Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

পঞ্চায়েতে বাড়ি তৈরি, বদল আইনে

নতুন আইনে অনুমতি কারা দেবে তা নির্ভর করবে বাড়ির আয়তনের উপর। সব ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট হারে ‘ফি’ দিতে হবে। কেমন সেই ‘ফি’?

নুরুল আবসার
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৮ ০৫:১৭
Share: Save:

গ্রামাঞ্চলে বাড়ি তৈরির আইন আমূল পাল্টে ফেলল রাজ্য সরকার। আগে এ ব্যাপারে অনুমতি দেওয়ার একচ্ছত্র ক্ষমতা ছিল পঞ্চায়েতের। পরিবর্তিত আইনে পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদকেও বাড়ি তৈরির অনুমতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। আগামী মাসে পঞ্চায়েতের তিনটি স্তরেই যে নতুন বোর্ড হবে, পরিবর্তিত আইন মেনেই তাদের বাড়ি তৈরির অনুমতি দিতে হবে বলে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন।

আগে পাকা বাড়ি তৈরির জন্য পঞ্চায়েতের কাছ থেকে অনুমতি নিলেই চলত। তিন তলা বা চার তলা বাড়ি তৈরি করতে হলে জেলা পরিষদের কাছ থেকে নকশা অনুমোদন করাতে হত। পঞ্চায়েত সমিতির কোনও ভূমিকা ছিল না। অনুমতি পাওয়ার জন্য কোনও নির্দিষ্ট ‘ফি’-র সংস্থানও আগের আইনে ছিল না। ফলে, পঞ্চায়েতগুলি খেয়ালখুশি মতো ‘ফি’ নিত, এ অভিযোগ ছিলই। ফলে, স্বচ্ছতার প্রশ্নে এবং নগরায়নের ধাক্কা যে ভাবে গ্রামাঞ্চলে পৌঁছচ্ছে তাতে নতুন আইনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে দু’বছর আগেই ভাবনাচিন্তা শুরু করেন পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের কর্তারা। সম্প্রতি নতুন আইনের প্রস্তাবটি মন্ত্রিসভার বৈঠকে গৃহীত হয়। বিধানসভাতেও আইনটি পাশ হয়।

পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের কর্তাদের বক্তব্য, গ্রামাঞ্চলে বাড়ি তৈরির অনুমতি দেওয়ার ব্যাপারে এতদিন যে আইন ছিল তার চূড়ান্ত অপব্যবহার করা হত। কারণ, ওই আইন কী ভাবে প্রয়োগ করা হবে সে বিষয়ে সঠিক ব্যাখ্যা ছিল না। ফলে, একটা নৈরাজ্য চলছিল। নতুন আইনে সব কিছু করা হয়েছে ভেবেচিন্তে। পুরসভাগুলিতে যে পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়, অনেকটা তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই নতুন আইন করা হয়েছে। দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘বিশেষ করে হাওড়া, হুগলি এবং দুই ২৪ পরগনায় যে ভাবে দ্রুত নগরায়ণ হচ্ছে, তাই নতুন আইন করা অপরিহার্য হয়ে উঠেছিল।’’

নতুন আইনে অনুমতি কারা দেবে তা নির্ভর করবে বাড়ির আয়তনের উপর। সব ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট হারে ‘ফি’ দিতে হবে। কেমন সেই ‘ফি’?

দফতর জানিয়েছে, বসবাসের জন্য ছাদযুক্ত পাকাবাড়ি তৈরি বা সম্প্রসারণ করতে চাইলে দিতে হবে প্রতি বর্গফুটের জন্য ৫০ পয়সা করে। বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ওই কাজের জন্য প্রতি বর্গফুটে দিতে হবে ১ টাকা করে। এ ছাড়া, নতুন আইনে ১৮ বর্গমিটারের বেশি আয়তনের খড়, টিন, টালি বা অ্যাসবেসটসের ছাউনি দেওয়া মাটির বাড়ি তৈরি করতে হলেও অনুমতি নিতে হবে। তার জন্য ‘ফি’ ৬০ টাকা। ১৮ বর্গমিটারের বেশি আয়তনের ইটের দেওয়াল দেওয়া খড়, টালি, টিন বা অ্যাসবেসটসের ছাউনির মাটির বাড়ি তৈরির ‘ফি’ ১৫০ টাকা। ওই নির্মাণ বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে হলে ৩০০ টাকা। বসবাসের ক্ষেত্রে মাটির বাড়ি সম্প্রসারণের জন্য ‘ফি’ ১০০ টাকা এবং বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে ২০০ টাকা।

বাড়ির মালিক ‘ফি’ কমানোর জন্য আবেদন করতে পারেন যদি তিনি ছাদে বর্ষার জমা জল মাটির নীচে নিয়ে যাওয়ার যথোপযুক্ত ব্যবস্থা করেন। এ ছাড়া পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদকে বলা হয়েছে, নকশায় শৌচাগারের পরিকল্পনা না থাকলে যেন বাড়ি তৈরির অনুমতি না-দেওয়া হয়। অনুমতি পাওয়ার পরে যদি কেউ নকশার বাইরে গিয়ে বাড়ি তৈরি করেন তা হলে বাড়তি অংশ ভেঙে দেওয়ার সংস্থানও রাখা হয়েছে নতুন আইনে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Panchayet Law House
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE