Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বাগদায় প্রার্থী বাছাই নিয়ে জটিলতা

ব্লক তৃণমূলের তরফে স্পষ্ট ভাবে জানানো হয়েছে, এক সময়ে যাঁরা লিখিত ভাবে দল ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন, তাঁদের এ বার টিকিট দেওয়ার ব্যাপারে ব্লক কমিটির কোনও চিন্তা-ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন ব্লক তৃণমূল সভাপতি রামচন্দ্র বসু।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সীমান্ত মৈত্র
বাগদা শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

গত বিধানসভা ভোটের সময়ে তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দেওয়া নেতা-নেত্রীরা আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের টিকিট পাবেন কিনা, তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন। বাগদার ওই নেতা-নেত্রীদের মধ্যে অনেকে পঞ্চায়েতের নানা স্তরের বর্তমান জন প্রতিনিধি।

ব্লক তৃণমূলের তরফে স্পষ্ট ভাবে জানানো হয়েছে, এক সময়ে যাঁরা লিখিত ভাবে দল ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন, তাঁদের এ বার টিকিট দেওয়ার ব্যাপারে ব্লক কমিটির কোনও চিন্তা-ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন ব্লক তৃণমূল সভাপতি রামচন্দ্র বসু। তবে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই বলে দিয়েছেন, যে প্রার্থী যেখানে জয়ী হয়েছিলেন, টিকিট পাওয়ার ব্যাপারে তাঁদেরই অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। নানা কারণে যাঁরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে দল থেকে, তাঁদের কাছে টানা হবে— এই আশ্বাসটুকুই এখন ভরসা বাগদার ওই সব নেতা-নেত্রীর।

দলের ব্লক কমিটি সূত্রে জানানো হয়েছে, ওই সময় যাঁরা দল ছেড়ে ছিলেন তাদের মধ্যে মাত্র তিনজন পরবর্তী সময়ে ‘ভুল স্বীকার করে’ দলে ফিরতে চেয়ে ব্লক সভাপতির কাছে আবেদন করেছিলেন । বাকিরা তা করেননি। ফলে তাঁদের প্রার্থী করার প্রশ্নই নেই। ব্লক কমিটি জানিয়েছে, যে তিনজন আবেদন করেছিলেন তাদের মধ্যে একমাত্র স্মৃতি সাধু নামে এক পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যকেই এখনও পর্যন্ত দলে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বাকি দু’জনের বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত এখনও নেওয়া হয়নি। প্রসঙ্গত, যে দুলাল বরকে সামনে রেখে দল ছেড়েছিলেন এতজন, সেই দুলালবাবু নিজেও ইতিমধ্যে তৃণমূলের দিকে পা বাড়িয়েই আছেন।

বিধানসভা ভোটের আগে যাঁরা কংগ্রেস প্রার্থী দুলাল বরকে সমর্থন করে তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম তরুণ ঘোষ, দিলীপ ঘোষ, প্রতিমা রায়। তরুণবাবু বাগদা পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি ও বর্তমান সদস্য, প্রতিমা রায় সমিতির পূর্ত কর্মাধক্ষ্য, দিলীপবাবু ব্লকের প্রাক্তন সভাপতি। এ ছাড়াও বাকিদের মধ্যে বিকাশ রায় পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি। এ ছাড়াও আছেন পঞ্চায়েত সদস্য তরুণ মণ্ডল।

প্রতিমা রায়, দিলীপ ঘোষদের দাবি, বিধানসভা ভোটের পরে তাঁরা দলের জেলা কার্যালয়ে গিয়ে জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের উপস্থিতিতে ফের তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। সে সময়ে বামেদের কয়েকজন পঞ্চায়েত সদস্যকে দলীয় কার্যালয়ে নিয়ে গিয়ে তাদেরও ঘাসফুল শিবিরে নাম লিখিয়েছিলেন। প্রতিমাদেবী বলেন, ‘‘শুধু তাই নয়, পরবর্তী সময়ে আমরা যাঁরা পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য, তাঁরা দলীয় হুইপ মেনে পঞ্চায়েত সমিতির নতুন সভাপতি নির্বাচনের সময়ে দলের মনোনীত প্রার্থীকে ভোটও দিয়েছিলাম।’’

দিলীপবাবুর স্ত্রী দীপ্তি তৃণমূলের জেলা পরিষদের সদস্য। রামচন্দ্রবাবু বলেন, ‘‘দীপ্তিও ওই সময়ে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন। সে প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে। তা আমরা জেলা ও রাজ্য নেতৃত্বের কাছে দিয়েও দিয়েছি।’’ দিলীপবাবুর দাবি, ‘‘আমরা বিধানসভা ভোটের আগে কংগ্রেসে যোগ দিলেও আমার স্ত্রী কংগ্রেসে যোগ দেননি। কংগ্রেস প্রার্থীর হয়ে প্রচারও করেননি।’’

বাগদার সমস্যা মেটাতে এ বার চারজন দলীয় পর্যবেক্ষক জেলা কমিটির পক্ষ থেকে নিয়োগ করা হয়েছে। জ্যোতিপ্রিয়বাবু বলেন, ‘‘বিধানসভা ভোটের পরে ওঁদের দলে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। যাঁরা জনপ্রতিনিধি রয়েছেন, তাদের এ বারও দল প্রার্থী করার চেষ্টা করবে।’’

জেলা সভাপতি এ কথা বললেও তৃণমূলের ব্লক কমিটি জানাচ্ছে, দলে যোগ দিতে হলে ব্লক সভাপতির কাছেই আবেদন করতে হয়। যা ওঁরা কেউ করেননি। এ ক্ষেত্রে ঘাসফুল শিবিরের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ইঙ্গিত মিলছে বলে জানাচ্ছে দলেরই একটি সূত্র। কিন্তু এক সময়ে দলছুটদের কাছে না টানতে তাঁরা বিজেপির হাত শক্ত করবেন না, তৃণমূল নেতৃত্বের এ প্রশ্নও ভাবাচ্ছে। তরুণবাবুও ইতিমধ্যেই আলাদা করে প্রার্থী বাছাই করছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমরাও দলের কাছে প্রার্থী তালিকা ইতিমধ্যেই কিছুটা জমা দিয়েছি। বাকিটা দ্রুত দেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE