Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

জল কিনেই বাড়ছে বাজেট

কোনও নতুন গজিয়ে ওঠা পিকনিক স্পটের সমস্যা নয়। ডায়মন্ড হারবারের পুরনো কেল্লার পিকনিক স্পটে এসে বছরের পর বছর ধরেই এই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে মানুষকে। ২০ লিটার জল ৪০ টাকা দিয়ে কিনে কাজ সারতে হল।

নানা অসুবিধা সত্ত্বেও জমে উঠেছে আড্ডা। নিজস্ব চিত্র

নানা অসুবিধা সত্ত্বেও জমে উঠেছে আড্ডা। নিজস্ব চিত্র

দিলীপ নস্কর
ডায়মন্ড হারবার শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:১৮
Share: Save:

ডানলপ থেকে ৩৭ জনের একটি দল এসেছে পিকনিকে। রান্নার তোড়জোড় চলছিল। জলের খোঁজ শুরু হতেই একজন বিজ্ঞের মতো উত্তর দিলেন, ‘‘আশেপাশেই নিশ্চয়ই আছে কোথাও।’’ কিন্তু কোথায় সেই ‘আশপাশ?’

একে ওকে জিজ্ঞাসা করে জানা গেল, পিকনিক স্পটে ঢোকার মুখে ট্যাপ লাইনের জলের ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু সে তো প্রায় দুশো মিটার দূরে। অগত্যা ২০ লিটার জল ৪০ টাকা দিয়ে কিনে কাজ সারতে হল।

কোনও নতুন গজিয়ে ওঠা পিকনিক স্পটের সমস্যা নয়। ডায়মন্ড হারবারের পুরনো কেল্লার পিকনিক স্পটে এসে বছরের পর বছর ধরেই এই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে মানুষকে।

বাঙালি এমনিতে ভ্রমণপ্রেমী। ছুটিছাটা পেলেই এ দিক ও দিক বেরিয়ে পড়তে পা টানে। নিদেনপক্ষে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন জুটিয়ে শীতের রোদ গায়ে মেখে পিকনিক তো আছেই। কলকাতার ধারে-কাছের জায়গাগুলিতে শীতের সময়ে এক এক দিন তিল ধারণের জায়গা থাকে না। ডায়মন্ড হারবারের পুরনো কেল্লার মাঠও কলকাতা থেকে বেশি দূরে নয়। অনেকেই আসেন পিকনিকে। কিন্তু অভিজ্ঞতা অনেকেরই তিক্ত। বিশেষ করে যাঁরা বয়স্ক মানুষ, মহিলা-শিশুদের নিয়ে আসেন, তাঁরা শোনালেন সে কথাই।

ব্রিটিশ আমলে তৈরি গঙ্গার পাড় বরাবর পরিত্যক্ত প্রাচীন পুরনো কেল্লা, সুড়ঙ্গ দেখতে পছন্দ করেন অনেকে। চোখ মেললেই সামনে গঙ্গা। পরিবেশের দিক থেকে তুলনা নেই এই স্পটের। কিন্তু যত দিন এগিয়েছে, যাঁরা একবার ঘুরে গিয়েছেন পুরনো কেল্লা এলাকায়, তাঁরা আর দ্বিতীয়বার ঘুরে আসতে চান না। গঙ্গার ভাঙনে একে একে তলিয়ে গিয়েছে দর্শনীর সেই পুরনো কেল্লা। বর্তমানে ধংসাবশেষটুকু ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। তবু চোখের আরাম দিতে মা গঙ্গা তো আছেন!

ডায়মন্ড হারবার পুরসভার অধীনে ওই স্পটে পিকনিক করতে ঢোকার জন্য মাথা-পিছু ৫টা করে দিতে হয়। গাড়ি পার্কিংয়েও ২০-৩০ টাকা লাগে। এ ছাড়া, স্থানীয় মণ্ডপ শিল্পীরা বেশ কিছু ছোটখাট ছাউনি করে রেখেছেন। সেখানে পিকনিক করতে খরচ ১২০০-১৫০০ টাকা। পিকনিক স্পটে ঢোকার মুখে ট্যাপ লাইনের জল আছে। আর আছে সুলভ শৌচালয়।

পিকনিক স্পটটি ঢোকার মুখ থেকে গঙ্গার পাড় বরাবর প্রায় ১ কিলোমিটার পর্যন্ত লম্বা। ঢোকার মুখে মাঠে বসে যাঁরা পিকনিক করেন, তাঁদের জল-শৌচাগারের কিছুটা সুবিধা থাকলেও একটু দূরে যাঁরা জায়গা পান, তাঁদের জন্য দীর্ঘ পথ হেঁটে এ সব পেতে আসতে হয়। পিকনিক স্পটের ভিতরের দিকে পানীয় জল বা শৌচাগারের ব্যবস্থা নেই। ছাউনিও নেই।

ডানলপ থেকে আসা আশিস নিয়োগী, সুচন্দন ভট্টাচার্যরা জানালেন, প্রথম এসেছেন এখানে। কিন্তু পরিকাঠামো বলতে তেমন কিছুই নেই। জল, শৌচাগার তো বটেই, বাড়ির ছোটদের সারাটা দিন কাটানোর কোনও প্রমোদের ব্যবস্থা রাখা হয়নি। দু’টি দোলনা অন্তত রাখতে পারা যায় নাকি, প্রশ্ন ওই পর্যটকদের। টিকিট কেটে যেখানে ঢুকতে হচ্ছে, সেখানে কেন হবে এমন অবস্থা, প্রশ্ন সকলেরই।

হাওড়ার ডোমজুড় থেকে এসেছিলেন মহিউদ্দিন মোল্লা, সিরাজ শেখ। বললেন, ‘‘জল কিনতে কিনতেই তো পিকনিকের বাজেট বেরিয়ে গেল।’’

ডায়মন্ড হারবারের পুরপ্রধান মীরা হালদার বলেন, ‘‘প্রতি বছর অস্থায়ী শৌচাগার করে দেওয়া হয়। এ বার কেন করা হয়নি খোঁজ নেব। রাস্তা না থাকায় পানীয় জলের গাড়ি ওখানে যেতে পারে না। বাকি সমস্যার বিষয়ে খোঁজ নেব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE