Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Ichapur

ইছাপুরে গুলিতে মৃত্যু

রাত বাড়লেও আর ঘরে ফেরেননি ইছাপুরের জয়ন্ত সরকার (২৬)। হাঁড়ির ভাত হাঁড়িতেই রয়ে গিয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে ফিরেছে বাড়ির বড় ছেলের নিথর দেহ। বন্ধুর গুলিতে আগের রাতে প্রাণ গিয়েছে তাঁর। 

পাশাপাশি: পুরপ্রধান সুনীল সিংহের পাশে অভিযুক্ত অভি। ইনসেটে, জয়ন্ত সরকার। — নিজস্ব চিত্র

পাশাপাশি: পুরপ্রধান সুনীল সিংহের পাশে অভিযুক্ত অভি। ইনসেটে, জয়ন্ত সরকার। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৮ ০২:৩৫
Share: Save:

পুজোর শাড়ি কিনে এনে মায়ের হাতে তুলে দিয়েছিলেন তিনি। তখন বুধবার রাত। কাজ থেকে ফেরা বড় ছেলেকে চা করে দিতে চেয়েছিলেন মা। কিন্তু ছেলে বলেছিলেন, ‘‘মা ভাত রান্না কর। ফিরে এসে খাব।’’

রাত বাড়লেও আর ঘরে ফেরেননি ইছাপুরের জয়ন্ত সরকার (২৬)। হাঁড়ির ভাত হাঁড়িতেই রয়ে গিয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে ফিরেছে বাড়ির বড় ছেলের নিথর দেহ। বন্ধুর গুলিতে আগের রাতে প্রাণ গিয়েছে তাঁর।

এই ঘটনায় নোয়াপাড়া থানায় অভি চৌধুরী ওরফে মোটা অভি নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের হয়েছে। এলাকার বিধায়ক সুনীল সিংহের অভিযোগ, বিভিন্ন দুষ্কর্মের সঙ্গে জড়িত অভি। তার বিরুদ্ধে এলাকায় তোলাবাজি থেকে শুরু করে, নানা অভিযোগ রয়েছে। তার গ্রেফতারির দাবিও জানিয়েছেন তিনি। তবে যে অভির বিরুদ্ধে সরব সুনীল, সেই অভির সঙ্গেই ফেসবুকে একাধিক ছবিতে দেখা যাচ্ছে বিধায়ককে। সেই বিষয়ে সুনীলের প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমরা তো জনপ্রতিনিধি। অনেকেই আমাদের সঙ্গে ছবি তোলে। সবাইকে চেনা তো সম্ভব নয়।’’ কিন্তু অভির সঙ্গে সুনীলের একান্ত মুহূর্তেরও বেশ কিছু ছবি রয়েছে। সেই বিষয়েও সুনীলের এক কথা, ‘‘ছবি থাকলেই কিছু প্রমাণ হয় না।’’

ইছাপুর আনন্দমঠ এলাকার বাসিন্দা জয়ন্ত পেশায় গাড়িচালক। তাঁর বাবা বাপি সরকার রঙের কাজ করেন। অভি জয়ন্তের ছোটবেলার বন্ধু। আনন্দমঠ এলাকায় অভির একটা ছোট বাড়ি রয়েছে। তার বাড়ির লোকেরা টালিগঞ্জে থাকেন। অভি মাঝেমধ্যেই ইছাপুরের বাড়িতে গিয়ে থাকত। তার বিরুদ্ধে এলাকায় তোলাবাজি, মারপিট-সহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, একাধিক অভিযোগে অভিযুক্ত অভি গত এপ্রিল মাস থেকে পলাতক। আগে বার কয়েক সে গ্রেফতারও হয়েছিল। বর্তমানে সে জামিনে রয়েছে। মাঝেমধ্যে রাতের দিকে এলাকায় আসত এবং সকালের আগেই পালিয়ে যেত। বুধবার রাতেই সে এলাকায় এসেছিল। সে-ই ফোন করে জয়ন্তকে ডাকে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অভির বন্ধু হলেও জয়ন্ত এলাকায় ভাল ছেলে বলেই পরিচিত এবং জনপ্রিয় ছিলেন। পুলিশ জানিয়েছে, বুধবার রাতে কাজ থেকে বাড়ি ফিরে রামনগর এলাকায় যান তিনি। সেখানে অভি এবং কয়েক জনের সঙ্গে বসে আড্ডা দেন। রাত ১১টা নাগাদ সেখান থেকে ফিরছিলেন জয়ন্ত এবং অভি। রাস্তায় দু’জনের মধ্যে কোনও বিষয় নিয়ে বচসা হয়। অভিযোগ, তখনই নিজের কাছে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে জয়ন্তের পেটে গুলি চালায় সে। গুলি জয়ন্তের পিঠ ফুঁড়ে বেরিয়ে যায়। খবর পেয়ে বিধায়ক সুনীল জখম জয়ন্তকে নিজের গাড়িতে করে হাসপাতালে নিয়ে যান।

জয়ন্তের মা পূর্ণিমাদেবী বলেন, ‘‘বারবার আমার ছেলেকে বলেছিলাম, অভি ভাল ছেলে নয়। মাস দুয়েক আগে ও জয়ন্তকে বলেছিল, ‘তোর জান চলে যাবে’। তার পরেও ও সাবধান হল না। ও-ই ছিল আমার সংসারের রোজগেরে। আমার সংসারটা শেষ হয়ে গেল!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ichapur Firing Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE