Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ট্রেনের দেরিতে স্টেশনে ভাঙচুর, মারে জখম ১৫

পূর্ব রেলের বারাসত-হাসনাবাদ শাখায় ট্রেন চলছিল দেরিতে। তার জেরে শুক্রবার রাতে তেতে উঠল হাড়োয়া স্টেশন।

গণ্ডগোলের পর হাড়োয়া স্টেশনে। —নিজস্ব চিত্র।

গণ্ডগোলের পর হাড়োয়া স্টেশনে। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
হাড়োয়া শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৬ ০১:৫২
Share: Save:

পূর্ব রেলের বারাসত-হাসনাবাদ শাখায় ট্রেন চলছিল দেরিতে। তার জেরে শুক্রবার রাতে তেতে উঠল হাড়োয়া স্টেশন।

ট্রেনের দেরির কারণে যাত্রীরা প্রথমে ওই স্টেশনে ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ। হামলাকারীদের হাতে প্রহৃত হন স্টেশনের এক হকার। তার জেরে আবার স্থানীয় লোকজন দু’দফায় যাত্রীদের উপরে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। গোলমালে জখম হন অন্তত ১৫ জন। রেল পুলিশ ঘটনাস্থল গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। চার জনকে গ্রেফতার করা হয়।

পূর্ব রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার বিকেলে বাজ পড়ার জন্য চাঁপাপুকুর স্টেশনের প্যানেল-সিগন্যাল কাজ করছিল না। হাড়োয়া এবং বসিরহাট— এই দু’টি স্টেশনেই শুধু সিগন্যাল দিতে হচ্ছিল। তাই আপ এবং ডাউন ট্রেন দেরিতে চলছিল। হাড়োয়ার স্টেশন ম্যানেজার দেবাশিস হাজরা বলেন, ‘‘চাঁপাপুকুরে সিগন্যালের সমস্যার জন্য ট্রেন দেরিতে চলছিল। মাইকে সে কথা ঘোষণাও করা হয়। কিন্তু যাত্রীরা না শুনে স্টেশনে ভাঙচুর চালায়।’’ তবে, যাত্রীদের অভিযোগ, কয়েকদিন ধরেই এই শাখায় দেরিতে ট্রেন চলছে।

রেল পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার শিয়ালদহ থেকে বিকেল ৫টা ৫৮ মিনিটে ছাড়া হাসনাবাদগামী ইছামতী প্যাসেঞ্জার প্রায় এক ঘণ্টা দেরিতে রাত ৮টা নাগাদ হাড়োয়া স্টেশনে পৌঁছয়। সেখানে ট্রেনটিকে প্রায় ৩০ মিনিট দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। ধৈর্য হারিয়ে ট্রেনের যাত্রীরা স্টেশন ম্যানেজারের ঘরের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। ইট ছোড়াও শুরু হয়। পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে দেখে রেলকর্মীরা স্টেশনের সব অফিসে তালা দিয়ে দেন। ভিতরে ঢুকতে না পেরে ওই স্টেশন এবং পুরনো প্যানেল-রুমে ক্ষিপ্ত যাত্রীরা ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ। স্টেশনের তিনটি পাখা, চারটে টিউবলাইট এবং দু’টি মাইক ভাঙচুর করা হয়। ইটের আঘাতে জখম হন এক রেল-শ্রমিক। প্রহৃত হন এক হকার। যাত্রীদের অভিযোগ, কয়েকদিন ধরেই এই শাখায় ট্রেন দেরিতে চলছিল।

এই গোলমালের মধ্যেই ডাউন হাসনাবাদ লোকাল স্টেশনে ঢোকে। যাত্রীরা সেই ট্রেনটিকে আটকে রাখেন। হকার প্রহৃত হওয়ার প্রতিবাদে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ তখন স্টেশন চত্বরে গিয়ে ট্রেনযাত্রীদের পাল্টা মারধর করতে শুরু করেন বলে অভিযোগ। রেল পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। কিছুক্ষণ পরে সেই ট্রেনটিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তখনকার মতো ঝামেলা মিটে যায়। ফের গোলমাল হয় রাতে। শিয়ালদহ থেকে ৭টা ৪৫ মিনিটে ছাড়া হাসনাবাদ প্যাসেঞ্জার রাত প্রায় ১০টা নাগাদ হাড়োয়া স্টেশনে পৌঁছলে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ ফের ট্রেনে উঠে যাত্রীদের মারধর করে এবং তাঁদের সঙ্গে থাকা ব্যাগ লুঠ করে বলে অভিযোগ। মারের হাত থেকে বাদ যায়নি শিশুরাও। ট্রেনের কামরায় ভাঙচুরও চালানো হয়। প্রাণ বাঁচাতে কয়েক জন যাত্রী ট্রেন থেকে ঝাঁপ দিয়ে গুরুতর আহত হন।

বসিরহাটের বাসিন্দা সম্রাট বিশ্বাস, কালীকিঙ্কর চট্টোপাধ্যায়, স্বপ্না মিত্রেরা ছিলেন ওই ট্রেনে। তাঁদের কথায়, ‘‘আগের ট্রেন স্টেশনে পৌঁছনোর পরে ঝামেলা হয়েছে বলে শুনেছিলাম। ভেবেছিলাম আমাদের কিছু হবে না। কিন্তু ট্রেন হাড়োয়ায় পৌঁছতেই কয়েকজন বাঁশ হাতে তেড়ে এসে কামরায় ঢুকে মারধর করল। প্রাণ বাঁচাতে ট্রেন থেকে ঝাঁপ দিই।’’

সিগন্যাল সমস্যার জন্য শনিবার সকাল থেকেও ওই শাখায় ট্রেন দেরিতে চলে। তবে, এ দিন আর কোনও গোলমাল হয়নি। প্রতিটি স্টেশনেই বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Delayed train agitation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE