নদীর-গ্রাসে: কাকদ্বীপের খুটিয়াপাড়ায়। নিজস্ব চিত্র
গত বছর কোটালে সব হারাতে বসেছিলেন খুটিয়াপাড়ার বাসিন্দা স্বপন দাস। তাঁর বাড়ির উঠোন, তুলসিতলার দিকে এগিয়ে এসেছিল পূর্ণিমার কোটালের জল। কোনও রকমে অস্থায়ী বাঁধ দিয়ে ঠেকানো গিয়েছিল সে বারের মতো। কিন্তু চাষের জমি, বাগান আর পুকুর মিলিয়ে অনেকটাই গ্রাস করেছে মুড়িগঙ্গা। পরে নদীর গতি ঠেকানোর প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছিল। কিন্তু এক বছরেও কাজ শুরু হয়নি।
শুধুমাত্র কাকদ্বীপের খুটিয়াপাড়াই নয়। পাথরপ্রতিমার ভারাতলা ও নামখানার মৌসুনিতে স্থায়ী প্রকল্পের কাজ অনুমোদন হলেও এক বছরে শুরু করতে পারেনি সেচ দফতর। কাজে দেরি হচ্ছে স্বীকার করে নিয়ে দফতরের মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় দ্রুত কাজগুলি শেষ করার আশ্বাস দিয়েছেন। দেরির কারণ প্রসঙ্গে রাজীববাবু বলেন, ‘‘আমরা দ্রুত ওই কাজগুলি করতে চাই। কিন্তু প্রকল্প হাতে নেওয়ার পর থেকে কিছু পদ্ধতি মেনে কাজ করতে হয়। তাতে দেরি হয়েছে। চেষ্টা করছি, যাতে কাজগুলি দ্রুত শেষ হয়।’’
স্বপনবাবুর মতো ভাঙনের মুখে পড়ে সব খুইয়েছে অন্তত ২০টি পরিবার। ভাঙনের আশঙ্কায় একে একে খুটিয়াপাড়ার বাস গোটাতে যেতে বাধ্য হচ্ছে অনেক পরিবার। স্বপনবাবু বলেন, ‘‘অনেক জমিজমা ছিল। সবটাই চলে গিয়েছে। এখন অন্য কোথাও গিয়ে ঘর বাঁধব, তেমন জমিও নেই আমার।’’ এ কারণেই সম্বলটুকু আঁকড়ে বাস করতে হচ্ছে স্বপনবাবুর মতো খুটিয়াপাড়ার অনেক পরিবারকেই। প্রায় ৬০০ মিটার এলাকায় নদীর গতি কমানোর জন্য বেড়া দিয়ে পলি ফেলে পাড় করার কথা ছিল। কিন্তু দেড় লক্ষ টাকার ওই প্রকল্পে এখনও কাজ শুরু হয়নি।
মৌসুনি দ্বীপের কুসুমতলা মৌজায় প্রায় এক কিলোমিটার বাঁধ কংক্রিটের করার কথা ছিল। সেই কাজেও গত বছর অর্থ বরাদ্দ হয়েছিল। কিন্তু কাজ শুরু করা যায়নি। এ বছরের কোটালে বাঁধ উপচে মুড়িগঙ্গার জল ঢুকেছিল এলাকায়। সেচ দফতরের ঠিকাদার কাজ শুরু করতে গিয়েছিল বর্ষায়। কিন্তু কাজ করলে মাটি ধুয়ে যাবে বলে বাধা দেন স্থানীয় বাসিন্দারাই। প্রশাসন সূত্রে খবর, এ কারণেই প্রায় ৩ কোটি টাকার ওই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে বর্ষার পরে।
কাজ এগোয়নি রামগঙ্গার ভারাতলাতেও। এখানে প্রায় এক কিলোমিটার বাঁধের অবস্থা খুবই খারাপ। কাজের জন্য অনুমোদন হয়েছিল আড়াই লক্ষ টাকার একটু বেশি। গ্রামবাসীরা জানালেন, প্রতি বছরই একটু একটু করে এগিয়ে আসছে মৃদঙ্গভাঙা নদী।
কেন সময়ে কাজ হচ্ছে না?
পাথরপ্রতিমার বিধায়ক সমীর জানা বলেন, ‘‘কাজ হয়ে যেত। কিন্তু ওই প্রকল্প প্রথমে আয়লা বাঁধের মধ্যে ধরা ছিল। বছরের পর বছর নদী এগিয়ে আসার জন্য তা সেচ দফতরের হাতে দেওয়া হয়। একটু দেরি হয়েছে। আগে ভাঙন ঠেকানোর কাজ করতে হবে। তারপর স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ।’’
সেই কাজও বর্ষার পরে শুরু হওয়ার কথা বলে প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy