Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

বাস চলে না, অটো-ভ্যানের দাপটে নাজেহাল যাত্রীরা

বিকেল সাড়ে ৪টা। কুলতলির দেবীপুরের বাসিন্দা প্রশান্ত দলুই মথুরাপুর হাসপাতালে ভর্তি থাকা মাকে দেখতে যাবার জন্য কুলতলির ঘটিহারানিয়া মোড়ে হাজির হয়েছেন। ওই মোড় থেকে মথুরাপুর পর্যন্ত কোনও বাস চলাচল করে না। সে কারণে অটোতে বা অন্য গাড়িতে হাসপাতালে পৌঁছতে হবে তা তিনি জানেন।

এ ভাবেই চলে যাতায়াত। ছবি: দিলীপ নস্কর।

এ ভাবেই চলে যাতায়াত। ছবি: দিলীপ নস্কর।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মথুরাপুর শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৫ ০২:৪০
Share: Save:

বিকেল সাড়ে ৪টা। কুলতলির দেবীপুরের বাসিন্দা প্রশান্ত দলুই মথুরাপুর হাসপাতালে ভর্তি থাকা মাকে দেখতে যাবার জন্য কুলতলির ঘটিহারানিয়া মোড়ে হাজির হয়েছেন। ওই মোড় থেকে মথুরাপুর পর্যন্ত কোনও বাস চলাচল করে না। সে কারণে অটোতে বা অন্য গাড়িতে হাসপাতালে পৌঁছতে হবে তা তিনি জানেন। কিন্তু ঘণ্টা খানেক আগে একটি অটো দুর্ঘটনার জন্য ওই সময় সমস্ত গাড়ি চলাচল বন্ধ রয়েছে এটি তাঁর অজানা। ঘটিহারানিয়া থেকে মথুরাপুর হাসপাতাল প্রায় ৩৫ কিলোমিটার রাস্তা। এই রাস্তা পেরিয়ে মাকে দেখতে যাওয়া এক বড় সমস্যা প্রশান্তবাবুর। তবে এই সমস্যা শুধু তাঁর নয় এলাকার বহু মানুষই এই সমস্যায় ভুক্তভোগী।

পাকা রাস্তা থাকা সত্ত্বেও ওই রুটে আজও বাস চলাচল শুরু হয়নি। ডায়মন্ড হারবার, জয়নগর এলাকার বাসিন্দাদের যেতে গেলে প্রতিনিয়ত চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই রুটে অটো মোটর ভ্যান বা অন্য গাড়ি নিজেদের মর্জিমতো যাত্রী পরিষেবা দেয়। সরকারি বা বেসরকারি বাস চালানোর জন্য কর্তৃপক্ষকে আবেদন করলেও আজ পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। এ বিষয়ে দক্ষিণ জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ অধিকর্তা (আরটিও) চপল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ওই এলাকায় বাস চালানোর জন্য আমি বাস মালিকদের কাছে তাঁদের আবেদন জানাতে বলেছিলাম। কেউ আবেদন করলেই আমি অনুমোদন দিয়ে দেব। কিন্তু কোনও আবেদন না পড়ায় ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।”

২০-২৫ বছর আগে কুলতলির ঘটিহারানিয়া মোড় থেকে মথুরাপুর স্টেশন মোড় পর্যন্ত ওই রাস্তাটি পিচ রাস্তা করা হয়েছিল। রাস্তাটি তৈরি হয়েছে ঘটিহারানিয়া থেকে জয়নাল মোড় হয়ে রায়দিঘি-মথুরাপুর স্টেশন রোডের কৃষ্ণচন্দ্রপুর মোড় পর্যন্ত। ঘটিহারানিয়া থেকে জয়নালের মোড় পর্যন্ত প্রায় ৮ কিলোমিটার রাস্তা যাতায়াতের জন্য মোটরভ্যানই ভরসা। ওখান থেকে কৃষ্ণচন্দ্রপুর হয়ে মথুরাপুর স্টেশন পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার রাস্তা যাতায়াত করতে হয় অটো বা মোটরভ্যানে। ঢাকির মোড় থেকে প্রিয়র মোড় পর্যন্ত ঝাঁ চকচকে প্রায় ২০ কিলোমিটার রাস্তা। কিন্তু এখানেও শুরু হল না বাস চলাচল। ওই ঢাকির মোড় থেকে জয়নগর স্টেশন মোড় পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার রাস্তার যাতায়াতের ওই একই হাল।

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে জয়নগর ২ ব্লকের ১০টি পঞ্চায়েতের মধ্যে সাতটি পঞ্চায়েত ওই রুট-লাগোয়া। এছাড়াও ওই এলাকায় রয়েছে দশটি হাইস্কুল, প্রায় পঁচিশটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। রয়েছে প্রাথমিক ও উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র। এই কারণে অফিসযাত্রীদের প্রত্যেক দিনই হয়রানির শিকার হতে হয়। বাস না চলাচল করায় ছোট গাড়ির উপর নির্ভর করতে হয় যাত্রীদের। গাড়ির সংখ্যা কম থাকায় বাদুরঝোলা হয়ে বা ট্রেকারের ছাদে বসে যাতায়াত করতে হয় যাত্রীদের। ওই সমস্ত কর্মীদের মধ্যে এমন কর্মীও রয়েছে যাঁরা ৪-৫ বার অটো, মোটরভ্যান পাল্টে তাঁর গন্তব্যে পৌঁছয়। এমন এলাকায় অফিস বা স্কুলে যেতে প্রতিনিয়ত দেরি হয়ে যায়। তা ছাড়া কলকাতা থেকে যে শিক্ষক শিক্ষিকারা কর্মস্থলে যান তাঁদের ছোট গাড়ির ঝাঁকুনিতে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন বলেও অভিযোগ। কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে ওই রুটে মাঝে মাঝেই গাড়ি বন্ধ তাকে বলে অভিযোগ। ফলে নিত্য যাত্রীরা ফেরার যা যাওয়ার পথে কখনও গাড়ি পায় আবার কখনও পান না। কুলতলি এলাকায় ডায়মন্ড হারবার থেকে যাওয়া এক শিক্ষিকা শম্পা পুরকাইত বললেন, “এখানে সরকারি বা বেসরকারি বাস চলাচল না করায় আমাদের গন্তব্যে পৌঁছতে দেরি হয়। তা ছাড়াও যাতায়াতের ধকল সহ্য করা যায় না। নিত্য কর্মস্থলে যাতায়াত করাটা আমার মতো অনেকের কাছে কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।” একমত হয়ে জয়নগর ২ বিডিও কমলেশ মণ্ডল বলেন, “বাস চলাচল না করায় আমাদের বিভিন্ন দফতরের কর্মীরা সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে পারছেন না।”

জয়নগর ২ পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি গোবিন্দ হালদার বলেন, “মথুরাপুর থেকে ঢাকির মোড় বা জয়নগর থেকে ঢাকির মোড় পর্যন্ত সরকারি বা বেসরকারি বাস চালানোর জন্য একাধিকবার কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ঘটিহারানিয়া থেকে জয়নালমোড় পর্যন্ত রাস্তাও বেহাল অবস্থা। ওই রাস্তা দ্রুত সংস্কার করে প্রশাসন বাসের ব্যবস্থা করুক।” কেন বাস মালিকেরা ওই রুটে বাস চালাতে চাইছে না। সে বিষয়ে জেলা জয়েন্ট কমিটি অফ বাস অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অশোক গায়েন বলেন, “ওই এলাকায় রাস্তা খারাপ ও শ্রমিক সমস্যায় জন্য কোনও মালিক গাড়ি নামাতে চাইছেন না। কয়েকবার আলোচনাও হয়েছে।”

সরকারি বাসের পরিবহণ দফতরের আধিকারিকরা কী বলেন?

জেলায় বিভিন্ন এলাকায় চলছে ভূতল পরিবহণ নিগমের বাস। দফতরের ম্যানেজিং ডিরেক্টর নিরঞ্জন সান্ডিল্য বলেন, “ওই এলাকায় বাস চালানোর আবেদন পেয়েছি। শীঘ্রই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE