ওষুধ নেওয়ার লাইন। নিজস্ব চিত্র
পেল্লায় দেখনদারি কাউন্টার। ভিতরে বসে একা নার্স। বাইরে লম্বা লাইন। ডান হাতটা ব্যথা ব্যথা করছে... মুখের কথা খসতে না খসতেই নার্স তিনটে ট্যাবলেটের পাতা এগিয়ে দিলেন। নির্দেশ মিলল, ‘‘সকাল-বিকেল-রাত খাবার পরে একটা করে খেয়ে নেবে।’’
আরও মনে হল কিছু বলার আছে রোগীর। পিছন থেকে লোকজনের তাড়া খেয়ে তিনি কাউন্টার ছাড়লেন। ভিড় সামলানোর ফাঁকে নার্স শ্রাবণী সেন বললেন, ‘‘একা হাতে রোগী সামলাতে গিয়ে হিমসিম খেতে হচ্ছে। কিন্তু তা-ও ছ’দিন খোলা থাকে হাসপাতাল।’’ শ্রাবণীদেবীর কথায়, ‘‘একজন চিকিৎসক থাকলে কত ভাল হত। কত মানুষ উপকৃত হতেন!’’
মগরাহাটের মোহনপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র অবশ্য গত কয়েক বছর ধরে চিকিৎসক ও কর্মীর অভাবে এ ভাবেই চলছে। চলছে নার্স শ্রাবণীদেবীর ভরসাতেই।
মগরাহাট ২ ব্লকের মোহনপুর পঞ্চায়েতে বামজমানায় ওই এলাকার মোহনপুর গ্রামে প্রায় ২০ বিঘা জমির উপরে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি নির্মাণ হয়েছিল। স্বাস্থ্যকর্মীদের থাকার জন্য তৈরি হয়েছিল আবাসও। এলাকার মানুষের মনে আশা জেগেছিল। তাঁরা ভেবেছিলেন, এ বার থেকে বুঝি রাত-বিরেতে রোগী নিয়ে দূরের হাসপাতালে ছুটতে হবে না।
প্রথম দিকে কয়েক বছর স্বাভাবিক চলছিল সব কিছু। ১৯৯৫ সালের ১৮ ডিসেম্বর ১০ শয্যার হাসপাতাল হিসাবে এটিকে উন্নীত করা হবে বলে ঘোষণা হয়। সেই মতো নতুন করে আরও পরিকাঠামোর উন্নয়ন হয়েছিল। কিন্তু শুরুর কয়েক বছর পর থেকে যত দিন এগোচ্ছে, হাসপাতালের পরিকাঠামো ক্রমশ করুণ হচ্ছে বলে জানালেন স্থানীয় মানুষজন।
আপাতত স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিষেবার দায়িত্বে রয়েছেন একজন ফার্মাসিস্ট, একজন নার্স ও একজন অস্থায়ী সাফাই কর্মী। চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীর অভাব থাকলেও অবশ্য খালি পড়ে নেই আবাসনগুলি। এলাকার বাসিন্দারা সে সব দখল নিয়ে বসে আছে। একটি আবাসনের সামনে আবার সকালে মাংসের দোকান বসে বলেও জানালেন অনেকে।
বছরের পর বছর ধরে চিকিৎসক না থাকায় রোগী দেখার দায়িত্বে নার্স বা ফার্মাসিস্টের উপরেই বর্তেছে। যে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এক সময়ে দিনে দেড়শো-দু’শো লোকের ভিড় হত, সেখানে এখন সংখ্যাটা দিনে একশো ছাড়ায় না। সামান্য ‘বাড়াবাড়ি’ দেখলেই রোগীকে নিয়ে যেতে বলা হয় প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরের মগরাহাট গ্রামীণ হাসপাতাল বা ৪০ কিলোমিটার দূরের ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালে।
স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পানীয় জলের অভাব তীব্র। কয়েক বছর ধরে নলকূপটি অকেজো হয়ে পড়ে আছে। প্রায় ১ কিলোমিটার দূরে যেতে হয় এক গ্লাস জল খেতে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কোনও সীমানা প্রাচীর নেই। ফলে সন্ধে নামলেই দুষ্কৃতীদের আনাগোনা বাড়ে বলে অভিযোগ। মদের আসর বসে বলেও জানালেন স্থানীয় মানুষজন। সকালে হাসপাতাল খোলার সময়ে পড়ে থাকা মদের বোতল, চিপসের প্যাকেট তুলে ফেলতে হয়। জলসঙ্কটের জন্য শৌচাগার ব্যবহার করা যায় না।
মগরাহাটের বিএমওএইচ মহম্মদ গৌসুল আলম বলেন, ‘‘একজন ডাক্তার নিয়োগের জন্য চেষ্টা করছি। জেলা স্বাস্থ্যদফতরে জানিয়েছি। বাকি সমস্যাগুলি সমাধান করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy