ব্যারাকপুর চিড়িয়ামোড়ে রাস্তার মাঝেই উল্টে গিয়েছে মোটরবাইক। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়
‘‘এই, গেল গেল গেল...।’’
যাঁকে নিয়ে জনতার এই উদ্বেগ, সেই মোটরবাইক আরোহী অবশ্য তত ক্ষণে পগার পার। সামনে ডিউটি করছিলেন যে পুলিশকর্মী, তিনি পিছন ফেরার আগেই উধাও সেই কালো মোটরবাইক।
এ দিকে চিৎকার-চেঁচামেচিতে দাঁড়িয়ে পড়েছে একটি বেসরকারি বাস। ঘাবড়ে যাওয়া চালক বুঝে উঠতে পারছেন না কী হয়েছে। তাঁর বোঝার কথাও নয়। একটি টোটো এবং একটি অটোকে তীব্র গতিতে পাশ কাটিয়ে যেতে গিয়ে বাইকটি বাসের পেটে গিয়ে ধাক্কা মারার উপক্রম করেছিল। বেসরকারি বাসটিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ওই রুটেরই অন্য একটি বাস তীব্র গতিতে সেটিকে টপকে গেল। সেই সময়েই একটি টোটো দাঁড়িয়ে থাকা বাসটিকে ওভারটেক করতে যাচ্ছিল। কিন্তু অন্য বাসটির গতি দেখে টোটোচালক দাঁড়িয়ে পড়েন। ট্র্যাফিক পুলিশ ছুটে এসে দাঁড়িয়ে থাকা বাসটিকে এগোতে বলে।
এমন ঘটনা ব্যারাকপুরের চিড়িয়ামোড়ে ট্র্যাফিকের একটি খণ্ড চিত্র মাত্র। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, সপ্তাহের প্রতিদিনই সেখানে ছবিটা একই থাকে। সম্প্রতি চিড়িয়ামোড়েই মেয়ের জীবন বাঁচিয়ে বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন শান্তি বাজারের বাসিন্দা নিতু গুপ্ত। বাসিন্দাদের অভিযোগ, দুর্ঘটনার পরে অন্য দিনের থেকে ট্র্যাফিক ব্যবস্থা ছিল কিছুটা আঁটোসাঁটো। তবে কয়েক দিন পর থেকেই চিড়িয়ামোড় ফিরে গিয়েছে পুরনো অবস্থায়। বিভিন্ন যানবাহনের জটে অবাধে চলছে দ্রুতগতিতে একে অপরকে টপকে বেরিয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতা।
এলাকার ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, বাসের রেষারেষি দেখে তাঁদের চোখ সয়ে গিয়েছে। চিড়িয়ামোড়ের আগে ক্যান্টনমেন্ট রোড এবং পরে স্টেশন রোড ধরে বাসগুলি যে ভাবে ছোটে, তাতে প্রতিদিনই যে বড় দুর্ঘটনা ঘটে না সেটাই আশ্চর্যের। কিন্তু বাসের এমন রেষারেষির কারণ কী? স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, ব্যারাকপুর অন্যতম ব্যস্ত একটি রেলস্টেশন। প্রচুর যাত্রী সেখানে নেমে বাস ধরে বিভিন্ন দিকে যাতায়াত করেন। তার ফলে যাত্রী তোলার জন্য বাসগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতা লেগেই থাকে। ছোটখাটো দুর্ঘটনা প্রতিদিনই ঘটে।
বি টি রোড দিয়ে আসা গাড়িকে স্টেশনের দিকে যেতে হলে পুরো ট্র্যাফিক আইল্যান্ড ঘুরে আসতে হয়। উল্টো দিক থেকে আসা যানবাহনের জন্যও একই নিয়ম। তার ফলে দিনের ব্যস্ত সময়ে ট্র্যাফিক ব্যবস্থা তালগোল পাকিয়ে যায়। স্থানীয় ব্যবসায়ী হরিপ্রসাদ যাদব বলেন, “চিড়িয়ামোড় থেকে স্টেশনের দূরত্ব ৫০০ মিটার হবে। প্রচুর যানবাহন চলে। তার মধ্যেই এক একটি বাস ওভারটেক করতে গিয়ে তীব্র গতিতে চলতে থাকে। তার ফলেই ঘটে দুর্ঘটনা।”
চিড়িয়ামোড়ে পুলিশের ট্র্যাফিক বুথ রয়েছে। সেখানে বেশ কয়েক জন পুলিশকর্মী থাকেন। তা সত্ত্বেও ট্র্যাফিক পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যান না কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশকর্মীদেরই একাংশের অভিযোগ, নিয়মভঙ্গকারী বাসগুলি সামান্য জরিমানা দিয়েই রেহাই পেয়ে যায়। ফলে সেগুলিরও কোনও হেলদোল থাকে না। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি (জোন ১) কে কান্নন বলেন, “ওখানকার ট্র্যাফিক ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হচ্ছে। নিয়মভঙ্গকারী যানবাহনগুলিকে যাতে কড়া শাস্তি দেওয়া যায়, তা দেখা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy