তাড়াহুড়ো: ‘ব্রাত্য’ সাবওয়ে। সোদপুর স্টেশনে ট্রেনের সামনে দিয়েই চলছে অবাধে লাইন পারাপার। নিজস্ব চিত্র
অফিসের ব্যস্ত সময়ের লোকাল ট্রেন। স্টেশনে থামার পরেই যাত্রীদের হুড়োহুড়ির চেনা ছবি। তার পরে ট্রেনের সামনে দিয়েই লাইন টপকে পারাপার। আচমকাই প্ল্যাটফর্ম থেকে লাফ মারলেন এক তরুণী। লাইনে পড়ে প্রায় হড়কে গেলেন তিনি। তত ক্ষণে ট্রেন প্রায় তাঁর ঘাড়ের কাছে। কোনও মতে হামাগুড়ি দিয়ে লাইন টপকে প্রাণে বাঁচলেন তিনি।
ঘটনাস্থল শিয়ালদহ মেন লাইনের অন্যতম ব্যস্ত স্টেশন সোদপুর। প্ল্যাটফর্ম বদলের জন্য সেখানে ফুটব্রিজ রয়েছে। কিন্তু সিঁড়ি ভেঙে উপরে ওঠার ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে অনেকেরই। কিন্তু যাঁদের সমস্যা নেই, ফুটব্রিজ ব্যবহারে অনীহা তাঁদেরও। দীর্ঘদিনের দাবি ছিল, সোদপুরে সাবওয়ে চালু করুক রেল। মাসখানেক হল তা চালুও হয়েছে।
তার পরেও অবশ্য ঝুঁকি নিয়ে লাইন পারাপার সমানে চলছে। এমনকি, চলন্ত ট্রেনের সামনে দিয়েও লাইন পেরোতে দ্বিধা করছেন না যাত্রীরা। অথচ গত কয়েক মাসে লাইন পারাপার করতে গিয়ে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে প্রাণ গিয়েছে বেশ কয়েক জনের। সর্বশেষ ঘটনাটি দিন কুড়ি আগের। রেল জানিয়েছে, ফুটব্রিজ এবং সাবওয়ে ব্যবহারের জন্য বারবার মাইকে ঘোষণা করা হয়। তার পরেও যাত্রীদের একাংশ লাইন পেরিয়েই যাতায়াত করছেন।
রোজ সকালে সোদপুর স্টেশন থেকে ট্রেন ধরেন চাকদহের এক স্কুলের শিক্ষক দিবাকর বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘‘গত ১০ বছরে চোখের সামনে অনেকগুলো দুর্ঘটনা ঘটতে দেখেছি। বেশির ভাগই লাইন পারাপার করতে গিয়ে। তা-ও মানুষ সচেতন হচ্ছেন না।’’ আর এক নিত্যযাত্রী অসীম সাহা জানান, অনেক যাত্রী মনে করেন লাইন পেরিয়ে গেলে সময় বাঁচে। ওই যাত্রীরা এটাকে অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছেন। এঁরা বেশির ভাগই স্কুল-কলেজের পড়ুয়া বলে জানান অসীমবাবু। তবে লাইন পারাপার সব বয়সের মানুষেরাই করেন বলে জানালেন স্টেশনের ফেরিওয়ালারা।
মঙ্গলবার সকালে আপ কৃষ্ণনগর-শিয়ালদহ লোকাল থামতেই একের পর এক যাত্রী ট্রেনের সামনে দিয়েই লাইন পারাপার করতে শুরু করেন। সেই দলেই ছিলেন এক মাঝবয়সী ব্যক্তি। সঙ্গে ছিল বড় দু’টি ব্যাগ। ট্রেন ছাড়ার মুহূর্তে তিনি লাইনে পা দেওয়ার চেষ্টা করতেই আটকে দেন দুই আরপিএফ জওয়ান। তাঁকে নিয়ে গিয়ে বসানো হয় অফিসে। ওই যাত্রীকে দিয়ে লিখিয়ে নেওয়া হয়, আর কোনও দিন তিনি লাইন পারাপার করবেন না।
সাবওয়ে চালু হওয়ার পরেও কেন তা ব্যবহার করছেন না যাত্রীরা? যে তরুণী লাইনে নেমে পা হড়কে পড়ে গিয়েছিলেন, তিনি বলেন, ‘‘আসলে সাবওয়ে ব্যবহার করাই উচিত। আমার তাড়া ছিল বলে লাইন পার হচ্ছিলাম। আর কোনও দিন করব না।’’ এক কলেজ ছাত্র ইয়ারফোন গুঁজে ট্রেনের সামনে দিয়েই লাইন পার হচ্ছিলেন। আরপিএফ জওয়ানেরা তাঁকেও আটকে দেন। মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পান তিনি। ইয়ারফোনটি অবশ্য ফেরত পাননি তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy