Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
ভারত-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগ

বাঘ গণনা হবে সুন্দরবনের জঙ্গলে

ব্যাঘ্র প্রকল্প দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই প্রথম দুই পড়শি দেশের এমন যৌথ উদ্যোগ। যে সব বন কর্মীরা বাঘ গণনা করবেন, তাঁদের যারা প্রশিক্ষণ দেবেন, সেই সব প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এ মাসের ২৫-২৬ তারিখ থেকে প্রথম পর্যায়ের গণনার কাজ শুরু হবে।

সামসুল হুদা
গোসাবা শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

এই প্রথম ভারত-বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে সুন্দরবনে বাঘ গণনা শুরু হতে চলেছে।

সোমবার সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প দফতরের অধীন সজনেখালি রেঞ্জ অফিসে প্রশিক্ষণ শুরু হয়। শিবির চলবে বুধবার পর্যন্ত। এতে যোগ দেন বাংলাদেশের বন দফতরের ৪ জন ডিএফও, এ রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল রবিকান্ত সিংহ, ওয়াইল্ড লাইফ ইন্সটিটিউশন অব ইন্ডিয়ার বিজ্ঞানী কামার কুরেশি, ব্যাঘ্র প্রকল্প দফতরের ফিল্ড ডিরেক্টর নীলাঞ্জন মল্লিক, দক্ষিণ ২৪ পরগনা বন বিভাগের ডিএফও তৃপ্তি সা প্রমুখ৷

ব্যাঘ্র প্রকল্প দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই প্রথম দুই পড়শি দেশের এমন যৌথ উদ্যোগ। যে সব বন কর্মীরা বাঘ গণনা করবেন, তাঁদের যারা প্রশিক্ষণ দেবেন, সেই সব প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এ মাসের ২৫-২৬ তারিখ থেকে প্রথম পর্যায়ের গণনার কাজ শুরু হবে। ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে জঙ্গলে প্রথম পর্যায়ে ক্যামেরা লাগানোর কাজ শুরু হয়ে যাবে।

তিনটি পর্যায়ে গণনা চলবে। জঙ্গলকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে ৪০টি দল গঠন করা হবে। এক একটি দলে ৪-৫ জন করে থাকবেন। এত দিন সুন্দরবনে বাঘ গণনা হত বাঘের পায়ের ছাপ দেখে, গলায় রেডিও কলার লাগিয়ে অথবা জঙ্গলে ক্যামেরা ট্রাকিং করে। এ বার সেই পদ্ধতিতে বেশ কিছুটা বদল আনা হচ্ছে। যেমন, এ বার বাঘের পায়ের ছাপ গণ্য হবে না। নৌকোয় করে বিভিন্ন নদী, খাঁড়ি, জঙ্গলে বাঘের খাদ্য তৃণভোজী প্রাণী হরিণ, বুনো শূয়োর-সহ বিভিন্ন জন্তুর সমীক্ষা করা হবে। বাঘের মল, মূত্র, গাছের গায়ে আঁচড়-সহ অন্যান্য চিহ্ন সংগ্রহ করা হবে, জঙ্গলের আশেপাশে বাঘের থাকার উপযোগী হেতাল, গরান, গেঁওয়া গাছের হদিস করা হবে। এ ছাড়া, ইনফ্রারেড রশ্মিচালিত স্বয়ংক্রিয় ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারি চলবে। এ জন্য তিনটি পর্যায়ে প্রায় ১৪১০টি আধুনিক ক্যামেরা লাগানো হবে। বাঘের গায়ের ডোরা কাটা দাগ একদম আলাদা। যা একটির সঙ্গে একটি মেলে না।রবিকান্তবাবু বলেন, ‘‘প্রতি চার বছর পর পর সর্ব ভারতীয় স্তরে বাঘ গণনা করা হয়। পশ্চিমবঙ্গে প্রতি বছর গণনা করা হয় এই পদ্ধতিতে। এ বার বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে গণনা হবে।’’ এতে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও যুক্ত থাকছে বলে জানান তিনি। আরও জানান, পুরো জঙ্গলকে বিভিন্ন গ্রিডে ভাগ করে ক্যামেরা বসানো হবে। বাঘের শরীরের দু’দিকের ছবি ও অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ করে তা পর্যবেক্ষণ করে ওয়াইল্ড লাইফ ইন্সটিটিউশনে পাঠানো হবে। গত তিনটি গণনায় বাঘের সংখ্যা একটু বেড়েছে। এ বছর ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত তিনটি পর্যায়ে গণনা চলবে।

কামার কুরেশি বলেন, ‘‘শুধু বাঘ নয়, সুন্দরবনে কোথায় কোথায় হরিণ, শূকর আছে, তা-ও দেখা হবে। ভারত-বাংলাদেশ মিলিয়ে প্রায় ২০০ বাঘ আছে। দুই দেশ এক সঙ্গে গণনা করলে পরিসংখ্যানটা মোটামুটি ঠিকমতো পাওয়া যাবে।’’ তিনি জানান, সারা বিশ্বে বাঘের সংখ্যার বিচারে ভারত-বাংলাদেশ মিলিয়ে পঞ্চম স্থান জখল করে। বাঘের পায়ের ছাপ দেখে গণনায় সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যেত না। তাই পদ্ধতি বদলে ফেলা হয়েছে। বাংলাদেশের ডিএফও সাদিনুল হাসান বলেন, ‘‘২০১৫-১৬ সালে আমাদের দেশে প্রথম বাঘ গণনা হয়। ১০৬টি বাঘের হদিস মিলেছিল। আগে এক একটি জায়গায় এক এক পদ্ধতিতে গণনা করা হত। যে জন্য সঠিক তথ্য পাওয়া যেত না। এ বার যৌথ উদ্যোগে একই পদ্ধতিতে গণনা করা হচ্ছে।’’শুধু ভারত-বাংলাদেশ নয়, নেপাল, ভুটানও একই পদ্ধতিতে বাঘ গণনা করছে বলে জানা গিয়েছে। এর আগে অসমে প্রশিক্ষণ হয়ে গিয়েছে। নেপাল ও ভুটান তাতে যোগ দিয়েছিল। এ দিন প্রশিক্ষণ শিবির শেষে বন কর্মীদের নিয়ে সুধন্যখালি, পীরখালি-২ জঙ্গলে গিয়ে কী ভাবে গণনা করা হবে, তা হাতে-কলমে বোঝানো হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE