Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

গতি আসবে, ভরসায় বাজার

অর্থনীতিতে মন্দার ছায়া। গাড়ি-বাড়ির মতো বড় ব্যবসায় প্রভাব স্পষ্ট। দৈনন্দিন চাহিদার বিস্কুট বিক্রিও কমছে। বাঙালির সব থেকে বড় উৎসব দুর্গাপুজোতেও কি সেই প্রভাব? খোঁজ নিল আনন্দবাজার

বাজার-ফাঁকা:  কাঁচরাপাড়ায়। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

বাজার-ফাঁকা: কাঁচরাপাড়ায়। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

সুপ্রকাশ মণ্ডল
শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:০০
Share: Save:

হাঁটু উচ্চতার দোকানের সামনে সারি সারি কাঠ-প্লাস্টিকের টুল পাতা। সবই বিলকুল ফাঁকা। ক্রেতার দেখা নেই। ঝিমোচ্ছেন দোকানি। দু’একজনকে আসতে দেখলেই হাঁক পাড়ছেন বৃদ্ধ কর্মচারী।

দিন কয়েক বাদে বিশ্বকর্মা পুজো। সামনে দুর্গাপুজো, কালীপুজো। ভরা কেনাকাটার মরসুমে কাঁচরাপাড়া হকার্স কর্নারের দোকানিদের মন ভাল নেই। গাড়ি-বাড়ির মতো মহার্ঘ পণ্যের ব্যাপারী তাঁরা নন, তবুও এ বারের বিক্রিবাট্টায় মন্দার মেঘ দেখতে পাচ্ছেন সকলেই।

পুজোর দিন যত এগিয়ে আসছে, ততই অনিশ্চয়তা বাড়ছে ব্যবসায়ীদের।

উত্তর শহরতলির বড় বাজার হিসাবে কাঁচরাপাড়ার নামডাক আছে। উত্তর ২৪ পরগনা তো বটেই, খদ্দেররা আসেন নদিয়া, হুগলির বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। পণ্যের বিপুল সম্ভারই তার কারণ। শাড়ি, রেডিমেড পোশাক, গয়না, জুতো, কসমেটিক্সের ভরা বাজার। ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, শপিং মলও আছে। বিভিন্ন নামী সংস্থার শো-রুম মিলবে এখানে। বড় দোকানগুলিতে ভিড় কিছুটা হলেও এ বার ছোট ও মাঝারি দোকানিদের অবস্থা তেমন সুবিধের নয় বলে জানালেন অনেকেই।

হকার্স কর্নারে শাড়ি এবং রেডিমেড পোশাকের দোকান চালান তারকনাথ সরকার। বললেন, “অন্যান্যবার এই সময়ে আমাদের নাওয়া-খাওয়ার সময় থাকে না। কিন্তু এ বার বাজার কেমন যেন থম মেরে রয়েছে। রোজই মনে হচ্ছে, আজ ভাল বিক্রি হবে। এই আশায় একটা একটা করে দিন চলে যাচ্ছে।” পাশের বাজার আনন্দবাজারেরও অবস্থা একই রকম। দুশ্চিন্তার ছায়া সেখানেও। বিক্রিবাট্টা জমেনি বলে জানালেন অনেকেই।

আনন্দবাজারে পাঞ্জাবির দোকান চালান জয়দীপ বাগচী। বুধবার দুপুরে তিনি বসেছিলেন গালে হাত দিয়ে। পাশে ঝিমোচ্ছিলেন এক জন। জয়দীপ বলেন, “আমাদের এখানে পুজোর সময়ে দু’মাস ধরে ব্যবসা চলে। এ বার এখনও পর্যন্ত বেচাকেনা বেশ কম। মহরমের ছুটিতে কিছুটা ব্যবসা জমেছিল। তবে তা গতবারের অর্ধেকও নয়।”

জয়দীপের মতো একই কথা বলছেন অন্যান্য ব্যবসায়ীরাও। কাঁচরাপাড়া স্টেশন-লাগোয়া নিউ বিবেকানন্দ মার্কেট চার মাস আগে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল। সেই বাজার আবার নতুন করে তৈরি হয়েছে। কিন্তু সেখানেও এ বার পুজোর বাজারের ভিড়ের চেনা ছবি চোখে পড়ছে না। তবে কি সত্যিই মন্দার ছায়া?

অনেকের অভিজ্ঞতা তেমনই। আবার স্টেশন রোড, গাঁধী মোড়ের আশপাশের বড় দোকানে ভিড় চোখে পড়ছে। ব্যবসায়ীরাও জানালেন পুজোর বাজার ঠিকঠাকই চলছে। অনেকের মতে, বিশ্বকর্মা পুজো কাটলে বিক্রি বাড়বে। কিছু ব্যবসায়ীর মতে, সপ্তাহ দু’য়েক আগে বিক্রির যা হার ছিল, তা কিছুটা বেড়েছে। শেষ মুহূর্তে আরও বাড়বে বলেই আশা। হকার্স কর্নারের এক ব্যবসায়ী বলেন, “আগেও অনেকবার এমনটা হয়েছে। প্রথম দিকে বিক্রি একেবারেই হয়নি। শেষ বেলায় পুষিয়ে গিয়েছে।”

তবে একটা বিষয়ে খটকা কাটছে না ব্যবসায়ীদের। পুজো হবে অক্টোবরের প্রথমে। সাধারণত চাকুরিজীবীদের হাতে বেতনের টাকা এলেই কেনাকাটার ধুম পড়ে যায়। এ বার মাসের ১০ তারিখ পার হয়ে গেলেও সেই বিক্রি দেখেননি তাঁরাও। হকার্স কর্নার, আনন্দবাজার, নিউ বিবেকানন্দ মার্কেট— সর্বত্রই প্রতি দোকানে পুজোয় গড়ে দিনে ৫ লক্ষ টাকার বিক্রি হয়। এ বার কিন্তু বিক্রি কিছুটা পড়তির দিকেই।

হকার্স কর্নারের ব্যবসায়ী সমিতির প্রাক্তন সভাপতি তপন দেবনাথ অবশ্য বলছেন, “বিক্রি কিছুটা কম হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু এমন অবস্থা থাকবে না। আমি চল্লিশ বছর ধরে ব্যবসা করছি। বিক্রির ছবি একটু একটু করে ভালর দিকেই যাচ্ছে।”

কিছুটা বিক্রি যে কমছে, সে জন্য তপন দায়ী করছেন, নতুন গজিয়ে ওঠা শপিং মল, ডিপার্টমেন্টাল স্টোরকে। তাঁর মতে, আধুনিক প্রজন্ম সেখানে কেনাকাটা করতেই বেশি স্বচ্ছন্দ। তা ছাড়া, অনলাইন কেনাকাটার লোকজনও কম নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

North @4 Parganas Puha Festival Puja Shopping
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE