আশিস পাত্র
নিথর দেহে প্রাণের স্পন্দন নেই। তেরাঙ্গায় মোড়া কফিনে দেহ এল বাড়িতে।
পাথরপ্রতিমার সিআরপিএফ জওয়ান আশিস পাত্র (২৫) রাঁচিতে মাওবাদী হামলায় শহিদ হয়েছেন মঙ্গলবার। বুধবার রাতে তাঁর বাড়িতে দেহ এসে পৌঁছয়। শহিদকে বিদায় জানাতে হাজির ছিল পুরো গ্রাম।
সাগরের বিশ্বজিৎ ঘোড়ুইয়ের শহিদ হওয়ার ক্ষত এখনও তাজা। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই মাওবাদী হামলায় প্রাণ হারালেন আরও এক যুবক, আশিস। বাবা দিনমজুরের কাজ করতেন। খুব কষ্টে মানুষ হয়েছিলেন চার ভাইবোনের মধ্যে বড় আশিস। বাবা নিমাইবাবু পড়াতে পারেননি বেশিদূর। মেদিনীপুরে মামাবাড়ি থেকে তিনি স্নাতক হন। এরপরেই ২০১১ সালে আশিস সিআরপিএফে যোগ দেন। বাড়ির একমাত্র চাকুরে আশিস দায়িত্ব নিয়ে বোন মামনির বিয়েও দিয়েছিলেন বনশ্যামনগরে। ছোট আরও দুই ভাই রবিন এবং অমিতকেও পড়ার টাকাও পাঠাতেন তিনি। একফালি জায়গা কিনেছিলেন বাড়ি করবে বলে। কিন্তু তা আর হল না।
বড়দিনের ছুটিতে বাড়িতে এসেছিলেন আশিস। ২৫ ডিসেম্বর রওনা হন। রাঁচিতে নিজের ইউনিটে যোগ দেন গত মঙ্গলবার। পরশু রাত ৯টা নাগাদ শেষবার মা নমিতাদেবীকে ফোন করেছিলেন তিনি। আশিসের সবচেয়ে কাছের বন্ধু প্রশান্ত বর জানান, চাকরি পেয়েও বাড়িতে এলে বন্ধুদের সময় দিত। প্রশান্ত বলেন, ‘‘ইউনিটে ইডলি আর ধোসা খাওয়া খুব পছন্দ ছিল ওর। বাড়িতে এলে মায়ের কাছে আবদার করত, মা এ বার ইডলি আর ধোসা বানানো শিখে নাও। খেতে খুব ভাল লাগে।’’ মায়ের আর বড় ছেলেকে প্রাণভরে ইডলি খাওয়ানো হল না। এ দিন পূর্ব সুরেন্দ্রনগর শহিদের বাড়িতে মা নমিতাদেবী বেশ কয়েকবার জ্ঞান হারিয়েছেন। তাঁকে স্যালাইন দিতে হয়েছে। বাবা নিমাইবাবুও কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলেন না।
বুধবার রাতে গ্রাম জনঅরণ্যে পরিণত হয়। তার ছবি নিয়ে সংবর্ধনার প্রস্তুতি দুপুর থেকেই শুরু করেন স্থানীয় অপূর্ব প্রধান। দেহ বাড়িতে আসে রাত ৮ টার পর। শ্রদ্ধা জানাতে ভেঙে পড়ে মানুষ। পাথরপ্রতিমার বিধায়ক এ দিন শেষ শ্রদ্ধা জানাতে হাজির হয়েছিলেন আশিসের বাড়িতে। তিনি বলেন, ‘‘খুব দুঃখের ঘটনা হলেও আমরা পাথরপ্রতিমাবাসী গর্বিত যে আমাদের ছেলে দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন। তহবিল গড়ে পরিবারের পাশে দাঁড়াব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy