গোবরডাঙার সঙ্গে আমার নাড়ির যোগ। যে হাসপাতালটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ এবং যা খোলার দাবিতে আজ এলাকাবাসী সরব, আমি সেখানেই জন্মেছিলাম।
গত প্রায় উনিশ বছর অস্ট্রেলিয়াতে থাকলেও বহু পুরনো ছোট্ট ওই হাসপাতালটা এখনও ভুলিনি। মাঝে এক বার গিয়েছিলাম। দেখেছিলাম, আকারে বেশ বড় হয়েছে সেটি। অনেক রকমের পরিষেবা মিলছে। পরে একটা সময় বিদেশে বসেই খবর পেয়েছিলাম, রাজনৈতিক দড়ি টানাটানিতে সেটা এখন বন্ধ। তবে, নাগরিকদের দাবি মেনেই নতুন করে গড়ে তোলার চেষ্টা হচ্ছে। আর তাতেই সম্প্রতি ‘না’ বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
আমাদের বড় গর্বের বিষয়, গোবরডাঙার ঐতিহ্য। লক্ষ মানুষের বাস যে শহরে, সেখানে স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকার আবেদন জানানোটা নাগরিক অধিকার। ন্যায়সঙ্গতও বটে। শুধু গোবরডাঙা নয়, আশপাশের বহু অঞ্চলের মানুষের ভরসাও ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্র। যে কোনও সভ্য দেশের মানুষের তো প্রাথমিক অধিকার—স্বাস্থ্য, পানীয় জল ও শিক্ষা। এই তিনটি মৌলিক অধিকার তো মানুষের প্রাপ্য। আর এই পরিষেবা দেওয়াটাও প্রশাসনের কর্তব্য। রাজনৈতিক মতভেদের জটিলতায় না গিয়ে বলা যায়, এই পরিষেবা দিয়ে প্রশাসনিক কর্তারা নাগরিকদের কোনও ভাবেই কৃতার্থ করছেন না।
বিগত ৬ বছর ধরে আমি ‘সিডনি চিল্ড্রেন্স হসপিটাল নেটওয়ার্ক’-এর সঙ্গে যুক্ত। এই বিষয়ে পড়াশোনা করেছি, করছিও। এ দেশে প্রত্যেক মানুষের ব্যক্তিগত চিকিত্সা পাওয়ার অধিকারকে মর্যাদা দেওয়া হয়। দেওয়া হয় অগ্রাধিকারও। এখানে প্রতিটি এলাকায় ‘ফুললি ইকুইপড’ হাসপাতাল রয়েছে। তারাই প্রাথমিক ভাবে সবার জন্য স্বাস্থ্য পরিষেবা দিয়ে থাকে। দু্র্ঘটনা বা কোনও আশঙ্কাজনক রোগীর ক্ষেত্রে অ্যাম্বুল্যান্সে নিয়ে যাওয়া ঝুঁকির হলে ব্যবস্থা করা হয় হেলিকপ্টারেরও। সরকার এখানে নাগরিকদের জীবনের কথা এতটাই ভাবে!
আমাদের দেশ, রাজ্য আগের থেকে অনেকটা এগিয়েছে। কিন্তু রাজ্যের প্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহী এই শহরটির মানুষ আজও পুরনো ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির চালু হওয়ার অপেক্ষায়। গোটা রাজ্য জুড়ে অনেক মাল্টি-স্পেশ্যালিটি, মাল্টি-ইকুইপড হেল্থ ফেসিলিটি চালু হয়েছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ, যাঁদের ওই সব জায়গায় যাওয়ার সামর্থ নেই, তাঁরা কী করবেন? তাঁরা কি রাতবিরেতে ৩৫ কিলোমিটার পাড়ি দেবেন এক হাজার টাকা গাড়ি ভাড়া দিয়ে? তা-ও অ্যাম্বুল্যান্স বা গাড়ি পাওয়া যাবে কিনা, সে নিশ্চয়তাও নেই। মনে রাখতে হবে, প্রয়োজনীয় প্রাথমিক চিকিত্সা ব্যবস্থার অভাবে শুধুমাত্র ডিহাইড্রেশন বা দু’এক দিনের জ্বরেও কিন্তু মৃত্যু হতে পারে। ইন্ট্রা ভেনাস ফ্লুইডস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সব সময় জেনারেল প্র্যাকটিশনারদের চেম্বারে সুলভ নয়, সুলভ নয় আইভি অ্যান্টিবায়োটিকসও। মধ্যরাতে এমন পরিস্থিতিতে কোথায় যাবেন অসহায় সাধারণ মানুষ? মুখ্যমন্ত্রীকে তাই আমাদের এই হাসপাতালের প্রয়োজনীয়তার কথা বোঝাতে হবে। আশা রাখি, গোবরডাঙাবাসীর আর্জি আরও সরব হবে। তাঁদের অধিকারের দাবি এটা, অন্যায্য দাবি তো নয়!
লেখক: নার্স, সিডনি (অস্ট্রেলিয়া)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy