছে। রবিবার বনগাঁ শহর উত্তর পৌর মণ্ডলের প্রশিক্ষণ শিবির হয়ে গেল। ২০ অক্টোবরের মধ্যে জেলার সব ক’টি মণ্ডলের প্রশিক্ষণ শিবির শেষ করা হবে। ইতিমধ্যে বেশিরভাগ মণ্ডলের প্রশিক্ষণ শিবির শেষ হয়েছে।
এই সব প্রশিক্ষণ শিবিরের মাধ্যমে বিধানসভা ভোটের আগে দলের বারাসত সাংগঠনিক জেলায় নিজেদের ঘর গোছানোর কাজ শুরু করেছে জেলা বিজেপি নেতৃত্ব। দলের বারাসত সাংগঠনিক জেলার সভাপতি শঙ্কর চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রশিক্ষণ শিবিরের মাধ্যমে সংগঠন শক্তিশালী করার পাশাপাশি অন্য দল থেকে আসা নেতা-কর্মীদের বিজেপির নীতি-আদর্শ, কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্বচ্ছ্ব কর্মী তৈরি করাও লক্ষ্য আমাদের।’’
শিবিরগুলিতে মূলত আত্মনির্ভর ভারত, ব্যক্তিত্ব, সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার, বিজেপির ইতিহাসবিকাশ এবং বিচারধারা সম্পর্কে কর্মীদের বোঝানো হচ্ছে। প্রশিক্ষণ শিবিরে নির্দিষ্ট বাছাই করা বিশেষজ্ঞ বক্তারাই প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন বা বক্তৃতা করছেন।
প্রশিক্ষণ শিবিরের আগে করোনা ও লকডাউন পরিস্থিতিতে বিজেপি বিধানসভাভিত্তিক ভার্চুয়াল সভা করে বুথভিত্তিক সংগঠন জোরদার করছিল। পঞ্চায়েত এবং লোকসভা ভোটে বারাসত সাংগঠনিক জেলায় বিজেপি ভাল ফল করেছে। বনগাঁ লোকসভা আসনে তারা জয়ী হয়েছে। জেলা রাজনৈতিক মহল মনে করছে, লোকসভা ভোটের সাফল্য বিধানসভা ভোটে ধরে রাখতে শক্তিশালী সংগঠন তৈরি করা জরুরি। অনেক বুথেই এখনও সাংগঠনিক দুর্বলতা রয়েছে বলে মানের জেলা নেতাদের একাংশ। প্রশিক্ষণ শিবিরগুলির মাধ্যমে বুথ কর্মীদের উজ্জীবিত করে সংগঠন শক্তিশালী করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন দলের জেলা নেতৃত্ব। বিজেপির বারাসত সাংগঠনিক জেলা মূলত বারাসত এবং বনগাঁ মহকুমা এলাকা নিয়ে তৈরি। যা তৃণমূলের খাসতালুক হিসাবে পরিচিত। ফলে লড়াই যে কঠিন, তা বিজেপি নেতৃত্বের কাছে অজানা নয়।
প্রশিক্ষণ শিবির নিয়ে ইতিমধ্যেই বিজেপির কর্মীদের মধ্যে উৎসাহ তৈরি হয়েছে। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়ে, আগামী দিনে বারাসত সাংগঠনিক জেলায় তৃণমূলের আমপান দুর্নীতিকে প্রচারে আরও বেশি করে তুলে ধরা হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প ও সহায়তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে রাজ্য সরকারের ব্যর্থতার কথাও তুলে ধরা হবে প্রচারে।
সূত্রের খবর, বিভিন্ন এলাকায় বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। কর্মীদের কর্মসূচির মাধ্যমে ব্যস্ত রাখলে তা কমানো সম্ভব হবে বলেও মনে করছেন জেলা নেতারা। তরুণ প্রজন্ম সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক সময় ব্যয় করে। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার অনেক বেশি কার্যকর বলে বিজেপি নেতৃত্ব বরাবরই মনে করেন। আরও বেশি করে সেই মঞ্চকে ব্যবহার করতে বলা হচ্ছে কর্মী-সমর্থকদের।
অন্য দিকে, জেলা তৃণমূলের পক্ষ থেকেও বিধানসভাভিত্তিক কর্মী সম্মেলন শুরু হয়েছে। বুথভিত্তিক সংগঠন জোরদার করতে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে চা খাওয়া, গল্পগুজবের নির্দেশ দিচ্ছেন।
সব মিলিয়ে বিধানসভার প্রস্তুতি এখন থেকেই জোর কদমে শুরু করেছে যুযুধান দু’পক্ষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy