সারি দিয়ে দাঁড়ানো নৌকা। হাসনাবাদের ইছামতী নদীর পাশে। —নিজস্ব চিত্র।
লকডাউনের জেরে বন্ধ ফেরি চলাচল। ফলে রোজগার হারিয়েছেন সুন্দরবন এলাকার মাঝি-মাল্লারা। এই পরিস্থিতিতে দিন আনি দিন খাওয়া পরিবারগুলি খুবই সমস্যায় পড়েছে। অনাহারে, অর্ধাহারে কোনও রকমে দিন কাটছে তাঁদের।
বসিরহাট মহকুমার সন্দেশখালি, দুলদুলি, ধামাখালি, স্বরূপনগর, ন্যাজাট, খুলনা, কালীনগর, হাড়োয়া, বাদুড়িয়া, হাসনাবাদ, মিনাখাঁ, হিঙ্গলগঞ্জের মতো নদী লাগোয়া গ্রামগুলির বাসিন্দাদের নদী পারাপারের অন্যতম উপায় দাঁড় টানা বা যন্ত্রচালিত নৌকো। এলাকার কয়েকশো মানুষ নৌকো চালিয়েই সংসার চালান। কিন্তু লকডাউনের জেরে প্রায় দু’মাস বন্ধ রয়েছে ফেরি চলাচল। মাঝিরা জানান, রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরিবার নিয়ে খুবই কষ্টে দিন কাটছে। কিছু সংস্থার তরফে ত্রাণ পেয়েছেন ঠিকই। কিন্তু তা দিয়ে রোজকার খাবারের চাহিদা পুরোপুরি মিটছে না।
সম্প্রতি সন্দেশখালির ন্যাজাট ফেরিঘাটে গিয়ে দেখা গেল, সারি সারি দাঁড়িয়ে আছে নৌকো, ভুটভুটি। সে দিকে তাকিয়ে মাঝি ফজের আলি, বসন্ত মণ্ডল, বাপি সরকাররা বলেন, ‘‘ঘরে রান্না বন্ধ হওয়ার উপক্রম। কবে যে আবার সব কিছু স্বাভাবিক হবে জানি না।’’
সর্দারপাড়া ফেরি পারাপার ইউনিয়নের প্রসাদ পাত্র, গুরুপদ ঘোষরা বলেন, ‘‘সুন্দরবন এলাকায় ইছামতি, কালিন্দী, রায়মঙ্গল, ডাঁসা, বেতনি, গৌড়েশ্বর, সাহেবখালি নদীতে নৌকো চলে। প্রতি নৌকোর সঙ্গে ২-৪ জন মাঝি-মাল্লা থাকে। দিনে তিন-চারশো টাকা আয় হয়। ঘাট বন্ধের জন্য নৌকোর সঙ্গে জড়িত প্রত্যেককেই আর্থিক সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে।’’ মাঝি ইউসুফ গাজি বলেন, ‘‘দীর্ঘ চল্লিশ বছর ধরে সুন্দরবনের বিভিন্ন নদীতে কখনও হাতে টানা নৌকো কখনও ইঞ্জিন চালিত ভুটভুটি চালিয়ে আসছি। অনেক ঝড়, ঝাপটা গিয়েছে আমাদের উপর দিয়ে। তবে আগে কখনও এমন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়নি।’’
নৌকো মালিক সিদ্ধেশ্বর দাসের কথায়, ‘‘ফেরিঘাটে প্রতিবছরে চার লক্ষ টাকা ভাড়া দিয়ে তবেই নৌকো চালাতে হয়। লকডাউনে প্রায় সবই বন্ধ। মাঝে মধ্যে কিছু নৌকো চলছে। দিনে ১০-১৫ জন যাতায়াত করছে। তা থেকে ৬০-৭০ টাকা আয় হচ্ছে। এই অবস্থায় ইজারার টাকা কমানোর জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন জানাচ্ছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy