ভাসমান: ফানুস ওড়াচ্ছেন বাসিন্দারা। ছবি: শান্তনু হালদার।
বাতাসে বারুদের গন্ধ নেই। কালো ধোঁয়া নেই। মাঝ রাতে বিকট শব্দে কারও ঘুম ভেঙে গেল না। রাতে বন্ধ করে রাখতে হল না দরজা-জানলা। নির্বিঘ্নে ঘুমোলেন শহরের বড় অংশের মানুষ। এক কথায়, বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীপুজোর রাতে হাবরা শহরকে যেন একটু অচেনাই মনে হল।
সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত হাবরা শহর ঘুরে দেখা গেল, শব্দবাজির দাপটের বদলে আকাশ জুড়ে শুধু উড়ছে ফানুস। গোটা আকাশটা রঙিন হয়ে উঠেছিল।
তবে শব্দবাজি একবারে ফাটেনি তা নয়। অন্য বছরের তুলনায় অবশ্য খুবই কম। পুলিশের নজর এড়িয়ে রাতে যা শব্দবাজি ফেটেছে, তাতে সাধারণ মানুষের খুব দুর্ভোগ হয়নি বলেই জানালেন অনেকে। বহু মানুষ এ বার রাতে লক্ষ্মীপুজোর নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে বেরিয়েছিলেন। পথে কোথাও কানে আঙুল দিতে হয়নি বলে তাঁরা জানালেন।
হিজলপুকুরের বাসিন্দা পারমিতা ঘোষ, দক্ষিণ হাবরার বাসিন্দা মালা বসু কর বলছিলেন, ‘‘অন্য বছরের তুলনায় এ বার শব্দবাজি ফেটেছে খুবই কম। কোনও রকম আতঙ্ক ছাড়া রাতে নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে গিয়েছি। শব্দবাজির বদলে এ বার ফানুস দেখা দিয়েছে আকাশে। হাবরায় এ এক নতুন সংস্কৃতি।’’ পরিবর্তিত পরিস্থিতির জন্য প্রশংসা কুড়িয়েছে পুলিশ, পুরসভা। কয়েক বছর আগেও লক্ষ্মীপুজোর রাতে রাস্তায় বেরিয়ে বাড়ি ফিরতে কালঘাম ছুটে গিয়েছিল জানালেন মালাদেবী। মিষ্টি ব্যবসায়ী শঙ্কর ঘোষ, বিজেপি নেতা বিপ্লব হালদারও মানতে বাধ্য হলেন, এ বার সত্যিই শব্দবাজির দাপট ছিল না। মানুষ অন্য দিনের মতো রাতে রাস্তায় যাতায়াত করেছেন। শব্দবাজির তাণ্ডব রুখতে এ বার আগে ভাগে পথে নেমেছিল পুলিশ ও পুরসভা। অটোয় মাইক বেঁধে প্রচার চলেছে। বলা হয়েছিল, শব্দবাজি বিক্রি ও কেনা দু’টোই আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। আইসি মৈনাক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফোন নম্বর দিয়ে প্রচার করা হয়েছিল, কেউ শব্দবাজি বিক্রি করলে বা কিনলে পুলিশকে খবর দিতে। যাঁরা খবর দেবেন, তাঁদের পরিচয় গোপন রাখা হবে বলেও পুলিশের তরফে আশ্বাস মেলে।
পুলিশ জানায়, ওই প্রচারে কাজও হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আইসি-র কাছে সাধারণ মানুষের প্রচুর ফোন এসেছে। সেই সূত্র ধরে পুলিশ বিভিন্ন এলাকায় হানা দিয়ে প্রায় ৫০ কেজি শব্দবাজি আটক করেছে। দমকলকে সঙ্গে নিয়ে ওই অভিযান চালায় পুলিশ। বাজি বিক্রি ও ফাটানোর অভিযোগে মোট ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের সাতটি গাড়ি ও ১২টি মোটরবাইক গোটা এলাকায় রাতভর টহল দিয়েছে।
তবে পুলিশের কাজটা সহজ করে দিয়েছে মানুষের সচেতনতা। পুরপ্রধান নীলিমেশ দাস বলেন, ‘‘পুরসভা ও পুলিশের প্রচার, ধরপাকড় ও সাধারণ মানুষও সচেতন হয়েছেন বলে শব্দবাজির দাপট কমানো গিয়েছে। এ বার হয় তো শহরের বদনাম ঘুচবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy