Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

টিউশন পড়িয়ে এখন সংসার টানছেন টুম্পা

অর্থলগ্নি সংস্থার চক্করে পড়ে বহু টাকা খুইয়েছেন অনেকে। কেউ আবার নিজেরা এজেন্ট হয়ে বাজার থেকে টাকা তুলেছেন দেদার। নিজেরাও টাকা ঢেলেছেন সংস্থায়। আরও তাড়াতাড়ি আরও বেশি মুনাফার আশায় তাঁদের সকলেরই ক্ষতি হয়েছে প্রচুর। কেউ কেউ ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছেন। কেউ এখনও অথৈ জলে। খোঁজ নিল আনন্দবাজার।এ পাড়া থেকে ও পাড়া, শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত। দিনরাত ছুটছেন তিনি। তা না করে উপায়ও নেই ওই যুবতীর।

সারদা-কাণ্ডের পরে পুরো পরিবারের ভার এসে পড়ে টুম্পার উপরে। ফলে টিউশন বাড়ে। প্রতীকী ছবি।

সারদা-কাণ্ডের পরে পুরো পরিবারের ভার এসে পড়ে টুম্পার উপরে। ফলে টিউশন বাড়ে। প্রতীকী ছবি।

সুপ্রকাশ মণ্ডল
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:১৫
Share: Save:

পাঁচ বছর আগে বেমালুম বদলে গিয়েছিল তাঁর জীবনটা। আর গত এক বছরের বদল আর হিসেব করে উঠতে পারেন না নৈহাটি গরিফার টুম্পা অধিকারী। আসলে সকাল থেকে রাত— তাঁর ফুরসত নেই। শুধু টিউশন আর টিউশন।

এ পাড়া থেকে ও পাড়া, শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত। দিনরাত ছুটছেন তিনি। তা না করে উপায়ও নেই ওই যুবতীর। ঘরে ন’বছরের যমজ ছেলে সোহন ও শ্রেয়ান। তাদের লেখাপড়ার খরচ এবং সংসার সামলে ছুটে চলেছেন টুম্পা। রুটিন একটু এ দিক ও দিক হলেই সংসার অচল হয়ে পড়বে যে। “এখন আমার যদি কিছু হয়, তা হলে ছেলে দুটোর কী হবে কে জানে”— আকাশে তাকিয়ে কিছু যেন খোঁজে টুম্পার দৃষ্টি।

স্বামী সোমনাথ একটি বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থার এজেন্ট ছিলেন। গত বছরের পয়লা মার্চের সকালে মিলেছিল তাঁর ঝুলন্ত দেহ। অবশ্য তার আগে থেকেই এক রকম জীবন্মৃতের মতো বাড়িতে পড়েছিলেন তিনি।

বছর পঁয়ত্রিশের সোমনাথ বিয়ের আগে থেকেই ওই অর্থলগ্নি সংস্থার এজেন্ট ছিলেন। একটি বিখ্যাত বহুজাতিক বিমা কোম্পানির সঙ্গে নাম মিলিয়ে নাম ছিল ওই ভুয়ো অর্থ লগ্নি সংস্থার। বহু মানুষ ওই সংস্থায় লগ্নি করেছিলেন। বারো বছর ধরে ওই সংস্থার এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছিলেন তিনি সোমনাথ।

টুম্পা জানান, প্রায় এক কোটি টাকা বাজার থেকে তুলেছিলেন স্বামী। ২০১৩ সালের এপ্রিলে সারদা-কাণ্ড প্রকাশ্যে আসার পরে ঝাঁপ পড়ে সোমনাথের কোম্পানিতেও। তারপর থেকেই বাড়িতে হামলা শুরু হয় আমানতকারীদের। টুম্পা বলেন, “সংস্থার কর্তাদের হাতের সামনে না পেয়ে এজেন্টের বাড়িতে হামলা অনেক সহজ। সেটাই হত সব সময়ে।”

সে দিনের স্মৃতি হাতড়াতে গিয়ে আজও আতঙ্কিত হয়ে পড়েন টুম্পা। চাপের মুখে অসহায় হয়ে পড়েছিল পুরো পরিবার। তবুও হাল ছেড়ে দেননি তাঁরা। আশা হারাননি সোমনাথও। চেষ্টা অনেক করেছেন। নিজের জমানো টাকা, সম্পত্তি স্ত্রীর গয়না— একে একে সবই বিক্রি হয়। কিন্তু এক কোটি টাকা জোগাড় কি সহজ কথা? টুম্পা বলেন, ‘‘সারদার পরে আশেপাশের অবস্থা কিছুটা স্বাভাবিক হতে অন্যান্য কাজের চেষ্টাও করেছিল ও। কখনও লটারির দোকানে কাজ, কখনও অন্য কোনও ব্যবসার চেষ্টা। কিন্তু কোনওটাই তেমন দাঁড়ায়নি।’’

আমানতকারীদের হুমকি, হেনস্থা বন্ধ হয়নি। শেষ পর্যন্ত হতাশ হয়ে পড়েন সোমনাথ। টুম্পা জানান, বিয়ের পর থেকে তিনি টিউশন দিতেন। কিন্তু তা ছিল নেহাতই শখের। সারদা-কাণ্ডের পরে পুরো পরিবারের ভার এসে পড়ে তাঁর উপরে। ফলে টিউশন বাড়ে। কিন্তু গত বছরের মার্চে পুরো জীবনটাই উলট-পালট হয়ে যায় তাঁর। দিনরাত শুধু টিউশন। সোমনাথের মৃত্যু পরে টাকা চেয়ে টুম্পার উপরে চড়াও হয়েছিলেন আমানতকারীরা। সে সময়ে তিনি কিছুটা ভয়ই পেয়েছিলেন। একে সংসাসের সব দায়, তার উপরে আমানতকারীদের চাপ। টুম্পা বলেন, ‘‘শেষে আমি ওদের স্পষ্ট জানিয়ে দিই। ওই টাকা আমার পক্ষে ফেরত দেওয়া সম্ভব নয়। কোথায় পাব আমি টাকা? কে দেবে? তা ছাড়া, আমার হাতে তো টাকা দেননি ওঁরা।’’

তার পর থেকে আমানতকারীদের তাগাদা বন্ধ হয়েছে। তবে রাস্তাঘাটে আজও তাঁকে কটুক্তি শুনতে হয়— জানালেন টুম্পা। কবে এই পরিস্থিতি কাটবে, জানে না কেউ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Scam Chit Fund Tuition
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE