এখান থেকেই ঝাড়াই-বাছাই করা হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র।
সাধারণ বর্জ্যের সঙ্গে মিশে রয়েছে কোভিড বর্জ্য। সেই কোভিড বর্জ্য সরিয়ে সাধারণ প্লাস্টিকের বোতল, কাগজের বাক্স বাছাই করা হচ্ছে। গ্রামের মহিলারা কোনওরকম সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়াই দিনের পর দিন করে চলেছেন এই কাজ। বর্জ্য ঝাড়াই বাছাইয়ের সময় ব্যবহৃত পিপিই কিট, মাস্ক, গ্লাভসের টুকরো ছড়িয়েও পড়ছে আশেপাশের এলাকায়।
গত তিন-চার মাস ধরে ভাঙড় ২ ব্লকের নতুনহাট বাজার, পাওয়ার গ্রিড সংলগ্ন এলাকা এবং পার্শ্ববর্তী রাজারহাট থানার চাঁপাগাছি হাইস্কুল সংলগ্ন এলাকায় এই ধরনের কাজ চলছে। এই কাজে শাসক দলের নেতাদের একাংশ ও পুলিশ, প্রশাসনের মদত রয়েছে বলেও অভিযোগ। সম্প্রতি নতুনহাট, পাওয়ার গ্রিড এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, ডাঁই করে রাখা রয়েছে সাধারণ বর্জ্যের সঙ্গে মিশে রয়েছে ব্যবহৃত পিপিই কিট, মাস্ক, গ্লাভস, ফেস শিল্ড সহ বিভিন্ন ধরনের কোভিড বর্জ্য। আশপাশের গ্রামের মহিলারা সেই বর্জ্য বাছাই করছেন। পোলেরহাট ২ পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা আলেয়া বিবি, মরিয়ম বিবিরা জানান, সকাল ৭টা থেকে বেলা ৩ টে পর্যন্ত এই কাজ করে ২৫০ টাকা মজুরি মেলে। সংক্রমণের ঝুঁকি থাকলেও পেটের টানে করতেই হয়।
রাজারহাট থানার বিষ্ণুপুর এলাকার বাসিন্দা দিলীপ ঘোষ নামে এক ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে এই ব্যবসা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ। এলাকার লোকজনকে কাজে লাগিয়ে তিনি কোভিড বর্জ্য থেকে সাধারণ বর্জ্য, প্লাস্টিক বোতল, টিস্যু পেপার, কাগজের বাক্স-সহ অন্যান্য জিনিস আলাদা করে তা কেজি দরে অন্যত্র বিক্রি করছেন। স্থানীয় সূত্রের খবর, আগে তিনি কলকাতা বিমানবন্দর সংলগ্ন ১ নম্বর সাপুই পাড়াতে এই ব্যবসা করতেন। ওই এলাকার মানুষের আপত্তিতে তিনি ব্যবসা গুটিয়ে ভাঙড়ের এই এলাকায় চলে আসেন। সাধারণ বর্জ্যের সঙ্গে কিছু ক্ষেত্রে পিপিই কিট, মাস্ক, গ্লাভস সহ অন্যান্য জিনিস চলে আসছে বলে স্বীকার করেন নেন দিলীপ। তাঁর দাবি, কোভিড বর্জ্যগুলি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। তবে এই কাজ কতটা নিয়ম মেনে করা হচ্ছে সে বিষয়ে তিনি কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি।
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, কোভিড সুরক্ষায় ব্যবহৃত পিপিই কিট, মাস্ক, গ্লাভস থেকে মারাত্মকভাবে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। যে এলাকায় এই ধরনের কাজ করা হচ্ছে সেই এলাকায়ও করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা থাকছে। ভাঙড় ২ ব্লকের স্বাস্থ্য আধিকারিক হিরণ্ময় বসু বলেন, “এটা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। এর থেকে শুধু ওই মহিলারাই নন, এলাকার সাধারণ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন।”
ভাঙড় ২ ব্লকের বিডিও কার্তিক চন্দ্র রায় বলেন, “এমন একটি বিষয় আমাদের নজরে এসেছে। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
ভাঙড়ের জমি কমিটির সদস্য মির্জা হাসান বলেন, “শাসকদলের মদতে এই ধরনের ব্যবসা চলছে। ওরা মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে চাইছে। অবিলম্বে এই কাজ বন্ধ করা না হলে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।” পোলেরহাট ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান হাকিমুল ইসলাম বলেন, “আমরা এই ধরনের কাজকে সমর্থন করি না। প্রশাসন সঙ্গে কথা বললে অবিলম্বে ওই কাজ বন্ধ করে দেব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy