Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

দৃষ্টির বাধা পেরিয়ে মেধায় ভর তরুণের

হতদরিদ্র এলাকা ঝুড়িপাড়ার মহিলা-পুরুষেরা তত ক্ষণে গর্ব করে বলতে শুরু করেছেন, কেবল ইতিহাস নয়, ভূগোল-সাহিত্য-অঙ্কেও তরুণের সমান মেধা।

সফিকুল। ছবি: সুদীপ ঘোষ।

সফিকুল। ছবি: সুদীপ ঘোষ।

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৮ ০২:১৯
Share: Save:

দিল্লির সুলতানা রাজিয়ার নামই শোনেনি দেগঙ্গার ঝুড়িপাড়ার একাদশ শ্রেণির ছাত্রী রাজিয়া সুলতানা। পাশ থেকে বছর কুড়ির দৃষ্টিহীন এক তরুণ গড়গড় করে বলতে থাকেন, ইলতুৎমিস-কন্যা সুলতানা রাজিয়ার বিক্রমের কথা।

হতদরিদ্র এলাকা ঝুড়িপাড়ার মহিলা-পুরুষেরা তত ক্ষণে গর্ব করে বলতে শুরু করেছেন, কেবল ইতিহাস নয়, ভূগোল-সাহিত্য-অঙ্কেও তরুণের সমান মেধা। কোনও কিছু এক বার শুনেই এক বছর পরেও বলে দিতে পারেন সফিকুল আমিন। দেশ বিদেশের নিত্য দিনের খবরও তাঁর থেকে জেনে নেন স্থানীয়েরা। কঠিন অঙ্ক, টাকার হিসেব কষেন মুখেই। অথচ স্কুলে তাঁর স্থান হয়নি।

তা হলে কী করে এত কিছু শিখলেন? রাজিয়া, নাজিমা বিবিরা জানালেন, প্রথাগত লেখাপড়া না হলেও এলাকার সব স্কুলে অবারিত দ্বার সফিকুলের। যে কোনও স্কুলের গিয়ে পড়া শোনেন তিনি। স্যরেরাও বারণ করেন না। কখন কার বাড়িতে গৃহশিক্ষক আসছেন, মুখস্থ তাঁর। অন্য সময় পড়াতে এলে পড়ুয়ারাই এসে বলে, ‘‘ভাইয়া তাড়াতাড়ি চলো, আজ স্যর আগে চলে এসেছেন।’’

সফিকুলের মা রাইমা বিবি বলেন, ‘‘পড়াশোনায় আগ্রহ দেখে গ্রামের মানুষের কথায় দৃষ্টিহীনদের স্কুলে পাঠিয়েছিলাম। অনেক দূরে যেতে হত। তা-ও যেত। কিন্তু স্কুলটাই বন্ধ হয়ে গেল। সাধারণ স্কুলেও ভর্তি নিল না।’’

মূলত ঝুড়ি তৈরি করাই ওই এলাকার বাসিন্দাদের জীবিকা। সেই থেকেই গ্রামের নাম ঝুড়িগ্রাম। তবে সরকারি সাহায্যের অভাবে ধুঁকছে সেই কুটির শিল্প। তিন ছেলে, এক মেয়েকে নিয়ে সংসার টানতে ঝুড়ি বাঁধা ছেড়ে চাষের জমিতে জনমজুরি করেন সফিকুলের বাবা হাবিবুর। অভাবের সংসারে ঝুড়ি বেঁধে মা-কে সাহায্য করেন সফিকুল।

সূর্য দেখেননি। কিন্তু ছোটদের তিনি বোঝান আলোর প্রতিফলন, প্রতিসরণ। মাঠে শুয়ে আকাশ দেখার নেশা তাঁর। কী দেখেন? ‘‘উষ্ণতা মাখি। অদ্ভুত অনুভূতি হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Education Study সফিকুল
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE