বৃহস্পতিবারের দুপুর। সবেমাত্র আকাশপথে কপ্টারে উড়ে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক জুড়ে তখনও বিশাল যানজট। ঠায় দাঁড়িয়ে গাড়ি। ভ্যাপসা গরমে বাসে দাঁড়িয়ে থাকা এক মহিলা যাত্রী কপালের ঘাম মুছে বললেন, ‘‘রাস্তাটা যদি এদ্দিনে চওড়া হতো, এই দুর্ভোগ পোহাতে হতো না।’
গত সাত বছরে যতবার খবরের শিরোনামে এসেছে আমডাঙা, সে ওই রাস্তার জন্যই। জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণে বাধার জন্য থমকে আছে গোটা প্রকল্প। ফিরে গিয়েছে কোটি কোটি টাকা। কলকাতা থেকে উত্তরবঙ্গ পর্যন্ত রাস্তাটি চার লেন-এর হওয়ার কথা। কিন্তু কোথায় কী!
গত বিধানসভা ভোটের আগে সেই সড়ক সম্প্রসারণে বাধা যাঁরা দিয়েছিলেন, তাঁদের সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে তৃণমূল। ক্ষমতায় আসার পরেও সম্প্রসারণের সেই কাজ তারা এগোতে দেয়নি বলে অভিযোগ। শীর্ণকায় সড়কে দিন দিন বেড়েছে গাড়ির সংখ্যা। শুধু বাড়েনি রাস্তার গতি।
রাস্তা চওড়া হলে কী হতে পারত, সে কথা ইদানীং আমডাঙার চাষাভুষো লোকজনও ভাবতে শুরু করেছেন। স্থানীয় এক চাষির জানালেন, এলাকায় চাষবাসই তো একমাত্র জীবিকা। রাস্তাটা হলে সব্জি আরও অনেক কম সময়ে কলকাতাতেও বিক্রি করা যেত। কিন্তু এখন যে রকম যানজট হয়, তাতে কলকাতায় ফসল বেচে দু’পয়সা বাড়তি লাভ নেহাতই আকাশকুসুম চিন্তা!
বারাসত ছাড়িয়ে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে একটু এগোলেই রাস্তার দু’পাশের সবুজেরপ সমারোহ জানান দেবে, আমডাঙা এসে গিয়েছে। এলাকায় পা রাখলেই জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণ নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ কানে আসে। এক দল চায়, রাস্তা চওড়া হোক। অন্য পক্ষ বলে, না না। জমি আমরা ছাড়ব না।
জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণ নিয়ে রাজ্য জুড়ে বহু নিন্দেমন্দও শুনতে হয়েছে আমডাঙাকে। কিন্তু ঘটনা হল, তৃণমূলের রফিকুর রহমান বা সিপিএমের আবদুস সাত্তার, কেউই বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে তেমন স্বচ্ছন্দ নন।
তবে সংখ্যালঘুদের উন্নয়ন কোন আমলে বেশি হয়েছে, কোন আমলে কম— এ নিয়ে দু’জন ডুয়েল লড়ে যেতে পারেন অনায়াসে। প্রসঙ্গ উঠলেই মুখে কথার বান ডাকে। রফিকুরের দাবি, ‘‘যা কাজ, সে তো আমার আমলেই হল।’’ সঙ্গে সঙ্গে উন্নয়নের লম্বা লিস্ট আউড়ে যান তিনি।
বাম প্রার্থী সাত্তার এক সময়ে রাজ্যের সংখ্যালঘু উন্নয়ন মন্ত্রী ছিলেন। নানা তথ্য-পরিসংখ্যান তাঁর কণ্ঠস্থ। গত বার রফিকুরের কাছে হেরেও এ বার যথেষ্ট আশাবাদী। বাম আমলে সংখ্যালঘুদের জন্য নানা প্রকল্পের কথা বলে আখেরে সাত্তার বুঝিয়ে দেন, তৃণমূলের সবটাই ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানো। আসলে সংখ্যালঘুদের জন্য কোনও দরদই নেই দিদি আর তাঁর ভাইদের।
এ সবের মধ্যে আবার দু’টি ঘাসফুলের একটি অন্যটি থেকে কিছুটা মুখ ফিরিয়ে রয়েছে আমডাঙায়। তৃণমূল নেতাদের একাংশের মধ্যে রফিকুরকে প্রার্থী করা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে। রফিকুর অবশ্য বলছেন, ‘‘ওদের সঙ্গে লোক নেই।’’ এতে কি আপনারা বাড়তি সুবিধা পাবেন? সাত্তার বলেন, ‘‘ও সব নিয়ে ভাবি না। মানুষ আমাদের সঙ্গে আছে।’’
মানুষের উপরে ভরসা রাখছেন অরিন্দম দে-ও। এই বিজেপি নেতা মরিচা পঞ্চায়েতে ২০০৩ সাল থেকে জিতে আসছেন। এ বার বিজেপি ভোটের টিকিট দিয়েছে তাঁকে।
ডান কিংবা বাম এলাকায় তোলাবাজি ছাড়া আর কোনও কাজ হয়নি, বলছেন তিনি। কিন্তু সংখ্যালঘু প্রভাবিত এলাকায় দুই সংখ্যালঘু প্রার্থীর মোকাবিলায় সমস্যা হবে না তো অরিন্দমবাবুর? ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে আমডাঙা থেকে ২৪ হাজার ভোট পেয়েছিল বিজেপি।
এই পরিসংখ্যানটাই মূল ভরসা জোগাচ্ছে বিজেপিকে।
আমডাঙা এক সময়ে ছিল দুষ্কৃতীদের ডেরা। ঘরে ঘরে বোমের চাষ। একটু কথা কাটাকাটিতেই লঙ্কাকাণ্ড। ভোটের দিন তো আরও চরমে ওঠে উত্তাপ। ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটের দিনই টেঙাটেঙি গ্রামে খুন হয়ে যায় মাদারবক্স আলি নামে এক ব্যক্তি।
এলাকায় শান্তি নামুক, এটাই চান আমডাঙার মানুষ। কিন্তু ডান-বাম কোনও আমলেই তেমন কিছু হয়েছে কি, প্রশ্নটা ছুড়ে দেন বিজেপি প্রার্থী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy