Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

গাছতলাতে চলছে পঠনপাঠন

এ ভাবে গাছতলায় চলছে বাগদা ব্লকের পুস্তিঘাটা ফকিরচাঁদ জুনিয়র হাইস্কুলের পঠনপাঠন। পড়ুয়া ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বৃষ্টি নামলে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়।

চলছে-ক্লাস: পুস্তিঘাটা ফকিরচাঁদ জুনিয়র হাইস্কুলে। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

চলছে-ক্লাস: পুস্তিঘাটা ফকিরচাঁদ জুনিয়র হাইস্কুলে। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

সীমান্ত মৈত্র
বাগদা শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৭ ০১:২১
Share: Save:

মাটিতে পাতা রয়েছে চট। তার উপর বসে রয়েছে পড়ুয়ারা। সামনে একটি টেবিল রাখা। চেয়ারে বোর্ড। চক হাতে শিক্ষক মশাই দাঁড়িয়ে পড়াচ্ছেন।

এ ভাবে গাছতলায় চলছে বাগদা ব্লকের পুস্তিঘাটা ফকিরচাঁদ জুনিয়র হাইস্কুলের পঠনপাঠন। পড়ুয়া ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বৃষ্টি নামলে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। বর্ষায় স্কুল চত্বরে জলও দাঁড়িয়ে যায়। শীতের সময় উত্তুরে হওয়া বয়। তাতে পড়ুয়াদের খুবই অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয়। আবার গরমের সময় রোদের তাপ সরাসরি গায়ে লাগে। অসুস্থ বোধ করে পড়ুয়ারা। কারণ কোনও ফ্যানের ব্যবস্থা নেই।

প্রশাসন ও স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ও চাহিদা মেনে ২০১২ সালে স্কুলটি অনুমোদন পায়। ২০১৫ সাল থেকে শুরু হয় পঠনপাঠন। স্কুলটি এখন পঞ্চম থেকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত। পড়ুয়ার সংখ্যা একশো জন। স্কুলে গিয়ে দেখা গেল, একটি মাত্র ঘর। সেই ঘরে চলছে সপ্তম শ্রেণির ক্লাস। অন্য একটি শ্রেণির ক্লাস হচ্ছে চারিদিক খোলা টিনের ছাউনির নীচে। আর একটি ক্লাস চলছে গাছ তলায়। স্কুলে রয়েছেন মাত্র দু’জন ‘গেস্ট টিচার।’ তাঁদের বসার কোনও ঘর নেই।

স্কুল সূত্রে জানা গেল, স্কুলের বেশির ভাগ পড়ুয়া দারিদ্র সীমার নীচে বসবাস করা পরিবার থেকে পড়তে আসে। কারও বাবা দিনমজুর কারও আবার খেত মজুরের কাজ করেন। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুবলচন্দ্র বাগচী বলেন, ‘‘ক্লাসঘর না থাকার কারণে অভিভাবকেরা স্কুলে ছেলেমেয়েদের পাঠাতে চান না। আমরা তাঁদের অনুরোধ করে স্কুলে আনি। বলি আপনারা স্কুলে ছেলেমেয়ে না পাঠালে স্কুলটি উঠে যেতে পারে।’’ বিডিও শান্তনু ঘোষ বলেন, ‘‘খোঁজ খবর নিয়ে দ্রুত সমস্যার সমাধন করা হবে।’’

স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে স্কুলে দু’টি ক্লাসরুম তৈরির জন্য সর্বশিক্ষা মিশন থেকে ৮ লক্ষ ৫৭ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। কিন্তু স্থানীয় এক ব্যক্তির মামলা সংক্রান্ত কারণে ওই কাজ আজও শুরু করা যায়নি। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে স্কুলে অষ্টম শ্রেণি চালু হচ্ছে। সুবলচন্দ্রবাবু বলেন, ‘‘অষ্টম শ্রেণি চালুর আগে যদি গ্রামবাসী দেখেন ঘর তৈরির কাজ শুরু হয়নি তাহলে তাঁরা আর স্কুলে ছেলেমেয়েদের পাঠাবেন না। স্কুলে শিক্ষকেরও প্রয়োজন।’’

স্থানীয় বাসিন্দা তথা প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য বিশ্বনাথ মণ্ডল বলেন, ‘‘সকলের কাছে আমাদের অনুরোধ, স্কুলের ক্লাসরুমের জন্য বরাদ্দ হওয়া টাকা যেন ফিরে না যায়।’’ বাসিন্দারা জানান, এখান থেকে স্থানীয় সিন্দ্রানী সাবিত্রী উচ্চ বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ৫ কিলোমিটার। সেখানে যেতে আসতে দৈনিক খরচ ২০ টাকা। যা গরিব পরিবারগুলির পক্ষে খরচ করা সম্ভব নয়।

সিন্দ্রানী গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান স্বপ্না বিশ্বাস বলছিলেন, ‘‘পঞ্চায়েত থেকে পদক্ষেপ করা হয়েছে যাতে ওই স্কুলে দ্রুত শ্রেণিকক্ষ তৈরি হয়। কিন্তু আইনি জটিলতার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। ওই বিষয় নিয়ে আলোচনাও করা হয়েছে। বিডিওকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে।’’ তবে পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে চেষ্টা চলছে বলে তিনি জানান। স্থানীয় বিধায়ক দুলাল বর বলেন, ‘‘স্কুলে যাতে দ্রুত ভবন তৈরি হয় তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Education Bagda বাগদা
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE