Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Dengue

জ্বরে ভুগে চলে গেল ছোট্ট মেয়ে

মশা মারতে প্রশাসনের উদ্যোগ নেই কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মাধবপুর গ্রামে ক্ষোভ দেখা গেল। বৃহস্পতিবার সকালে অবশ্য স্থানীয় ধর্মপুকুরিয়া পঞ্চায়েত থেকে ডেঙ্গি সম্পর্কে মাইকে প্রচার হয়েছে।

দিশা বিশ্বাস

দিশা বিশ্বাস

সীমান্ত মৈত্র
বনগাঁ শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৭ ০২:৩৫
Share: Save:

পঞ্চম শ্রেণির এক কিশোরীর ডেঙ্গিতে মৃত্যুর ঘটনার পরেও এলাকায় মশা মারার কোনও ব্যবস্থা হল না প্রশাসনের পক্ষ থেকে।

বনগাঁ ব্লকের মাধবপুর গ্রামের দিশা বিশ্বাস (১১) মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ কল্যাণী মেডিক্যাল কলেজে মারা গিয়েছে। মৃত্যুর শংসাপত্রে কারণ হিসাবে লেখা আছে, ‘ডেঙ্গি শক সিনড্রোম।’

এলাকার মানুষের অভিযোগ, আগে থেকে মশা মারার কাজ শুরু করা হলে হয় তো দিশাকে বাঁচানো যেত। মেয়েটির বাবা পরিতোষ পেশায় রাজমিস্ত্রি। কেরলে থাকেন। পুজোয় বাড়িতে এসেছেন। দিশা একমাত্র সন্তান। এ দিন বাড়িতে কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, ‘‘বনগাঁ মহকুমা হাসপাতাল ও কল্যাণী মেডিক্যাল হাসপাতালের চিকিৎসকদের বারবার বলা সত্ত্বেও তাঁরা মেয়ের সঠিক চিকিৎসা করেননি।’’

বনগাঁ ব্লকের রসুলপুর এলাকাতেও জ্বরে প্রকোপ ছড়িয়েছে। অনেকে হাসপাতালে ভর্তি। এখানকার গোবিন্দ সরকার (৫২) জ্বরে ভুগছিলেন চার দিন ধরে। বুধবার তাঁকে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে আসার পরে মৃত্যু হয়েছে।

মশা মারতে প্রশাসনের উদ্যোগ নেই কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মাধবপুর গ্রামে ক্ষোভ দেখা গেল। বৃহস্পতিবার সকালে অবশ্য স্থানীয় ধর্মপুকুরিয়া পঞ্চায়েত থেকে ডেঙ্গি সম্পর্কে মাইকে প্রচার হয়েছে। গ্রামে ঘুরে দেখা গেল, বেশ কিছু বাড়ির সামনে ডোবা। সেখানে মশার লার্ভা ভেসে বেড়াচ্ছে। চারিদিকে বন-জঙ্গল। কৃষি খেতেও জল জমে রয়েছে।

স্থানীয় খোকন গোলদারের বাড়িতে সামনে বড় ডোবা। সেখানে জলের মধ্যে আবর্জনা ফেলা রয়েছে। সেখানে মশাও রয়েছে। খোকনবাবুর স্ত্রী অমলা গোলদারের প্রশ্ন, ‘‘ডোবায় মশা থাকলেও আমরা কী বা করতে পারি?’’ ডেঙ্গি নিয়ে কোনও সচেতনতা, হেলদোল আছে বলে মনে হল না। স্থানীয় বাসিন্দা প্রৌঢ় কৃষ্ণপদ শীল ও সমীর হাজরা বললেন, ‘‘এখানে মশার উপদ্রব খুব বেশি। অথচ এখানে প্রশাসনের বা পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে আজ পর্যন্ত মশা মারার কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হল না। মশারির মধ্যে বসে ভাত খেতে হচ্ছে।’’

মশা মারার কাজ যে এগোয়নি, তা মেনে নিচ্ছেন স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান সন্তোষ রায়। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের মশা মারার কোনও যন্ত্র নেই। তবে ডেঙ্গি সম্পর্কে প্রচার করা হচ্ছে। বাসিন্দাদের বুঝিয়ে ডোবার মধ্যে কেরোসিন-ডিজেল দেওয়ানো হচ্ছে।’’

শুধু মাধবপুর নয়, বনগাঁ ব্লকের বেশির ভাগ এলাকাতেই মশা মারার কাজ শুরু হয়নি বলে স্থানীয় মানুষজন জানালেন। প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, বনগাঁ ব্লক এলাকায় জ্বর ও ডেঙ্গির তেমন প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েনি বলে স্বাস্থ্য শিবির বা মশা মারার কাজ তেমন হয়নি। কিন্তু ডেঙ্গি যেখানে নতুন নতুন এলাকায় থাবা বসাচ্ছে, সেখানে চুপচাপ হাত গুটিয়ে বসে থাকা তো নির্বুদ্ধিতা, মনে করছেন অনেকেই। স্থানীয় বাসিন্দা তথা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মী অরুণ সরকার বলছিলেন, ‘‘জ্বরে আক্রান্তদের বনগাঁ ও কল্যাণী হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি। অনেকের জ্বর। অথচ এখানে মশা মারার কোনও উদ্যোগ নেই।’’

বনগাঁর বিএমওএইচ মৃগাঙ্ক সাহা রায় অবশ্য বলেন, ‘‘ব্লকে আড়াই মাস ধরে ডেঙ্গি নিয়ে নানা ধরনের কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। মশা মারার জন্য পঞ্চায়েতকে বলা হয়েছে। সেই কাজ আরও জোরদার করা হবে।’’ মহকুমাশাসক কাকলি মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মাধবপুরে স্বাস্থ্য দফতরের একটি দল এ দিন গিয়েছে। ব্লকে বন জঙ্গল সাফাই ও ডেঙ্গি নিয়ে প্রচারের কাজ চলছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Girl Child Dengue Malaria Mosquitoes
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE