Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
CPm Leader

তৃণমূল নেতার চিকিৎসার জন্য প্লাজ়মা দিতে হাজির সিপিএম নেতা 

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে জানিয়েছেন, করোনা রোগীকে প্লাজ়মা দিতে হলে দাতাকেও আগে করোনা পজিটিভ হতে হয়। ১৩ অগস্ট র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় ঋজিনন্দনের করোনা পজ়িটিভ ধরা পড়ে।

নীলিমেশ দাস ও ঋজিনন্দন বিশ্বাস

নীলিমেশ দাস ও ঋজিনন্দন বিশ্বাস

সীমান্ত মৈত্র
হাবড়া শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০২:১৬
Share: Save:

করোনা আক্রান্ত তৃণমূল নেতার জন্য প্লাজমা দান করতে হাসপাতালে হাজির হলেন সিপিএম নেতা। রাজ্য রাজনীতির আকচা-আকচির মাঝে এই বিরল ঘটনার সাক্ষী থাকল হাবড়া।সম্প্রতি করোনা আক্রান্ত হন হাবড়ার পুরপ্রশাসক, তৃণমূলের নীলিমেশ দাস। ১২ সেপ্টেম্বর থেকে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি। চিকিৎসকেরা প্লাজ়মা থেরাপি শুরু করেছেন।সে কথা জানতে পেরে সোমবার হাসপাতালে পৌঁছে যান পুরসভার প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা, সিপিএমের ঋজিনন্দন বিশ্বাস। শেষমেশ ডাক্তাররা অবশ্য কিছু কারণে তাঁর প্লাজ়মা নিতে চাননি। কিন্তু ঋজিনন্দনের পদক্ষেপ এখন হাবড়ার মানুষের মুখে মুখে ঘুরছে। শাসক শিবিরও প্রশংসায় পঞ্চমুখ। নীলিমেশ ঘটনাটি জানতে পেরে রোগশয্যা থেকেই বলেন, ‘‘এই হল হাবড়ার আসল স্পিরিট। এটাই হাবড়ার রাজনৈতিক সংস্কৃতি।’’

সেই ‘সংস্কৃতির’ উল্টো মুখটাও অবশ্য কম দেখেননি হাবড়ার মানুষ। অতীতে সিপিএম-তৃণমূলের একাধিক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ঘটেছে হাবড়ার মাটিতে। দু’পক্ষেরই অভিযোগের তালিকা দীর্ঘ। সিপিএমের দাবি, ২০১৩ সালের হাবড়া পুরসভা ভোট বা গত পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূল এখানে ব্যাপক সন্ত্রাস চালিয়েছিল। বিরোধীদের মারধর করা হয়, প্রার্থীদের হুমকি দেওয়া হয়। পঞ্চায়েত ভোটে গণনার সময়ে সিপিএম প্রার্থীকে শারীরিক ভাবে নিগ্রহ করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। সিটুর অফিসে হামলা, সিপিএমের কার্যালয় দখল করে নেওয়ার মতো অভিযোগও তুলেছিল বাম শিবির। স্থানীয় কলেজগুলিতে দু’দলের ছাত্র সংগঠনের সংঘর্ষে পঠনপাঠন ব্যাহত হয়েছে বহুবার। রক্তাক্ত হয়েছে কলেজ চত্বর। সিপিএমের হামলার নানা অভিযোগ তৃণমূলও তুলেছে নানা সময়ে। ঘাসফুল শিবিরের বক্তব্য, ক্ষমতায় থাকাকালীন সিপিএম পুরভোট, বিধানসভা ভোটে সন্ত্রাস করেছে। কলেজেও মারধর করেছে বিরোধীদের।

ঋজিনন্দনের ভূমিকার তারিফ করলেও বিস্মিতও কম নয় স্থানীয় রাজনৈতিক মহল। ঋজিনন্দন নিজে বলেন, ‘‘বিমান বসুর বক্তব্যে একবার শুনেছিলাম, আগে আমরা মানুষ। তারপরে কমিউনিস্ট। আমরা নিশ্চয়ই তৃণমূলের সমালোচনা করব। মতপার্থক্য থাকবে। কিন্তু মানুষের জীবনের মূল্য আগে। বিরোধী দলের কারও বিপদে এগিয়ে যাওয়া যাবে না, এমন অন্ধত্ব আমাদের দলে নেই।’’হাবড়া থেকে আরও কয়েকজন প্লাজ়মা দিতে গিয়েছিলেন। ঋজিনন্দনের প্লাজমা কেন নিলেন না চিকিৎসকেরা?

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে জানিয়েছেন, করোনা রোগীকে প্লাজ়মা দিতে হলে দাতাকেও আগে করোনা পজ়িটিভ হতে হয়। ১৩ অগস্ট র‌্যাপিড অ্যান্টিজ়েন পরীক্ষায় ঋজিনন্দনের করোনা পজ়িটিভ ধরা পড়ে। কিন্ত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন, যেহেতু লালারস পরীক্ষায় করোনা ধরা পড়েনি, তাই তাঁর প্লাজ়মা করোনা রোগীকে দান করা যাবে না।সিপিএমে নেতার বক্তব্য, ‘‘সরকারি নির্দেশিকায় আছে র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের মাধ্যমে কেউ করোনা পজ়িটিভ হলে তাঁকে পজ়িটিভ রোগী হিসেবেই ধরা হবে। ফলে অদ্ভূত যুক্তিতে আমার প্লাজ়মা নেওয়া হল না।’’

সিপিএমের পক্ষ থেকে হাবড়ায় অ্যান্টিবডি পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় সাহায্যের জন্য তৈরি করা হয়েছে রেড ভলান্টিয়ার দল। সিপিএমের হাবড়া এরিয়া কমিটির সম্পাদক আশুতোষ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘যে কোনও অসুস্থ মানুষের পাশে আমরা থাকি। এটাই আমাদের কাজ।’’নীলিমেশের জন্য প্লাজমা দেওয়ার আগেই ২০ সেপ্টেম্বর এক করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসার জন্য ঋজিনন্দনের প্লাজ়মা দেওয়ার কথা ছিল। সে কারণে তিনি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ফের করোনা পরীক্ষা করিয়েছিলেন। রিপোর্ট নেগেটিভ ছিল। কিন্তু ওই ব্যক্তি তার আগেই মারা যান। সিপিএম নেতার প্লাজ়মা তৃণমূল নেতার শরীরে ব্যবহার হয় তো হল না, কিন্তু রাজনৈতিক সৌজন্যের যে নিদর্শন তৈরি হল, তার মূল্যও কম নয়— বলছেন হাবড়ার মানুষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Corona Covid19 TMC Leader CPM Leader Plasma
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE