Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

নড়বড়ে রেলিং সেতুতে

সেতুর দু’পাশে সিমেন্টের সরু গাঁথনি। তা-ও আবার কিছু কিছু জায়গায় ভাঙা। পলেস্তারা খসে পড়ছে।  বেরিয়ে এসেছে জং ধরা লোহার রড। রেলিংয়ের মাঝে সিমেন্টের পিলারেও ফাটল। ভাঙা দু’টি পিলার লোহার পাত দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। সেতুর শরীরে বট-অশ্বত্থ গজিয়েছে।  

 আশঙ্কা: রেলিং ভেঙে গাড়ি না উল্টোয়। ইনসেটে, ভাঙাচোরা রেলিং। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

আশঙ্কা: রেলিং ভেঙে গাড়ি না উল্টোয়। ইনসেটে, ভাঙাচোরা রেলিং। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

সীমান্ত মৈত্র
গাইঘাটা শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:২৬
Share: Save:

সেতুর দু’পাশে সিমেন্টের সরু গাঁথনি। তা-ও আবার কিছু কিছু জায়গায় ভাঙা। পলেস্তারা খসে পড়ছে। বেরিয়ে এসেছে জং ধরা লোহার রড। রেলিংয়ের মাঝে সিমেন্টের পিলারেও ফাটল। ভাঙা দু’টি পিলার লোহার পাত দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। সেতুর শরীরে বট-অশ্বত্থ গজিয়েছে।

সব মিলিয়ে এমনই বিপজ্জনক অবস্থা যশোর রোডের উপরে গাইঘাটা সেতুর। সেতুর নীচে রয়েছে যমুনা নদী। স্থানীয় বাসিন্দাদের আশঙ্কা, দ্রুত সেতুর রেলিং শক্তপোক্ত ভাবে তৈরি করা না হলে এবং সেতুর সংস্কার না হলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কোনও যান চালক যদি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রেলিংয়ে ধাক্কা মারেন, তা হলে গাড়ি নির্ঘাত পড়বে নদীতে।

১৯৫০ সাল নাগাদ ‘গাইঘাটা পুল’ নামে সেতুটি তৈরি হয়। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ না রাজ্য পূর্ত দফতর — কারা সেতুটি তৈরি করেছিল, তা কোনও দফতরই নির্দিষ্ট ভাবে জানাতে পারেনি। তবে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার অন্যতম সেতু এটি। সড়ক পথে যশোর রোড ধরে বনগাঁ মহকুমার মানুষকে জেলা সদর বারাসত বা কলকাতায় যেতে হলে ওই সেতুটি পেরোতেই হয়।

সেতুটি ভারত-বাংলাদেশের বাণিজ্যের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার ট্রাক ওই সেতু পেরিয়ে দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর পেট্রাপোলে যাতায়াত করে। কোনও কারণে সেতু ভেঙে পড়লে বা যান চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে পড়লে ট্রাকের চলাচল থমকে যাবে। তা ছাড়া, দু’দেশের মধ্যে যাতায়াতই থমকে যাবে বহু মানুষের। বনগাঁ, বাগদা, গোপালনগর, গাইঘাটার অসুস্থ রোগীদের অ্যাম্বুল্যান্সে করে কলকাতা, বারাসতের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সে-ও এই পথেই।

মাঝেরহাটের ঘটনার পরে সেতু নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে মানুষের মনে। স্থানীয় বাসিন্দা শচীন সরকার জানালেন, কয়েক বছর আগে একবার রেলিং মেরামত করা হয়েছিল। ফের তা খারাপ হয়ে গিয়েছে। শুধু মেরামত করলে হবে না। নতুন করে তা তৈরি করতে হবে। রেলিংয়ের পিলারও সরে গিয়েছে বলে জানালেন তিনি। নেপাল দেবনাথ নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘‘সেতুর অবস্থা খুবই নড়বড়ে। ভারী ট্রাক সেতুতে উঠলে পুরোটাই দুলে ওঠে।’’ এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, রেলিংয়ের পাশাপাশি আরও কিছু সমস্যা রয়েছে। সেতুর উপর সড়কের একাংশ বসে গিয়েছে। রাস্তায় চিড় ধরেছে। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ অবশ্য দাবি করেছেন, ভয়ের কিছু নেই। রেলিং ছাড়া সেতুটির বড় কোনও সমস্যা নেই। নতুন করে রেলিং তৈরির জন্য পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। সেতুটি ভাল করে পরীক্ষা করা হয়েছে। নতুন ও উন্নতমানের রেলিং তৈরি হবে। কারণে যানবাহন রেলিংয়ে ধাক্কা খেলেও পড়ে যাবে না। ওই কাজ করার সময়ে ছোটখাটো মেরামতিও করা হবে। সড়ক কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গিয়েছে, কেন্দ্রের মিনিস্ট্রি অব রোড অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট দফতরের তরফে বছরে দু’বার করে সেতুটির ‘ফিজিক্যাল অডিট’ করা হয়। শেষবার করা হয়েছে মঙ্গলবার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bridge Construction Yamuna River
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE