এদের সংসারের বাড়বাড়ন্ত নিয়েই চিন্তা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
শীতের রাতে রাস্তার পাশে কুঁকড়ে শুয়ে ঘুমোচ্ছিল কয়েকটি কুকুর। হঠাৎ চার যুবক এসে লাঠি দিয়ে তাদের পেটাতে শুরু করে। ঘটনাটা চোখে পড়ে পশুপ্রেমী সংস্থা ‘বনগাঁ স্ট্রিট ডগস’ সংগঠনের এক সদস্যের। থানায় অভিযোগ করেন তিনি। কেউ অবশ্য ধরা পড়েনি।
বনগাঁ শহরের মিলনপল্লির এই ঘটনা খুব বিরল নয়। কারণে-অকারণে পথ কুকুরদের উপরে নির্যাতন কিছু মানুষের স্বভাব। সম্প্রতি বনগাঁর কুড়িরমাঠ এলাকাতেও এক মহিলার বিরুদ্ধে বিনা কারণে কুকুর পেটানোর অভিযোগ ওঠে।
হাবড়া, অশোকনগর, গোবরডাঙা সর্বত্রই ছবিটা এক। এমনকী, বাড়ির পাশে ডাস্টবিন থেকে কুকুরকে খাবার খেতে দেখলেও ইট ছুড়ে মারা হয়। যান চালকেরাও অনেকে সচেতন নন। রাস্তায় প্রায়ই দুর্ঘটনায় মৃত কুকুরের দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়।
তবে এ কথা ঠিক, পথ কুকুরের সংখ্যা দিনের পর দিন লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে চলেছে। এনআরএসের হস্টেলে ১৬টি কুকুরছানাকে পিটিয়ে খুনের ঘটনার পরে পথ কুকুরদের নিয়ে সমাজের বিভিন্ন মহলের উদ্বেগও সামনে আসছে।
বেঙ্গল মিউনিসিপ্যাল অ্যাক্টে পুরসভাগুলিকে পথ কুকুরদের নির্বীজকরণের (ভ্যাসেকট্যামি) কথা স্পষ্ট করে বলা আছে। কিন্তু বাস্তবে পুরসভাগুলি ওই বিষয়ে উদাসীন। পুরসভাগুলি জানিয়েছে, পরিকাঠামো নেই। আলাদা করে সরকারি তহবিল পাওয়া যায় না। অশোকনগর-কল্যাণগড়ের পুরপ্রধান প্রবোধ সরকার বলেন, ‘‘পথ কুকুরের সংখ্যা বেড়েছে। তবে নির্বীজকরণের কাজ এখনও করে উঠতে পারিনি। পশু চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছি, মার্চের মধ্যে কাজ শুরু করব।’’ হাবড়া পুরসভার সদ্য প্রাক্তন পুরপ্রধান নীলিমেশ দাস বলেন, ‘‘নির্বীজকরণের কাজ করার মতো পরিকাঠামো পুরসভার নেই।’’ বনগাঁর পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্য বলেন, ‘‘একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাদের মাধ্যমে কুকুরের নির্বীজকরণের কাজ করা হবে। সাধারণ মানুষের কাছে আবেদন, কোথাও কুকুর উপদ্রব করলে তাঁরা যেন পুরসভাকে খবর দেন। পুরসভার তরফে সেখানে দ্রুত কুকুরদের নির্বীজকরণ করা হবে।’’ গোবরডাঙার পুরপ্রধান সুভাষ দত্ত জানিয়েছেন, কুকুরের উপদ্রব নেই। ফলে নির্বীজকরণ নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হয়নি। পরিকাঠামোও নেই।
বারাসতের বাসিন্দা, কুকুরপ্রেমী সংঠনের সদস্য অর্পিতা চৌধুরী বলেন, ‘‘পথ কুকুরদের ভালবাসার পাশাপাশি নির্বীজকরণ জরুরি। কিন্তু পুরসভা তেমন পদক্ষেপ করে না। আমরা জনা কুড়ি ছেলেমেয়ে নিজেরা টাকা দিয়ে বারাসতে ১২০০ কুকুরকে নির্বীজকরণ করিয়েছি।’’
বনগাঁ স্ট্রিট ডগস সংগঠনের তরফেও সম্প্রতি বহু পথ কুকুরকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে, যাতে কুকুর কামড়ালেও জলাতঙ্ক না হয়।
পশুপ্রেমীরা মনে করেন, শুধুমাত্র নির্বীজকরণ করলেই সমস্যা মিটবে না। মানসিকতাও পাল্টানো প্রয়োজন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy