দখলদারি: ক্যানিং লোকালে
‘লোক আছে’— ছোট্ট একটা কথা। এ কথার ‘মাহাত্ম্য’ কী, তা জানেন ক্যানিং লোকালে যাতায়াত করা যাত্রীরা। একের পর এক খালি আসন। কোনও যাত্রী নেই। কোনও আসনে রুমাল, তো কোনও আসনে জলের বোতল, কোথাও বা তাসের প্যাকেট। কিন্তু তা সরিয়ে সেই আসনে বসে কার সাধ্য।
সঙ্গে সঙ্গে হুংকার আসে, ‘‘বসবেন না। ওখানে লোক আছে।’’
—‘‘কোথায় লোক?’’
—‘‘অত জেনে আপনার কাজ কী? বললাম তো লোক আছে।’’
তারপরেও কেউ যদি ফাঁকা আসনে বসে পড়েন এবং তিনি যদি অসুস্থও হন, রেহাই মেলে না।
যেমন রেহাই পেলেন না শ্যামলবাবুবাবু দাস (নাম পরিবর্তিত)। বুধবার সকাল সওয়া ৮টার ক্যানিং-শিয়ালদহ লোকাল। অসুস্থ শ্যামলবাবুবাবু এ দিন ছেলে মিঠুকে (নাম পরিবর্তিত) সঙ্গে কলকাতায়। আসছিলেন চিকিৎসা করাতে। ট্রেনে উঠে দেখেন অনেক আসনই খালি। তবে সেখানে রাখা রুমাল-জলের বোতল। তারই একটা সরিয়ে বাবাকে বসিয়েছিলেন ছেলে।
পাশ থেকে এক মাঝবয়সী ঝাঁজিয়ে উঠলেন, ‘‘দেখতে পাচ্ছেন না, জায়গা রাখা আছে।’’ শ্যামল নিজেই জানালেন, তিনি অসুস্থ। একটা আসন না পেলে শিয়ালদহ যেতে পারবেন না। কোনও উত্তর না দিয়ে সহযাত্রীটি ডেকে নিলেন ‘অর্জুন’ নামে এক যুবককে। বললেন, ‘‘ওখানে গিয়ে বসে পড়। ওটা তোর জায়গা।’’ অসুস্থ শ্যামলকে এক রকম জোর করে তুলে দিয়ে বসে পড়লেন অর্জুন। সেই মাঝবয়সী এ বার বৃদ্ধের দিকে ঘুরে বললেন, ‘‘আমরা রোজকার যাত্রী, ডেলি প্যাসে়ঞ্জার। আমাদের জায়গা এ ভাবেই রাখা থাকে।’’
দিন কয়েক আগে নদিয়ার রানাঘাটে নিত্যযাত্রীদের এমন অত্যাচারের শিকার হয়ে রেলমন্ত্রকে টুইট করেছিলেন এক ডাক্তারি পড়ুয়া। তারপর দিন রেলপুলিশ রানাঘাট থেকে জনাকয়েক যাত্রীকে গ্রেফতার করে। বনগাঁ, হাবড়াতেও অভিযান চালিয়েছে জিআরপি, আরপিএফ। তবে ক্যানিং লোকালে নিত্যযাত্রীদের গা-জোয়ারি যে বন্ধ হয়নি, তা দেখা গেল বুধবার। মিঠু বলেন, ‘‘সকাল ৭টায় নাগাদ বাসন্তী থেকে অসুস্থ বাবাকে নিয়ে বের হয়েছি কলকাতায় চিকিৎসা করাতে। অথচ ট্রেনে আসন খালি থাকা সত্ত্বেও বসতে পারলাম না।’’ পরে অবশ্য এক যুবক অসুস্থ শ্যামলবাবুকে তাঁর আসনে বসান।
ট্রেন যখন চলতে শুরু করল, তখনও কিছু আসন খালি। দেখা গেল, পরের স্টেশনে সেই আসনে যাত্রী এসে বসে গেলেন। ঘুটিয়ারিশরিফ থেকে পাঁচ যুবক ট্রেনে ওঠে দুই সিটের মাঝখানে দাঁড়িয়ে তাস খেলতে শুরু করলেন। এক মহিলা বাচ্চা কোলে নিয়ে নামতে গিয়ে বাধা পেলেন। কেউ সরে গিয়ে তাঁকে জায়গা দিলেন না। মহিলা কিছু বলতেই তাকে নানা কটূক্তি শুনতে হল।
সোনারপুরে ট্রেন ঢুকতেই দেখা গেল অন্য ছবি। যে সব সাধারণ যাত্রী আসনে বসেছিলেন, নিত্যযাত্রীরা এ বার তাঁদের হুমকি দিতে শুরু করলেন— ‘‘উঠে পড়ুন, উঠে পড়ুন। এ বার আমরা বসব। কেউ আসন ছেড়ে দিলেন। যাঁরা ছাড়লেন না, তাঁদের এক রকম জোর করে টেনে তুলে দেওয়া হল। ক্যানিংয়ের বাসিন্দা দেবাশিস মণ্ডল বলেন, ‘‘দিন দিন ক্যানিং লোকালে নিত্যযাত্রীদের দাদাগিরি বাড়ছে। যদি আগে ট্রেনে উঠে বসি, তা হলে পরে এসে ওরা তুলে দেয়।’’ যদিও রেল পুলিশের দাবি, নিয়মিত ট্রেনে পুলিশের নজরদারি থাকে। কোনও অভিযোগ এলে সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy