Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

অকারণ ভিড় বাড়াচ্ছে শঙ্কা

করোনা-আতঙ্কে নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হতে নিষেধ করা হচ্ছে বার বার। কিন্তু সকালের বাজার দেখলে তা বোঝা দায়। রবিবার সকালেও হাবড়া বাজারে দেখা গেল একই পরিবারের তিন-চার জন সদস্য এক সঙ্গে বাজারে এসেছেন।

দেগঙ্গার হাটে ভিড়। দূরত্ব বজায় না রেখেই চলছে কেনাকাটা। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়

দেগঙ্গার হাটে ভিড়। দূরত্ব বজায় না রেখেই চলছে কেনাকাটা। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০২০ ০২:৩৬
Share: Save:

লকডাউনে খাদ্যের অভাবে জনজীবন যাতে অচল না হয়ে পড়ে, সে জন্য খোলা রাখা হয়েছে আনাজের বাজার, মুদির দোকান। কিন্তু বাজার খোলা পেয়ে নিত্যদিনের অভ্যাসে দাঁড়ি টানতে পারছেন না অনেকেই। সকাল হলেই থলে হাতে রোজ বাজারে ‘হানা’ দিচ্ছেন। কেনাকাটা করে এক দফা আড্ডা মেরে বাড়ি ফিরছেন তাঁরা। ফলে বাজারে ভিড় নিয়ন্ত্রণে থাকছে না। জমায়েত বন্ধে প্রশাসনের উদ্যোগ মারা পড়ছে মাঠেই। এত সতর্কতার পরেও অনেকেই বাড়ির শিশুটিকেও সঙ্গে করে বাজারে নিয়ে যাচ্ছেন। তাতে বাড়ছে সংক্রমণের শঙ্কা।

করোনা-আতঙ্কে নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হতে নিষেধ করা হচ্ছে বার বার। কিন্তু সকালের বাজার দেখলে তা বোঝা দায়। রবিবার সকালেও হাবড়া বাজারে দেখা গেল একই পরিবারের তিন-চার জন সদস্য এক সঙ্গে বাজারে এসেছেন। বাড়ির শিশুটিও রয়েছে। বাজারের বিক্রেতারাই বলছে, কেউ কেউ রোজই বাজারে আসছেন। প্রতিদিনই আনাজ-মাছ কিনছেন। এই সঙ্কটকালেও প্রতিদিনের রুটিনে তাঁরা কোনও বদল আনেননি বলে অভিযোগ। হাবড়ার প্রাক্তন পুরপ্রধান নীলিমেশ দাস বলেন, “বাসিন্দাদের একাংশ কিছুতেই সচেতন হচ্ছেন না। একদিন বাজার করেও তো তিন-চার দিন দিব্যি চালানো যায়। কিন্তু অনেকেই রোজ বাজারে আসছেন। তাঁদের আর কী করে বোঝাবো!” তবে বাজারে ভিড় কমাতে প্রশাসন চেষ্টা করেছে। বাণীপুর এলাকায় তিনটি বাজার বসে। প্রশাসনের তরফে বাজারগুলি বাণীপুর লোক উৎসবের মাঠে তুলে নিয়ে আসা হয়েছে। যাতে বাজারে জমায়েতের মধ্যেও স্পর্শ-দূরত্ব বজায় থাকে। দোকানগুলিও নির্দিষ্ট দূরত্বে বসানো হয়েছে। হাবড়ার অন্যতম বড় বাজার পাটপট্টি কালীবাড়ি বাজার। ওই বাজারটিও পাশের সাহেববাগান মাঠে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ওই বাজারের একাংশের দোকান হাবড়া-নগরউখড়া সড়কে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাজারগুলিতে গিয়ে দেখা গেল, অনেকেই বাজারের থলে হাতে চায়ের দোকানে খোশগল্পে মেতেছেন। এক দম্পতি তাঁদের ছোট মেয়েকে বাজারে নিয়ে এসেছেন। দম্পতির মুখে মাস্ক থাকলেও মেয়ের মুখ কিন্তু অসুরক্ষিত। দম্পতির জবাব, “মেয়ে বাড়িতে থাকতে চাইছিল না। তাই একটু নিয়ে বেরিয়েছি।”

বনগাঁ-গোবরডাঙা-অশোকনগর-বাগদা-গোপালনগরের বাজার-হাটগুলিতে ভিড় উপচে পড়ছে। ক্রেতা বিক্রেতাদের কেউই নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখছেন না। একই অবস্থা বসিরহাট-হাসনাবাদ-হিঙ্গলগঞ্জের বাজারেও। বিক্রেতারাই বলছেন, এখনও অনেকেই রোজ বাজারে আসছেন। হাসনাবাদের বাসিন্দা বিবেকানন্দ ঘোষ জানালেন, তিনি রোজই মাছ বা মাংস কিনতে বাজারে আসছেন। তাঁর যুক্তি, সপ্তাহখানেকের মতো আনাজ কেনা রয়েছে। কিন্তু মাছ-মাংস তিনি টাটকাই খান। তিনি জানান, সুরক্ষিত হয়ে বাজারে আসেন, এবং দ্রুত ফেরেন। একই অবস্থা ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলেও। শ্যামনগর, নৈহাটি, হালিশহর— সর্বত্রই বাজারের ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরবেন বলে সকলেই বাজারে আসছেন সকাল সকাল। তার ফলে একই সময়ে কার্যত মেলায় পরিণত হচ্ছে বাজার। মিনাখাঁ পঞ্চায়েতের সর্দারপাড়ায় রবিবার সকালে দেখা গেল, কিছু যুবক রাস্তার পাশে ক্যারম খেলছে। পাশের জয়গ্রাম এলাকায় রাস্তার পাশে দল বেঁধে খোশগল্পে মেতে থাকতে দেখা গেল। কেন রাস্তায় বেরিয়েছেন, তার সঙ্গত কারণ দেখাতে পারলেন না প্রায়ই কেউ। ভিড় নিয়ন্ত্রণে ফাঁকা জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে গোসাবা বাজারকে। গত কয়েক দিনে লকডাউন উপেক্ষা করেই বহু মানুষের ভিড় চোখে পড়েছে এই বাজারে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, জায়গাটা ঘিঞ্জি হওয়ায় এ ভাবেই কেনাকাটা করতে হয় সাধারণ মানুষকে। শনিবার সকালেও চেখে পড়ে এই ছবি। সমস্যা মেটাতে আপাতত একটি ফাঁকা মাঠে বাজারটি সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। রবিবার থেকে সেখানেই বাজার বসছে। তবে ক্যানিং বাজারে ভিড় এখন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে।

লকডাউনের জেরে শহর এলাকা ফাঁকা থাকলেও, গ্রামাঞ্চলে অনেকেই নিষেধ মানছেন না বলে অভিযোগ উঠছে। গ্রামের দিকে অলিগলিতে চায়ের দোকানে আড্ডা দেওয়া, মাঠে ফুটবল খেলা বা জমিয়ে তাস খেলা এখনও চলছে ক্যানিং, বাসন্তী, গোসাবা এলাকায়। কিছু কিছু জায়গায় প্রশাসন খবর পেয়ে সেখানে গেলে কিছুক্ষণের জন্য বাড়ি ঢুকে পড়লেও ফের বাইরে বের হচ্ছেন বহু মানুষ। কাকদ্বীপ, ডায়মন্ড হারবার মহকুমা এলাকায় অবশ্য ছবিটা কিছুটা আলাদা। প্রথম দিকে রাস্তাঘাটে উৎসাহী মানুষের ভিড় থাকলেও প্রশাসনিক নজরদারিতে এখন রাস্তাঘাট অনেকটাই ফাঁকা। লকডাউন উপেক্ষা করে ভাঙড়ের বিভিন্ন জায়গায় মানুষের ভিড় চোখে পড়েছে গত কয়েক দিন। শনিবার থেকে এলাকার বেশ কিছু যুবক মানুষকে বোঝাতে রাস্তায় নামেন। সকাল থেকেই কৌশিক সর্দার, মানস সর্দাররা গ্রামে গ্রামে ঘুরে মানুষকে অযথা বাইরে না বেরোনোর আবেদন জানান। বাসন্তীর চোরডাকাতিয়া, কুলতলি, হালদার পাড়ায় স্থানীয় একটি ক্লাব সদস্যেরা এলাকার টিউবওয়েলগুলি জীবাণুমুক্ত করেন। মানুষকে সচেতন করতে বিভিন্ন জায়গায় পোস্টারও লাগানো হয়।

অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE