প্রতীকী ছবি
সংক্রমণ রোগীর জন্য অ্যাম্বুল্যান্স এখনও চালু করা গেল না বনগাঁ সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে। ফলে, ফের বিপাকে পড়লেন এক রোগী।
রবিবার সন্ধ্যায় বাগদা ব্লক গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে এক যুবককে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, কর্মসূত্রে যুবক ভিনরাজ্যে ছিলেন। দিন কয়েক আগে বাড়ি ফিরেছেন। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, তাঁর জ্বর, সর্দিকাশি রয়েছে। শারীরিক পরীক্ষার জন্য বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয় তাঁকে।
রবিবার সন্ধ্যায় তাঁকে রেফার করার পরে রোগীর পরিবার অ্যাম্বুল্যান্স জোগাড় করতে পারেননি। কারণ, হাসপাতালে সংক্রামক রোগীদের জন্য সরকারি কোনও অ্যাম্বুল্যান্স নেই। হাসপাতালে চত্বরে থাকা বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্সগুলি সংক্রমক রোগের রোগীদের নিয়ে যাওয়ার উপযুক্ত নয়। ফলে ওই সব অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরা যুবককে নিয়ে যেতে রাজি হননি। খবর পেয়ে বনগাঁর প্রাক্তন বিধায়ক গোপাল শেঠ হাসপাতাল যান। তিনি বনগাঁর প্রাক্তন সাংসদ মমতা ঠাকুরকে ফোনে সমস্যার কথা জানান। মমতা ভেন্টিলেশন পরিষেবা থাকা সংক্রামক রোগের অ্যাম্বুল্যান্স পাঠান ঠাকুরনগর থেকে। পৃথক চালকের ব্যবস্থা করেন গোপাল। ওই অ্যাম্বুল্যান্সটি মমতা সাংসদ থাকাকালীন তাঁর সাংসদ তহবিলের টাকায় স্থানীয় একটি পঞ্চায়েতকে দিয়েছিলেন।
সব মিলিয়ে কয়েক ঘণ্টা পরে ঠাকুরনগর থেকে অ্যাম্বুল্যান্স আসে। যুবককে রাত ১১টা নাগাদ বেলেঘাটার উদ্দেশে রওনা করিয়ে দেওয়া হয়।
সম্প্রতি বনগাঁর বাসিন্দা এক বৃদ্ধকে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করেছিলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তিনি অ্যাম্বুল্যান্স জোগাড় করতে সমস্যায় পড়েছিলেন। ২১ ঘণ্টা পরে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের দিকে রওনা করানো যায় তাঁকে। ওই ঘটনার পরে হাসপাতালে জরুরি ভিত্তিতে সংক্রামক রোগের জন্য অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা চালু করার দাবি উঠেছিল। কাজের কাজ যে কিছুই হয়নি, রবিবারের রাতের ঘটনা তা ফের প্রকাশ্যে নিয়ে এল। হাসপাতাল সুপার শঙ্করপ্রসাদ মাহাতো বলেন, ‘‘রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কাছে সংক্রামক রোগীদের জন্য অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করার আবেদন করা হয়েছে। এখনও পাওয়া যায়নি।’’
বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সহ চেয়ারম্যান তথা মহকুমাশাসক কাকলি মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা খোঁজ করছি, সরকারি অনুমতি থাকা অ্যাম্বুল্যান্সগুলির মধ্যে কোনওটা সংক্রামক রোগীকে নিয়ে যাওয়ার উপযুক্ত কিনা। বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, তাঁরা কোন ধরনের রোগী নিয়ে যেতে পারেন। একটা ডেটা ব্যাঙ্ক তৈরি করা হয়েছে। গোটা বিষয়টি জেলাশাসককে জানানো হয়েছে।’’ গোপাল বলেন, ‘‘পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের কাছে ওই বিশেষ অ্যাম্বুল্যান্স চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।’’
বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের বক্তব্য, ‘‘আমাদের অ্যাম্বুল্যান্সগুলিতে সংক্রামক রোগে আক্রান্ত কাউকে নিয়ে যাওয়ার পরিকাঠামো নেই। স্বাভাবিক ভাবেই ওই ধরনের রোগী আমরা নিয়ে যেতে পারছি না।’’ চালকদের কথায়, ‘‘এ ধরনের রোগীকে নিয়ে যেতে হলে চালক ও রোগীর মধ্যে সম্পূর্ণ আলাদ বসার ব্যবস্থা, ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা থাকা জরুরি। আমাদের অ্যাম্বুল্যান্সগুলিতে সেই পরিকাঠামো নেই।’’ বনগাঁর পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্য বলেন, ‘‘বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরা রোগী নিয়ে যেতে প্রস্তুত। কিন্তু হাসপাতাল থেকে তাঁদের সুরক্ষার জন্য মাস্ক, গ্লাভস, হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার বা অন্য সতর্কতামূলক কোনও ব্যবস্থা করা হচ্ছে না।’’ রোজই রোগের চাপ বাড়ছে হাসপাতালে। বাসিন্দারা চাইছেন, দ্রুত বিশেষ অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করা না গেলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নেবে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy