ত্রাণ শিবিরে নিয়ে আসা হচ্ছে গ্রামবাসীদের। বসিরহাটে। ছবি: নির্মল বসু
শুরু হয়েছে ঝোড়ো হাওয়া, সঙ্গে বৃষ্টি। ঠিক যেমনটা আয়লার আগে হয়েছিল। কিন্তু সে বার হাওয়া অফিস ঝড় নিয়ে বিস্তারিত জানাতে না পারায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল প্রচুর। এ বার ঝড়ের গতিপ্রকৃতি এবং পথ প্রায় পরিষ্কার। উত্তর ২৪ পরগনায় সুন্দরবনের বিপজ্জনক এলাকা থেকে বাসিন্দাদের শিবিরে সরানোর কাজ চলছে রাত পর্যন্ত।
বুধবার সকাল থেকে বৃষ্টির দাপট বাড়বে ধরে নিয়েই বাসিন্দাদের নিরাপদ আস্তানায় সরিয়ে আনার কাজ রাতের মধ্যে সেরে ফেলতে চাইছে প্রশাসন। করোনা-আবহে দূরত্ববিধির কথা মাথায় রেখে সাইক্লোন ও ফ্লাড শেল্টারের পাশাপাশি স্কুলগুলিকেও শিবির হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। মজুত রাখা হয়েছে প্রচুর ত্রিপল, খাবার এবং পানীয় জলও। প্রশাসন জানিয়েছে, হিঙ্গলগঞ্জ, সন্দেশখালি ১ ও ২, হাসনাবাদ, হাড়োয়া এবং মিনাখাঁ ব্লকে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা বেশি বলে এই সব এলাকায় বিশেষ নজরদারি রয়েছে। বসিরহাট মহকুমা প্রশাসন জানিয়েছে, আমপানের কথা মাথায় রেখে ইতিমধ্যে ৫০ হাজার জলের পাউচ মজুত করা হয়েছে। ৫০ হাজার মাস্ক, পর্যাপ্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান মজুত করা হয়েছে। বসিরহাটের মহকুমাশাসক বিবেক ভাসমে বলেন, “পাঁচটি ব্লকে ৬৩টি বহুমুখি সাইক্লোন শেল্টার, ৫৭টি ফ্লাড শেল্টার ছাড়াও সরকারি স্কুল, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র মিলে আরও ৫০০টির মতো শিবিরের ব্যবস্থা করা হয়েছে।” মহকুমাশাসক জানান, সন্দেশখালি, হিঙ্গলগঞ্জ, হাসনাবাদে কেন্দ্র ও রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দলের কর্মীদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের শিবিরে আনার কাজ শেষ হয়েছে। বিশেষ প্রয়োজনের জন্য গড়া হয়েছে মেডিক্যাল ইউনিটও। বসিরহাট মহকুমাশাসকের দফতরে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।
বিকেল থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে সন্দেশখালি, হিঙ্গলগঞ্জ, হাসনাবাদ এলাকায়। হিঙ্গলগঞ্জের দুলদুলি, যোগেশগঞ্জ, কালীতলা, গোবিন্দকাটি পঞ্চায়েত এলাকায় বিপদের আশঙ্কা প্রবল। মঙ্গলবার বিকেলের মধ্যেই এই সব এলাকা থেকে ছ’হাজার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছে। রাস্তায় পড়া গাছ যাতে দ্রুত সরানো যায়, সে জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। এরই মধ্যে আতঙ্কে রেখেছে নদীবাঁধ। মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত প্রায় ১৫০ ফুট মাটির জরাজীর্ণ নদী বাঁধ মেরামতির কাজ হয়নি। তাই আতঙ্কিত হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের সান্ডেলেরবিল পঞ্চায়েতের ১ নম্বর আমবেড়িয়া গ্রামের বাসিন্দারা। ১ নম্বর আমবেড়িয়া প্রাথমিক স্কুলের পাশে কালিন্দি নদীর প্রায় ১৫০ ফুট বাঁধের অবস্থা খুব খারাপ। দুর্বল নদী বাঁধের পাশেই রয়েছে প্রায় দেড়শোটি মাটির বাড়ি। আয়লার মতো বাঁধ ভাঙলে প্রায় ছ’টি গ্রাম জলমগ্ন হতে পারে বলে আশঙ্কা। আয়লার সময়ে এই গ্রামে নদী-বাঁধ ভেঙেছিল। তারপরে বাঁধের কিছুটা কংক্রিটের হয়। আরও ৬০০ ফুট বাঁধ কংক্রিটের করার দাবি ছিল গ্রামের। স্কুলের পাশের এই ১৫০ ফুট বাঁধের অবস্থা বিপজ্জনক।
স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য সুরজিত বর্মণ জানান, সেচ দফতর লঞ্চ নিয়ে বাঁধের অবস্থা দেখে গিয়েছে। কিন্তু মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত কাজ শুরু হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy