Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

নির্দেশের ফাঁক গলে দাঁও মারছে কারবারি

আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নদী থেকে বেআইনি ভাবে তোলা হয় বালি। যার জেরে রাজস্বের ক্ষতি তো হয়ই, প্রাকৃতিক ভাবেও ক্ষতির পরিমাণ প্রচুর। কখনও আলগা হয় পাড়। ধস নামার আশঙ্কা বাড়ে। কখনও নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে যায়। ভাঙন বাড়ে। অভিযোগ, রাজনৈতিক দলের একাংশের মদত আছে এই কারবারে। পরিস্থিতি সরেজমিন দেখল আনন্দবাজার। ক্যানিংয়ে মাতলা নদীর চরে চারটি বালি খাদান রয়েছে। নদীর চরে বড় গর্ত তৈরি করে চার দিকে বালির বস্তা দিয়ে ট্যাঙ্ক তৈরি করা হয়েছে। নদী থেকে জলমিশ্রিত বালি পাইপের মাধ্যমে ওই সব ট্যাঙ্কে ফেলা হয়। পরে জল শুকিয়ে যাওয়ার পরে বালি তুলে লরি করে বাইরে পাঠানো হয়। গাড়ি ভাড়া বাদ দিয়ে ১০০ ‘সিএফটি’ বালি বিক্রি হয় ৬০০ টাকায়।

বেআইনি: ড্রেজার বসিয়ে তোলা হচ্ছে বালি। নিজস্ব চিত্র

বেআইনি: ড্রেজার বসিয়ে তোলা হচ্ছে বালি। নিজস্ব চিত্র

সামসুল হুদা 
ক্যানিং শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:৩২
Share: Save:

মজে যাওয়া নদী থেকে আগে কোদাল দিয়ে বালি কেটে নৌকো ভরা হত। টুকটাক চলত সেই কাজ। গত কয়েক বছর ধরে রীতিমতো ড্রেজার বসিয়ে তোলা হচ্ছে পলি, বালি। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, মাতলা থেকে যে ভাবে বালি তোলা হচ্ছে, তাতে পরিবেশের উপরে বড় রকম প্রভাব পড়তে পারে। সব জেনে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন, উঠছে এই অভিযোগও।

ক্যানিংয়ে মাতলা নদীর চরে চারটি বালি খাদান রয়েছে। নদীর চরে বড় গর্ত তৈরি করে চার দিকে বালির বস্তা দিয়ে ট্যাঙ্ক তৈরি করা হয়েছে। নদী থেকে জলমিশ্রিত বালি পাইপের মাধ্যমে ওই সব ট্যাঙ্কে ফেলা হয়। পরে জল শুকিয়ে যাওয়ার পরে বালি তুলে লরি করে বাইরে পাঠানো হয়। গাড়ি ভাড়া বাদ দিয়ে ১০০ ‘সিএফটি’ বালি বিক্রি হয় ৬০০ টাকায়।

মহকুমা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘এই সব বালি খাদান আগে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরে বারুইপুরে জেলখানা তৈরির জন্য জমি ভরাট করতে ওই বালি তোলার অনুমতি দেওয়া হয় জেলা প্রশাসন থেকেই।’’ সেই সুযোগটাই নিচ্ছে বালি মাফিয়ারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক খাদান মালিক বলেন, ‘‘বারুইপুরে সরকারি প্রকল্পের জন্য জমি ভরাট করতে জেলা থেকে আমাদের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সেই মতো আমরা নদী থেকে বালি তুলে সরকারি প্রকল্পে সরবরাহ করি। তবে কিছু ক্ষেত্রে খরচ তুলতে বাইরে বালি সরবরাহ করতেই হয়। আমাদের এই চুক্তির মেয়াদ রয়েছে ২০১৯ সাল পর্যন্ত।’’ জানা গেল, এক একটি ড্রেজার মেশিনের দাম পড়ে ৮-১০ লক্ষ টাকা। তার সঙ্গে অন্যান্য খরচও রয়েছে। নির্ধারিত পরিমাণের থেকে অনেক বেশি বালি তোলা হয়। পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত বলেন, ‘‘এ ভাবে বালি তোলার ফলে নদী তার স্বাভাবিক গতিপথ হারাচ্ছে। জীববৈচিত্রেও ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। জনবসতি নদীগর্ভে তলিয়ে যেতে পারে। আবার নদী মজে গিয়ে গজিয়ে উঠতে পারে ডাঙা।’’ তিনি আরও জানান, এ ভাবে বালি তোলা সম্পূর্ণ বেআইনি। এ নিয়ে তাঁরা পরিবেশ আদালতে মামলা করেছেন।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও বলেন, ‘‘সরকারি প্রকল্পের জন্য সংশ্লিষ্ট দফতর অনুমতি দিতে পারে। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি। যদি কেউ অবৈধ ভাবে এই কাজ করে থাকে, তা হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mafia Sand Illegal Law
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE