Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Cyclone Amphan

ঢেউ কেড়েছে সব কিছু, তবু ভরসা সেই নদীই

বাসন্তীর সোনাখালি, বরপাড়া, হাজিরচক গ্রামেরও একই অবস্থা।

মিন ধরেই জীবন চলে এঁদের। নিজস্ব চিত্র

মিন ধরেই জীবন চলে এঁদের। নিজস্ব চিত্র

প্রসেনজিৎ সাহা
মধুখালি (ক্যানিং)  শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০২০ ০১:১১
Share: Save:

নদীই কেড়েছে সব কিছু। তবু সেই নদীর জলে ফের নেমে পড়েছেন ওঁরা। মিন, মাছ ধরে শুরু হয়েছে নতুন করে বাঁচার লড়াই।

আমপানের দিন মাতলা নদীর জল বাঁধ ভেঙে গ্রামে ঢুকে প্লাবিত হয়েছে ক্যানিংয়ের মধুখালি, দক্ষিণ বুদোখালি, রেদোখালির মতো বহু এলাকা। ঘটিবাটি, জামাকাপড়— কিছুই রক্ষা করতে পারেননি অসংখ্য মানুষ। নদীর প্রবল স্রোত আর জলোচ্ছ্বাসে ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছে জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ। কেউ ত্রাণ শিবিরে আছেন। কেউ ভাঙাচোরা বাঁধের উপরে এক খণ্ড প্লাস্টিক টাঙিয়ে মাথা গুঁজেছেন।

বাসন্তীর সোনাখালি, বরপাড়া, হাজিরচক গ্রামেরও একই অবস্থা। সেখানেও হোগল নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে বহু গ্রাম। নদী সব কিছু ভাসিয়ে নিয়ে গেলেও সেই নদীই সুন্দরবনের বহু মানুষের জীবন ধারণের একমাত্র পথ। কেউ মাছ ধরেন, কেউ কাঁকড়া, কেউ মিন। কাঁকড়া ধরতে জঙ্গলে ঢুকে বাঘের হানায় বহু প্রাণ যায়। তবু পেটের টানে খাঁড়ি পথে নৌকো ভাসান।

বুধবার দেখা হল সুলেখা, মঙ্গলা, নারায়ণীদের সঙ্গে। নদীতে নেমে পড়েছেন মিন ধরতে। জাল হাতে সুলেখা বলেন, ‘‘মিন না ধরলে খাব কী? জল ঢুকে তো সব ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছে। দু’মুঠো চিঁড়ে আর একটু গুড় ছাড়া কিছুই পাইনি। ও দিয়ে কি আর পেট চলে? বাচ্চাকাচ্চাদের মুখে দু’মুঠো ভাত তুলে দিতে চাই।”

নারায়ণী সর্দারের কথায়, ‘‘নদী বার বার আমাদের গিলে খায়। তবু নদীর উপরেই ভরসা করে বেঁচে থাকি আমরা। এ ছাড়া কোনও গতি নেই।’’

আয়লার স্মৃতি এখনও টাটটা বছর পঞ্চাশের নারায়ণীর। সে সময়েও হোগল নদীর জল গ্রামে ঢুকে সব ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। সেই ধাক্কা সামলেছেন। এ বার বিপর্যয় ডেকে আনল আমপান। নারায়ণীরা জানেন, মারলে নদী মারবে, বাঁচালেও বাঁচাবে সে-ই।

গ্রামে নদীর নোনা জল ঢুকেছে। ফলে আগামী কয়েক বছর চাষ হবে না। পুকুরের মাছও সব মরেছে। নদীতে মাছ, মিন ধরা ছাড়া এই মুহূর্তে বিকল্প জীবিকা নেই। বাসন্তীর বরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সুরবালা বর বলেন, ‘‘মিন ধরে তা-ও দিনে ৭০-৮০ টাকা রোজগার হচ্ছে। দু’টো চালে-ডালে জুটে যাচ্ছে।’’ ক্যানিংয়ের মধুখালি গ্রামের বাসিন্দা সবিতা মণ্ডল ছেলে রবিনকে সঙ্গে নিয়ে মাতলা নদীতে মিন ধরছিলেন। বললেন, ‘‘আয়লায় গ্রাম তছনছ হয়ে গিয়েছিল। এলাকায় কোনও কাজ নেই। স্বামী অন্য রাজ্যে কাজ খুঁজতে চলে গেলেন। এখন লকডাউনে ফিরে এসেছেন। রোজগার বন্ধ। এ দিকে নদীর বাঁধ ভেঙে আবার সব ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছে। সাতজনের সংসার। কাজ না করলে কী করে চলবে?’’

যত দিন কংক্রিটের বাঁধ না হচ্ছে, ফের ঝড়-বৃষ্টিতে মাটির বাঁধ ভাঙবে, এ কথা নিশ্চিত জানেন সবিতারা। কিন্তু শক্তপোক্ত বাঁধ তো এত দিনেও হল না। সবিতা তাই বলেন, ‘‘নদীর আর কী দোষ! আমরা সারা বছর তো নদীর কৃপাতেই বেঁচে থাকি। অন্য কেউ আমাদের দেখার নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Amphan Cyclone
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE